• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ফারমার্স ব্যাংকে মূলধন যোগানে বাংলাদেশ ব্যাংকে বৈঠক


জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০১৮, ০৮:৫৬ পিএম
ফারমার্স ব্যাংকে মূলধন যোগানে বাংলাদেশ ব্যাংকে বৈঠক

ঢাকা: সরকারে আগ্রহে অবশেষে ডুবতে বসা নতুন প্রজন্মের বিতর্কিত হয়ে উঠা ফারমার্স ব্যাংকের মূলধন যোগানোর উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। মূলধন দিতে আগ্রহী সরকারি তিন ব্যাংক ও এক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বৈঠক করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

মঙ্গলবার ( ১৩ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশ ব্যাংকে বেলা ১১টায় অনুষ্ঠিত হওয়া ওই বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির, অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব ইউনুসুর রহমান, রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী, রূপালী ব্যাংক ও জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক(এমডিপ) ও সরকারি আর্থিক প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন বাংলাদেশ (আইসিবি) এর চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।

প্রসঙ্গত, প্রয়োজন না থাকার পরও শুধু রাজনৈতিক বিবেচনায় বর্তমান সরকার স্বাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীরের নেতৃত্বে থাকা ফারমার্স ব্যাংকের অনুমোদন দেয়। কার্যক্রমের শুরু থেকেই অনিয়ম-দুর্নীতি ও আগ্রাসী ব্যাংকিংয়ে জড়িয়ে পড়ে ব্যাংকটি। পরিচালকদের ঋণ ভাগাভাগিতে চলে অসুস্থ প্রতিযোগিতা। ফলে বাড়তে থাকে খেলাপি ঋণ। তারল্য সংকটের পাশাপাশি মূলধন ঘাটতিতে দুরবস্থায় পড়েছে ব্যাংকটি। আগ্রাসী ঋণ বিতরণের ফলে তহবিল সঙ্কটে পড়ে ব্যাংকটি।

এ জন্য আমানতকারীদের অর্থ পরিশোধ যেমন করতে পারছে না, অন্যদিকে, নিয়ম মতো বাংলাদেশ ব্যাংকে টাকা জমা রাখতে ব্যর্থ হচ্ছে। ব্যাংক চালাতে ব্যর্থ হওয়ায় নানা সমালোচনার পরে সরকারের ইঙ্গিতে গত ২৭ নভেম্বর পদত্যাগ করেন ফারমার্স ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর ও নিরীক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান ও মাহাবুবুল হক চিশতী। ব্যাংকের এমডি একেএম শামীমকে অপসারণ করে বাংলাদেশ ব্যাংক।

বাংলাদেশে ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চতুর্থ প্রজন্মের এ ব্যাংকের খেলাপি ঋণ প্রতিনিয়ত বাড়ছে। গত সেপ্টেম্বর শেষে ফারমার্স ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বেড়ে হয়েছে ৩৭৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ, বিতরণ করা ঋণের ৭ দশমিক ৪৫ শতাংশই খেলাপি। এর মধ্যে আদায় অযোগ্য ঋণের পরিমাণ ২৩৮ কোটি টাকা। শীর্ষ ১০ খেলাপি গ্রাহকের কাছেই ব্যাংকটির পাওনা ১৩৪ কোটি টাকা। সর্বশেষ ব্যাংকটি এখন ৭৫ কোটি টাকা মূলধন ঘাটতিতে পড়েছে। নগদ টাকার ঘাটতিতে প্রতিদিনই আমানতকারীরা ছুটছেন ব্যাংকে গিয়ে টাকা তুলে নিতে। ব্যাংকও তাদের ফিরিয়ে দিচ্ছেন। এমনকি ব্যাংকটির কর্মকর্তা-কর্মচারিদের বেতনও দিতে পারছে না নিয়মিত।

সরকারের আগ্রহে সরকারি ব্যাংক থেকেই বেসরকারি এ ব্যাংকে মূলধন যোগানোর এ উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকে দীর্ঘ চার ঘণ্টার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। মূলধন যোগানের বিষয়ে সবাই একমত হলেও অর্থের পরিমাণ, দেয়ার প্রক্রিয়া ও শর্ত নিয়ে শুরু হয়েছে আলোচনা।

বৈঠক শেষে বেরিয়ে যাওয়ার সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে থাকা সাংবাদিকদের জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুস ছালাম বলেন, ফারমার্স ব্যাংক তারল্য সঙ্কটে ভুগছে, তাই ব্যাংকটিকে মূলধন দেয়া হতে পারে। এ বিষয়ে আজ ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে। এটা প্রাথমিক আলোচনা, যা চলবে আরও তিনদিন। তবে কীভাবে দেয়া হবে, সে বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

এ বিষয়ে রূপালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আতাউর রহমান প্রধানও বলেন, ব্যাংকটিকে মূলধন জোগান দেয়ার বিষয়ে কথাবার্তা হয়েছে। তবে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
যারা মূলধন জোগান দেবে, তারা ফারমার্স ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে থাকবে কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। বিস্তারিত জানাবে বাংলাদেশ ব্যাংক।

আইসিবির চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বলেন, ব্যাংকটিকে ধ্বংস হতে দিতে পারি না। এটাকে উদ্ধার করতেই বৈঠক হয়েছে। মূলধনের পরিমাণ এখনো নির্ধারণ করা হয়নি।

২০১৬ সালে শত শত কোটি টাকা অনিয়ম দেখে ফারমার্স ব্যাংকে পর্যবেক্ষক দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংকটি চার বছর পেরিয়ে এখনও গ্রাহকদের অর্থ ফেরত দিতে পারছে না, পরিবেশ মন্ত্রণনালয়েরও ৫০৮ কোটি টাকা ব্যাংকটিতে আটকে পড়েছে।

সোনালীনিউজ/তালেব

Wordbridge School
Link copied!