• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

ফুরালো প্রাণের মেলা


নিজস্ব প্রতিবেদক মার্চ ১, ২০১৭, ০৩:২৭ এএম
ফুরালো প্রাণের মেলা

ঢাকা: ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যান আর বাংলা একাডেমি চত্বরের প্রাণের মেলা ফুরিয়ে গেল। পর্দা নামলো এক বিকেলের মুখরতার নান্দনিক গল্পের। বিকেল হলেই আর ঢল নামবে না মানুষের। বইয়ের পসরা সাজিয়ে বসবে না আর চঞ্চল দোকানীরা।  মুখরিত হয়ে উঠবে না আর লেখক, প্রকাশক ও বইপ্রেমীদের পদচারণায়।

মঙ্গলবার (৮ ফেব্রুয়ারি) দিনগত রাত সাড়ে ৮টার দিকে মাসব্যাপী অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৭ এর পর্দা নেমেছে। গুটিয়ে নিচ্ছেন প্রকাশকরা তাদের স্টল। দীর্ঘ এক মাসের মিলনের আনন্দ যেন বিষাদে ছেয়ে গেল। তবে রেখে গেল কিছু রেকর্ড, কিছু উল্লেখযোগ্য ঘটনার অনন্যতা।

সূত্রমতে, এবারের বইমেলা অতীতের সবকিছুর রেকর্ড ভেঙেছে। মানসম্পন্ন বইয়ের প্রকাশনা, বিক্রি, নিরাপত্তা ব্যবস্থা, নান্দনিক সৌন্দর্য্য, পরিধি- এসব দিক বিবেচনায় গেল সাড়ে চার দশকের মধ্যে সবচেয়ে সেরা গ্রন্থমেলা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে এবার।

আয়োজকদের দেয়া তথ্যমতে, গ্রন্থমেলার প্রথম দিন পহেলা ফেব্রুয়ারি থেকে ২৭ ফেব্রুয়ারি মোট বিক্রি হয়েছে ৬৫ কোটি ৪০ লাখ টাকার বই। এর মধ্যে শুধু বাংলা একাডেমির প্রকাশিত বই বিক্রি হয়েছে এক কোটি ৫৫ লাখ টাকার মতো। গেল বছরে সর্বমোট বই বিক্রির পরিমাণ ছিল ৪২ কোটি টাকা। গেল বারের চেয়ে এবছর বিক্রি বেড়েছে ২৩ কোটি ৪০ লাখ টাকা। একই ভাবে গেলবারের চেয়ে এবার বাংলা একাডেমি ২২ লাখ টাকার বই বেশি বিক্রি করেছে।

এবারের মাসব্যাপী অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৭ অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে অনন্য নজির সৃষ্টি করলেও বোদ্ধাপাঠকদের দৃষ্টি কাড়তে পারেনি। প্রকাশনা বেড়েছে, বেড়েছে নতুন বইয়ের শৈল্পিক সৌন্দর্যও। তবে বাড়েনি মান-মনন। সাড়া ফেলে দেয়ার মতো সৃজনশীল কোনো বইয়ের দেখা পাননি বোদ্ধা পাঠকরা।

রেকর্ডসংখ্যক স্টল
বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান মিলে এবার রেকর্ডসংখ্যক স্টল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ ৪১১টি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানকে ৬৬৭ ইউনিট স্টল বরাদ্দ দেয়া হয়। এর মধ্যে ১৩ প্রতিষ্ঠানকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্যাভিলিয়ন বরাদ্দ দেয়া হয়। বাংলা একাডেমির প্যাভিলিয়ন ছিল দুটি। একটি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এবং অন্যটি একাডেমি প্রাঙ্গণে। এবার এক ইউনিটের ২০৩টি, দুই ইউনিটের ১৩৯টি, তিন ইউনিটের ৩৪টি এবং চার ইউনিটের ২১টি স্টল বরাদ্দ দেয়া হয়। শিশুদের জন্য ৪৫টি প্রতিষ্ঠানকে ৬১টি ইউনিটের স্টল বরাদ্দ দেয়া হয়।

নীতিমালা ভঙ্গে ১৯ স্টল চিহ্নিত
অমর একুশে গ্রন্থমেলার নীতিমালা ও নিয়মাবলী লঙ্ঘন করায় টাস্কফোর্সের সুপারিশের ভিত্তিতে ১৯  প্রতিষ্ঠানকে চিঠি দেয়া হয়েছে। এসবের মধ্যে ১০টির বিরুদ্ধে নীতিমালার ৬.১ ধারা অর্থাৎ বিদেশি বই বিক্রির এবং ৯টির বিরুদ্ধে নীতিমালার ১৩.১৩ ও ১৩.১৪ ধারা লঙ্ঘনের অভিযোগ টাস্কফোর্সের পক্ষ থেকে করা হয়েছে।

সমাপনী অনুষ্ঠান
সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় গ্রন্থমেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় সমাপনী অনুষ্ঠান। এতে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন- বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান। প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৭-এর সদস্য-সচিব ড. জালাল আহমেদ। প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। বিশেষ অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব মো. ইব্রাহীম হোসেন খান। সভাপতিত্ব করেন ইমেরিটাস অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে আসাদুজ্জামান নূর বলেন, এবারের গ্রন্থমেলা সার্বিক দিক দিয়ে সফল ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে। লেখক-পাঠক-প্রকাশক সকলের সম্মিলিত ভাবনা ও প্রচেষ্টায় আগামীতে মেলায় আরও নতুনত্ব ও ইতিবাচক বিষয় সংযোজিত হবে।

সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্ পুরস্কার
কবি শামীম আজাদ ও লেখক অনুবাদক নাজমুন নেসা পিয়ারিকে বাংলা একাডেমি পরিচালিত সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্ পুরস্কার ২০১৬ দেয়া হয়। পুরস্কারপ্রাপ্ত লেখকদের হাতে অর্থমূল্য ৫০ হাজার টাকার চেক, পুষ্পস্তবক, সনদ এবং ক্রেস্ট দেয়া হয়।

গুণীজন পুরস্কার
২০১৬ সালে প্রকাশিত বিষয় ও গুণমানসম্মত সর্বাধিক সংখ্যক গ্রন্থ প্রকাশের জন্য চিত্তরঞ্জন সাহা স্মৃতি পুরস্কার-২০১৭ দেয়া হয়েছে। ২০১৬ সালে প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে গুণমান ও শৈল্পিক বিচারে সেরা গ্রন্থের জন্য তিনটি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানকে মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার ২০১৭, ২০১৬ সালে প্রকাশিত শিশুতোষ গ্রন্থের মধ্য থেকে গুণমান বিচারে সর্বাধিক গ্রন্থ প্রকাশের জন্য রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই স্মৃতি পুরস্কার-২০১৭ এবং ২০১৭ সালের অমর একুশে গ্রন্থমেলায় অংশগ্রহণকারী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্যে থেকে নান্দনিক স্টল/প্যাভেলিয়ন সজ্জায় সেরা প্রতিষ্ঠান হিসেবে তিনটি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানকে কাইয়ুম চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার ২০১৭ প্রদান হয়। পুরস্কারপ্রাপ্ত সকল প্রকাশককে ২৫ হাজার টাকার চেক, সনদ ও ক্রেস্ট প্রদান করা হয়।

উৎসর্গকরণ
১২ জন বিশিষ্ট সাহিত্যিক ও লেখকের নামে এবারের বইমেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশকে ১২টি চত্বরে বিভক্ত করা হয়। এঁরা হলেন: সৈয়দ শামসুল হক, শওকত ওসমান, রফিক আজাদ, শহীদ কাদরী, আব্দুল্লাহ আল-মুতী শরফুদ্দীন, সরদার জয়েনউদদীন, নূরজাহান বেগম, আহসান হাবীব, আব্দুল গফুর হালী, মদনমোহন তর্কালংকার, আমীর হোসেন চৌধুরী ও দীনেশচন্দ্র সেন। বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ উৎসর্গ করা হয় শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের নামে।

সোনালীনিউজডটকম

Wordbridge School
Link copied!