• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
নিয়োগ বাণিজ্য

ফুলবাড়ীয়ার ঘটনায় এমপির দিকে আঙ্গুল


জেলা সংবাদদাতা ডিসেম্বর ২, ২০১৬, ১০:০৪ পিএম
ফুলবাড়ীয়ার ঘটনায় এমপির দিকে আঙ্গুল

ময়মনসিংহ: গভর্নিং বডির নিয়োগ বাণিজ্য, লুটতরাজ আর কলেজ জাতীয়করণ থেকে বাদ পড়ায় শিক্ষক-কর্মচারী-শিক্ষার্থীদের হতাশাবোধ থেকেই ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়া ডিগ্রি কলেজে সহিংসতা ঘটেছে। আর এর সবই ঘটেছে গভর্নিং বডির সভাপতি অ্যাডভোকেট মোসলেম উদ্দিন এমপির নেতৃত্বে। এমন অভিযোগ করছেন আন্দোলনকারী ক্ষুব্ধ শিক্ষক-কর্মচারী, ফুলবাড়ীয়ার বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতাসহ স্থানীয় নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ।

ফুলবাড়ীয়া ডিগ্রি কলেজ জাতীয়করণ দাবি আদায় কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক এস এম আবুল হাশেম গণমাধ্যমকে জানান, এই গভর্নিং বডির মেয়াদকালে ২০১১ সালে ব্যবস্থাপনা বিষয়ের মাধ্যমে কলেজে অনার্স কোর্স খোলা হয়। পরবর্তীতে হিসাববিজ্ঞান, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, বাংলা, ইংরেজি, প্রাণিবিদ্যা ও দর্শনসহ সাতটি বিষয়ে অনার্স কোর্স চালু করা হয়। অনার্সে ২৭ জন শিক্ষক ও ডিগ্রি পর্যায়ে আরো কয়েকজনসহ প্রায় অর্ধশত শিক্ষক ও কর্মচারীকে নিয়োগ দেয়া হয়। নিয়োগের সময় প্রত্যেক প্রার্থীর কাছ থেকে আদায় করা হয়েছে ১০ লাখেরও বেশি টাকা। নিয়োগ বাণিজ্যের মাধ্যমে অধ্যক্ষ নাসির উদ্দিন খান ও গভর্নিং বডির সদস্যদের সহায়তায় কলেজ থেকে এ সময় কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়। এ নিয়ে কলেজের ভেতর-বাইরে কোনো অডিট করতে দেয়া হয়নি। এ ছাড়া কলেজ অধ্যক্ষ নাসির উদ্দিন খানের চাকরির মেয়াদ বাড়ানো হয় পাঁচ দফায়।

আবুল হাশেম অভিযোগ করেন, সর্বশেষ কলেজ সরকারিকরণের নামে শিক্ষক কর্মচারীদের কাছ থেকে দুই মাসের বেতনভাতার টাকাও নিয়ে নেন গভর্নিং বডির সভাপতি।

গত বছরের ১৫ জুন অনার্স কোর্সের ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক পদে নিয়োগপ্রাপ্ত কবির উদ্দিন আহমেদ অভিযোগ করেন, নিয়োগের পর চাপ সৃষ্টি করে তার কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা নিয়েছেন গভর্নিং বডির সভাপতি।
 
একই অভিযোগ প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রভাষক মাহফুজুল হকের। তিনি বলেন, ‘নিয়োগের সময় কথা ছিল কলেজ থেকে বিধি অনুযায়ী আমাদের বেতন ভাতা দেয়া হবে। কিন্তু নিয়ম ভঙ্গ করে কোনো বেতন ভাতাও দেয়া হতো না আমাদের।’

কলেজের অধ্যাপক আজহারুল ইসলাম বলেন, ‘গভর্নিং বডির সভাপতির আত্মীয় হওয়ায় কলেজ অধ্যক্ষ নাসির উদ্দিন খান শিক্ষকদের ওপর নির্যাতন চালিয়ে আসছেন। তিনি কোনো নিয়মের তোয়াক্কা না করে আয়-ব্যয়ের অভ্যন্তরীণ অডিট করাতেন না। আয়-ব্যয়ের হিসাবের কথা তোলা হলে তিনি এমপির ভয় দেখিয়ে শিক্ষকদের একরকম জিম্মি করে রাখতেন।’

কলেজের সহকারী অধ্যাপক ইমাম উদ্দিন জানান, কলেজ অধ্যক্ষ নাসির উদ্দিন খান স্থানীয় এমপির ছেলে সেলিমের ভায়েরা ভাই হওয়ার সুবাদে গভর্নিং বডির সহযোগী হয়ে কাজ করে লাগামহীন দুর্নীতি করেছেন। তিনি কলেজ থেকে মাসে ৬০ হাজার টাকা বেতন ভাতা ও প্রতিটি অনার্স বিভাগের কোর্স ফি থেকে দুই হাজার করে ১৪ হাজার টাকা নিয়েছেন। তিনি ছেলেকে সিবিএমসিবি মেডিকেল কলেজে ভর্তি করানোর জন্য কলেজ ফান্ড থেকে ১৮ লাখ টাকা নিয়েছেন।

অধ্যাপক ইমাম উদ্দিন আরো জানান, অধ্যক্ষ নিজে অর্থ আত্মসাৎ করলেও শিক্ষক-কর্মচারীদের কলেজ থেকে কোনো বেতন ভাতা দেন না।

আন্দোলনরত শিক্ষকরা জানান, সরকারিকরণের তালিকা থেকে নাম বাদ পড়ার খবরে গত অক্টোবর থেকে ফুলবাড়ীয়া ডিগ্রি কলেজ জাতীয়করণ দাবি আদায় কমিটির ব্যানারে আন্দোলনে নামে কলেজের শিক্ষক-কর্মচারী-শিক্ষার্থীরা। হরতাল, অবরোধ, মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল, সমাবেশ, গণ-অনশন, সংবাদ সম্মেলন ও স্মারকলিপি দেয়াসহ দাবি আদায়ে নানা কর্মসূচি পালন করেন আন্দোলনকারীরা। কলেজ সরকারিকরণের এই আন্দোলনে স্থানীয় অভিভাবক, কলেজের সাবেক শিক্ষার্থী, আওয়ামী লীগের একটি বড় অংশ, মুক্তিযোদ্ধা ও স্থানীয় নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ এসব আন্দোলন মিছিল সমাবেশে যোগ দিয়ে সমর্থন জানায়। আন্দোলনের সময় ছুটি নেয়ার অজুহাতে গা ঢাকা দেন কলেজ অধ্যক্ষ।

অভিযোগ অস্বীকার করে কলেজের অধ্যক্ষ নাসির উদ্দিন খান বলেন, ‘আন্দোলনকারীরা আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য দিচ্ছে। নিয়োগ বাণিজ্যের সঙ্গে আমি কখনোই জড়িত ছিলাম না।’ ছেলেকে মেডিকেল কলেজে ভর্তি করার জন্য কলেজ ফান্ড থেকে ১৫ লাখ টাকা নিয়েছেন দাবি করে তিনি বলেন, ‘শিক্ষক-কর্মচারীদের ২৪ মাসের বেতন ভাতা বকেয়া আছে।’ 

সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি ও স্থানীয় এমপি অ্যাডভোকেট মোসলেম উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘কলেজে অনার্স কোর্স খোলাসহ শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ নিয়ম অনুযায়ী হয়েছে।’ অর্থ লেনদেনের বিষয়টি তিনি অস্বীকার করে বলেন, ‘আমি এবং আমার পরিবারকে হেয় করার জন্যই মিথ্যাচার করছেন আন্দোলনরত শিক্ষকরা। সমস্যা সমাধানে শিক্ষকদের সঙ্গে আমি বসতে চেয়েছি কিন্তু তারা বসেননি।’

এদিকে ফুলবাড়িয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক জানান, সময়মতো অ্যাডভোকেট মোসলেম উদ্দিন এমপি উদ্যোগ নিলে হয়তো বা এই সহিংসতা এড়ানো যেত। শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগসহ কলেজ ফান্ড থেকে লুটপাটের বিষয়টি শুনেছেন বলে তিনি জানান।

সোনালীনিউজ/এমএন

Wordbridge School
Link copied!