• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ফের বেপরোয়া ছাত্রলীগ, রুখবে কে?


সোনালী বিশেষ জুলাই ১৯, ২০১৭, ০৩:৩৯ পিএম
ফের বেপরোয়া ছাত্রলীগ, রুখবে কে?

ঢাকা : আবারও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে ছাত্রলীগ। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম এই ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা খুনোখুনি, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, অপহরণ, ধর্ষণ, শিক্ষক লাঞ্ছনা, প্রশ্ন ফাঁস, অভ্যন্তরীণ কোন্দলসহ নানা সন্ত্রাসী কার্যকলাপে জড়িয়ে পড়ছে। বঙ্গবন্ধুর হাতেগড়া এই ছাত্র সংগঠনটির এসব কাজ কোনোভাবেই লাগাম টানা যাচ্ছে না।

একাধিকবার সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এসব বিষয়ে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের সাবধান করে দিলেও কার্যত কোনো ফলই আসছে না। দিন দিন নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ায় অভিভাবক সংগঠন আওয়ামী লীগের নেতারাও অসহায় হয়ে পড়েছেন।

সর্বশেষ গত সোমবার (১৭ জুলাই) সিলেটের বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষের পর একজনকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এদিন দুপুরে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে খালেদ আহমদ লিটু (২৫) নামে ছাত্রলীগের এক কর্মী নিহত হয়।

লিটু জেলা ছাত্রলীগের আপ্যায়ন বিষয়ক সম্পাদক পাভেল মাহমুদের সমর্থক হিসেবে পরিচিত। কলেজ এলাকার অধিপত্য নিয়ে দুপুরে পাভেলের অনুসারীদের সঙ্গে উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আবুল কাশেম পল্লবের সমর্থকদের সংঘর্ষ হয় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান।

একইদিন রাজশাহীর নিউ গভ:ডিগ্রি কলেজে দলীয় তাবুতে বসা নিয়ে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে তিনজন গুরুত্ব আহত হয়। এর আগে গত শনিবার চাঁদা না পেয়ে বরিশালের বানারীপাড়ার চাঁদা না দেয়ায় বরিশালের বানারীপাড়ার বেতাল গ্রামে স্বামীকে আটকে রেখে নববধূকে (২২) ধর্ষণ করে উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সুমন হোসেন মোল্লা।

এই ঘটনায় সুমনকে গ্রেফতার করা হয়। পাশাপাশি তাকে দল থেকে বহিস্কার করা হয়। এই ঘটনায় দেশে বিদেশে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়। একইসঙ্গে সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে তার শাস্তি নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।

অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তথাকথিত সাংগঠনিক বহিষ্কারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে তাদের শাস্তি। অনেক ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সাংগঠনিক ইউনিটে ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ড সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়। এমনকি ফৌজদারি অপরাধ করলেও দেখা যায়, কোনো মামলা হচ্ছে না। কিছু ক্ষেত্রে মামলা হলেও গ্রেফতার হয় না আসামিরা। ঘুরে বেড়ায় প্রকাশ্যে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে সন্ত্রাসী কার্যকলাপের সঙ্গে জড়িত ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের বদ্ধমূল ধারণা- ‘অপরাধ করলে কিছুই হয় না।’

ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের এসব অপকর্ম দীর্ঘদিন ধরেই চলে আসছে। বিশেষ করে ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতা প্রহণের পর থেকেই ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা খুন, হত্যা, ধর্ষণ, মারামারি, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজিসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। দিন দিন তারা বেপরোয়া হয়ে উঠতে থাকে।

ক্ষমতা গ্রহণের মাত্র তিন মাসের মাথায়ই তারা সরকারকে অস্থির করে তুলে। সরকারের মন্ত্রী-এমপিসহ আওয়ামী লীগের নেতারাও ছাত্রলীগের ওপর চরমভাবে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন। এমনকি তাদের কর্মকাণ্ডে ক্ষিপ্ত হয়ে শেখ হাসিনা ২০০৯ সালের ৪ এপ্রিল ছাত্রলীগের সাংগঠনিক পদ থেকে অব্যাহতি নেন। এরপর থেকে আরও বেশি বেপরোয়া হয়ে উঠে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা।

সংগঠনটির বিদ্যমান সমস্যা নিরসনে বেশকিছু পরামর্শ দিয়েছেন ছাত্রলীগের সাবেক ও বর্তমান একাধিক ছাত্র নেতা। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- ২ বছর পরপর নিয়মিত সম্মেলন, সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের একক ক্ষমতায় ভারসাম্য এনে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ, যে কোনো অপরাধ সংঘটিত হলে বিষয়টি এড়িয়ে না গিয়ে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনা, ছাত্রলীগকে আওয়ামী লীগ ও অন্যান্য সহযোগী সংগঠনের প্রভাবমুক্ত করা এবং শিক্ষক রাজনীতির প্রভাবে প্রভাবান্বিত হতে না দেয়া।

এছাড়া পরামর্শের মধ্যে আরও আছে, সংগঠনটিকে অতীত ঐতিহ্যে ফিরিয়ে নিতে ছাত্র নেতাদের অধ্যয়নমুখী করা, সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বাইরে সংগঠনের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা নেতাদের বিভিন্ন পরামর্শ গ্রহণ এবং সর্বোপরি আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড থেকে এ বিষয়ে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণের ব্যবস্থা করা।

সোনালীনিউজ/জেডআরসি/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!