• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ফের ১১৫০ কোটি টাকা পাচার সুইস ব্যাংকে


জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জুন ৩০, ২০১৭, ০১:০৫ এএম
ফের ১১৫০ কোটি টাকা পাচার সুইস ব্যাংকে

ঢাকা: অর্থপাচার বন্ধে নতুন নীতিমালা তৈরি ও সরকারের পক্ষ থেকে সুইস ব্যাংকের সঙ্গে যোগাযোগের কারণে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের নাগরিকদের সুইস ব্যাংকে জমানো টাকার হার কমে এসেছে। অপরদিকে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে গত এক বছরেই বেড়েছে ১৯ শতাংশ। সুইস ব্যাংকের সর্বশেষ প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬ সালে বাংলাদেশিদের সঞ্চয়ের পরিমাণ দাড়িঁয়েছে ৬৬ কোটি ১৯ লাখ ফ্র্যাংক, যা স্থানীয় মুদ্রায় যা ৫ হাজার ৬শ কোটি টাকা। আগের বছর অর্থাৎ ২০১৫ সালে তা ছিল ৪ হাজার ৪৫২ কোটি টাকা। এ হিসেবে এক বছরে বেড়েছে ১ হাজার ১৫০ কোটি টাকা।

সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংকে বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের কী পরিমাণ অর্থ জমা হয়েছে তার একটি বার্ষিক তথ্য প্রকাশ করে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক ‘সুইস ন্যাশনাল ব্যাংক’। বৃহস্পতিবার (২৯ জুন) ২০১৬ সালের বার্ষিক রিপোর্ট প্রকাশ করে ব্যাংকটি। সেখানে সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংকে কোন দেশের নাগরিকদের কী পরিমাণ অর্থ জমা হয়েছে তার হিসাব দেয়া হয়।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, অর্থজমা করার ক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ভারত এবং পাকিস্তানের পরেই রয়েছে বাংলাদেশের অবস্থান। তবে কোনো বাংলাদেশি তার নাগরিকত্ব গোপন রেখে টাকা জমা করলে তার তথ্য এই প্রতিবেদনে নেই। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বিনিয়োগ না হওয়ায় পুঁজি পাচার হচ্ছে। আলোচ্য সময়ে বিশ্বের অন্যান্য দেশের আমানত কমেছে। তবে সামগ্রিকভাবে ২০১৬ সালে মোট আমানতের পরিমাণ কমেছে। আমানতের রাখার ক্ষেত্রে এ বছরও প্রথম অবস্থানে রয়েছে যুক্তরাজ্য।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিবার্হী পরিচালক ও মুখপাত্র শুভঙ্কর সাহা বলেন, সুইস ব্যাংক কীভাবে রিপোর্ট তৈরি করেছে, তা আমার জানা নেই। তবে টাকা পাচার রোধে বাংলাদেশ ব্যাংক সব সময় কাজ করছে, এ ক্ষেত্রে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি। 
 
 

বাংলাদেশিদের অর্থের পরিমাণ

২০১৬ সালে বাংলাদেশিরা সুইস ব্যাংকে অর্থ জমা হয়েছে ৬৬ কোটি ১৯ লাখ ফ্র্যাংক, যা স্থানীয় মুদ্রায় যা ৫ হাজার ৬শ কোটি টাকা। (প্রতি সুইস ফ্র্যাংক ৮৫ টাকা হিসাবে)। এর আগের বছর অর্থাৎ ২০১৫ সালে তা ছিল ৪ হাজার ৪৫২ কোটি টাকা। এ হিসেবে এক বছরে বেড়েছে ১ হাজার ১৫০ কোটি টাকা, যা শতাংশ হিসাবে ১৯ শতাংশ। গত ১২ বছরের মধ্যে ২০১৬ সালেই সবচেয়ে বেশি আমানত সুইস ব্যাংকে। ২০১৫ সালে যা চিল ৫৫ কোটি ০৮ লাখ ফ্র্যাংক, ২০১৪ সালে যা ছিল ৫০ কোটি ৬০ লাখ ফ্র্যাংক। ২০১৩ সালে ৩৭ কোটি ২০ লাখ ফ্র্যাংক স্থানীয় মুদ্রায় এর পরিমাণ ৩ হাজার ২৩৬ কোটি টাকা। ২০১২ সালে ছিল ২২ কোটি ৯০ লাখ ফ্র্যাংক। ২০১১ সালে ছিল ১৫ কোটি ২০ ফ্র্যাংক। অপরদিকে এ শুধু নগদ অর্থের হিসাব। কিন্তু সুইস ব্যাংকগুলোতে স্বর্ণালংকার, শিল্পকর্ম এবং অন্যান্য মূল্যবান জিনিসপত্র জমা রাখলে তার আর্থিক মূল্যমান হিসাব করে আমানতে যোগ হয় না। 

বাংলাদেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী কোনো বাংলাদেশি বিদেশের কোনো ব্যাংকে টাকা জমাতে পারেন না। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক কাউকে অনুমোদন দেয়নি এখন পর্যন্ত। শুধু বিদেশে বিনিয়োগের জন্য কয়েকটি কোম্পানিকে বিদেশে অর্থ নিয়ে যাওয়ার অনুমোদন দিয়েছে। তা আবার দেশে ফিরিয়ে আনা যাবে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড যে অর্থেন খোঁজ বা তথ্য তাদের কাছে থাকেনা, তাকে কালো টাকা বা অবৈধ আয় বলেই ধরে নেয়া হয়। এ হিসাবে সুইস ব্যাংকে যে পরিমাণ অর্থ বাংলাদেশিদের জমা হয়েছে, তা কালো টাকাই ধরে নেয়া হয়। 

সুদীর্ঘ সময় ধরে ধনীদের অর্থ গোপনে জমা রাখার জন্য খ্যাত সুইজারল্যান্ড। ৮০ লাখ মানুষের এ দেশটিতে ব্যাংক আছে ২৬৬টি। বিশ্বের বড় বড় ধনীরা অর্থ পাচার করে দেশটিতে জমা রাখে। ব্যাংকগুলোও কঠোর গোপনীয়তা রক্ষা করে। আগে সুইস ব্যাংকে জমা টাকার কোনো প্রতিবেদন প্রকাশ করা হতো না। এমন কি আমানতকারীর নাম ঠিকানাও গোপন রাখা হতো। একটি কোড নম্বরের ভিত্তিতে টাকা জমা রাখা হতো। কিন্ত ২০০২ সাল থেকে বিশ্বব্যাপী টাকা পাচার রোধে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ব্যাপকভাবে কার্যকর করা হয়। এরপর আন্তর্জাতিক চাপে সুইস ব্যাংক জমা টাকার তথ্য প্রকাশের সিদ্ধান্ত নেয়।

সুইস ব্যাংক আরো সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সময়ে সময়ে তারা কিছু তথ্য নিয়মিতভাবে প্রকাশ করবে।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/তালেব

Wordbridge School
Link copied!