• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ফেলানী হত্যা: বিচারের আশায় ৬ বছর


কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি জানুয়ারি ৭, ২০১৭, ০৫:৩০ পিএম
ফেলানী হত্যা: বিচারের আশায় ৬ বছর

কুড়িগ্রাম: ২০১১ সালের এই দিনে এশিয়ার বধ্যভূমিখ্যাত বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে সংঘটিত হয় ইতিহাসের এক নারকীয় হত্যাকান্ড। আজ থেকে ছয় বছর আগে ২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি কুড়িগ্রাম সীমান্তে বাংলাদেশি কিশোরী ফেলানীকে হত্যা করা হয়।

ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের সদস্য অমিয় ঘোষের গুলিতে নিহত ফেলানীর মরদেহ চার ঘণ্টা কাটাতারেই ঝুলে থাকে। ফেলানীর ঝুলে থাকা লাশের ছবিতে দেশ-বিদেশের গণমাধ্যম ও মানবাধিকার সংগঠনগুলোর মাঝে সমালোচনার ঝড় ওঠে। ২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি ফুলবাড়ি উপজেলার অনন্তপুরে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে নির্মমভাবে খুন হয় এ কিশোরী।

শনিবার এই কিশোরীর ষষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী। ২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়া পার হয়ে ভারত থেকে বাংলাদেশে আসার সময় বিএসএফের গুলিতে তার মৃত্যু হয়।

এ হত্যা মামলার বিচারে ভারতের সীমান্তরক্ষা বাহিনী বিএসএফের আদালতে আসামি অমিয় ঘোষকে খালাস দেওয়া হয়। বাংলাদেশের দাবিতে পুনর্বিচার হলেও রায় একই থাকে। এরপর মানবাধিকার কর্মীদের তৎপরতায় ভারতের সুপ্রিম কোর্টে আবার মামলা করা হয়। ওই মামলা এখনও বিচারাধীন।

নিহত ফেলানীর বাবা বলেন, ‘যত দিন আমার মেয়ের বিচার হবে না ততদিন আমি বিচারের অপেক্ষায় থাকবো। আর চাইতেই থাকবো।’

নিহত ফেলানীর মা বলেন, ‘যেভাবে আমার মেয়েরে মারছে সেইভাবে অমিয় ঘোষের সাজা হয়।’

তবে আগের রায় সঠিক না হলেও এবার ন্যায় বিচার পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী জেলার পাবলিক প্রসিকিউটর। কুড়িগ্রাম জেলা পাবলিক প্রসিকিউটর আব্রাহাম লিংকন বলেন, ‘আমরা আশা করি ভারতের উচ্চ আদালত যার পরে আর কোনো আদালত নেই। আর এই আদালত ন্যায় বিচার নিশ্চিত করবেন। আত্মসীকৃতি খুনি কোনোভাবেই পরিত্রাণ পেতে পারে না’।

২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি শুক্রবার ভারত থেকে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীর অনন্তপুর সীমান্ত দিয়ে বাবার সঙ্গে বাড়ি ফিরছিল কিশোরী ফেলানী। ভোর সোয়া ৬টার দিকে দালালের মাধ্যমে মই বেয়ে কাঁটাতারের বেড়া পার হওয়ার সময় বিএসএফের গুলিতে তার মৃত্যু হয়।

আরও কয়েকঘণ্টা পর বিএসএফ লাশ নামিয়ে ভারতের অভ্যন্তরে নিয়ে যায়। এরপর ব্যাপক সমালোচনার মধ্যে ২০১১ সালের ৮ জানুয়ারি শনিবার লাশ ফেরত দেয় বিএসএফ। বাংলাদেশে আরেক দফা ময়নাতদন্ত শেষে লাশ দাফন হয় মৃত্যুর ৭৩ ঘণ্টা পর।

২০১৩ সালের ১৩ অগাস্ট ভারতের কোচবিহারের বিএসএফের বিশেষ আদালতে বিচারিক কার্যক্রম শুরু করে ভারত সরকার। ১৯ অগাস্ট আদালতে ফেলানীর বাবা নুরুল ইসলাম ও মামা আব্দুল হানিফ সাক্ষ্য দেন। বিচার কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করেন কুড়িগ্রাম ৪৫ বিজিবি অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল জিয়াউল হক খালেদ এবং কুড়িগ্রামের পাবলিক প্রসিকিউটর আব্রাহাম লিংকন। ওই বছরের ৬ সেপ্টেম্বর অভিযুক্ত অমিয় ঘোষকে বেকসুর খালাস দেয় আদালত।

ওই রায় প্রত্যাখ্যান করে ঢাকায় ভারতীয় হাই কমিশনারের কাছে মানবাধিকার সংগঠন আসকের (আইন ও সালিশ কেন্দ্র) মাধ্যমে ফের বিচার দাবি করেন ফেলানীর বাবা। এর প্রেক্ষিতে মামলাটি পুনর্বিচারের সিদ্ধান্ত নেয় বিএসএফ কর্তৃপক্ষ। কিন্তু বিচারে অমিয় ঘোষকে আবার খালাস দেয় বিএসএফের ওই বিশেষ আদালত।

এরপর ২০১৫ সালের ১৪ জুলাই ফেলানীর বাবার পক্ষে ভারতের মানবাধিকার সুরক্ষা মঞ্চ দেশটির সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়ের করে, যা এখনও শেষ হয়নি।


সোনালীনিউজ/ঢাকা/আকন

Wordbridge School
Link copied!