• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ফ্রিস্টাইলে ফি আদায় ডাক্তারদের!


নিজস্ব প্রতিবেদক জানুয়ারি ১৮, ২০১৭, ১০:৪৭ পিএম
ফ্রিস্টাইলে ফি আদায় ডাক্তারদের!

ঢাকা: দীর্ঘদিন ধরে রোগীদের অভিযোগ রয়েছে, চিকিৎসকরা ব্যক্তিগত চেম্বার ও ক্লিনিকে খেয়ালখুশিমতো ফি আদায় করছেন। চিকিৎসকের পরামর্শে  বিভিন্ন টেস্ট করে রিপোর্ট দেখাতে গেলেও ফি দিতে হচ্ছে। সারা দেশে সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকসহ সব ধরনের চিকিৎসক ব্যক্তিগত চেম্বার, বিভিন্ন ক্লিনিক ও বেসরকারি হাসপাতালে রোগী দেখেন।

চিকিৎসকদের ফি নির্ধারণে ১৯৮২ সালে একটি অধ্যাদেশ জারি করা হলেও পরবর্তীকালে তা সংশোধন করে বাদ দেয়া হয়। রোগী দেখার ফি নির্ধারণে কোনো আইন না থাকায় চিকিৎসকরা নিজেদের ইচ্ছামতো ফি নিচ্ছেন বলে মনে করছেন এ খাতের সেবাপ্রার্থীরা।

তাদের মতে, চিকিৎসকদের ফি নির্ধারণ করে দেয়া উচিত। অন্যথায় রোগীদের ভোগান্তি বাড়তেই থাকবে। তবে এ বিষয়ে ভিন্নমত পোষণ করছেন চিকিৎসকরা। তারা বলছেন, দেশে সেবামূলক কোনো পেশার ফি নির্ধারিত না থাকায় চিকিৎসকদের ফি ও নির্ধারণ করা সম্ভব নয়।

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, রোগী দেখার বিভিন্ন পর্যায়ে চিকিৎসকদের ফি বিভিন্ন রকমের। এখন চিকিৎসকভেদে প্রথমবার রোগী দেখতে ফি ৩০০ থেকে ২০০০ টাকা পর্যন্ত নেয়া হয়। আর পরীক্ষা-নিরীক্ষার রিপোর্ট দেখাতেও ১০০ থেকে ১০০০ টাকা গুনতে হয়। আগে এসব রিপোর্ট দেখাতে কোনো ফি নিতেন না চিকিৎসকরা। এ ছাড়া সাত থেকে ১৫ দিনের মধ্যে পুনরায় একই রোগী দেখা করতে চাইলে ফি গুনতে হয় ২০০ থেকে ১০০০ টাকা । অথচ আগে এক থেকে তিন মাসের মধ্যে পুরনো রোগীদের কাছ থেকে অর্ধেক ফি নেয়া হতো।

রোগীদের সবচেয়ে বেশি অভিযোগ, সকালে চিকিৎসকের পরামর্শমতো বিভিন্ন টেস্ট করে বিকেলে বা পরের দিন রিপোর্ট দেখাতে গেলেও ফি গুনতে হচ্ছে। অনেক সময় চিকিৎসকদের ফি আগে থেকেই ভালোভাবে জানানো হয় না রোগীদের।

কাজী আপেল নামের একজন সেবাপ্রার্থী বলেন, ‘আমার মাকে একজন  চিকিৎসক বিভিন্ন টেস্ট করার পরামর্শ দেন। টেস্ট শেষে চিকিৎসককে রিপোর্ট দেখিয়ে বের হওয়ার পর তার চেম্বার সহযোগী রিপোর্ট দেখানো বাবদ ফি দাবি করেন। কিন্তু রিপোর্ট দেখাতে টাকা লাগবে, এটি আগে থেকে জানানো হয়নি।’

রোগী ও তাদের স্বজনদের অভিযোগ, প্রায় চিকিৎসকদের ফি তালিকা চেম্বারের সামনে উল্লেখ থাকে না। ফি আদায় করে কোনো রসিদ দেয়া হয় না। কোনো চিকিৎসক কিসের ভিত্তিতে ফি নিচ্ছেন, তার কোনো নিয়মনীতি নেই। চিকিৎসকদের প্রাইভেট প্র্যাকটিসের ক্ষেত্রে যোগ্যতা ও দক্ষতা অনুসারে রোগী প্রতি ফি নির্ধারিত থাকা উচিত বলেও মনে করছেন সেবাপ্রার্থীরা।

তবে এ প্রসঙ্গে সেবাপ্রার্থীদের সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করেন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সাবেক মহাসচিব ও স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি ডা. ইকবাল আর্সলান। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের কোনো পেশার মানুষের ফি সরকার নির্ধারণ করতে পারেনি। অতীতেও বিভিন্ন সরকার চেষ্টা করেছে ফি নির্ধারণের। কিন্তু কখনো তা করতে সরকার সক্ষম হয়নি। এ কারণে চিকিৎসকদের ফি নির্ধারণের বিষয়টি তারা কোনোভাবেই মেনে নেবেন না। তবে যেসব পরীক্ষা-নিরীক্ষার খুব উচ্চমূল্য রয়েছে, সেগুলোর দিকে সরকার যদি নজর দেয়, তাহলে রোগীরা উপকৃত হবে। কারণ চিকিৎসকের ফি-এর চেয়ে রোগীরা আর্থিকভাবে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন এসব উচ্চমূল্যের টেস্টের কারণে।

ওষুধের মূল্যও নিয়ন্ত্রণ হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করে ডা. ইকবাল আর্সলান বলেন, ‘কোম্পানিগুলো ওষুধের যে মূল্য নির্ধারণ করে, সেগুলো ঠিক না। কারণ, একটি ওষুধ তৈরি করতে তাদের যে খরচ হয়, কোম্পানিগুলো এর প্রায় চারগুণের বেশি দাম নির্ধারণ করে।’

চিকিৎসকদের ফি নির্ধারণের জন্য ১৯৮২ সালের অধ্যাদেশের একটি অংশ ছিল বলে জানান স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) ডা. আবুল কায়সার মাহমুদ সাইদুর রহমান। তিনি বলেন, ‘পরবর্তীকালে ওই অধ্যাদেশ সংশোধন করে ফি-এর বিষয়টি বাদ দেয়া হয়েছে। একজন চিকিৎসকের ফি কত হওয়া উচিত, এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে সরকারের কোনো পরিকল্পনা বা আদেশ নেই। আবার প্রথমবার রোগী দেখার পর দ্বিতীয়, তৃতীয় কিংবা পরবর্তী সময়ে কেমন ফি হবে, এমন কোনো নীতিমালাও এখন পর্যন্ত করা হয়নি।’ 

তবে চিকিৎসকদের ফি নির্ধারণে একটি নীতিমালা করার কাজ হাতে নেয়া হয়েছে বলে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি, বিষয়টিকে কিভাবে একটি নিয়মের মধ্যে আনা যায়।’

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমএইচএম

Wordbridge School
Link copied!