• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১
জবাবদিহিতার অভাব

বই উৎসবের সাফল্য ভুলভ্রান্তিতে বিবর্ণ


নিজস্ব প্রতিবেদক  জানুয়ারি ৯, ২০১৭, ১০:৩২ এএম
বই উৎসবের সাফল্য ভুলভ্রান্তিতে বিবর্ণ

ঢাকা : ভুলভ্রান্তির কারণে বিবর্ণ হয়ে গেছে বই উৎসবের সাফল্য। এ নিয়ে বিভিন্ন মহলে বইছে সমালোচনার ঝড়। সমালোচনা আছে বর্ণ শেখাতে গিয়ে লিঙ্গবৈষম্যের, তেমনি আছে হাস্যকর ছবি ছাপানোর। প্রচলিত একটি কবিতার লাইনে শব্দ ওলটপালট, ভুল ইংরেজিতে বাংলাদেশের সাংবিধানিক নাম ছাপানোর ‘গুরুতর অন্যায়’ও আছে। এসব ভুল আর অন্যায়ের পেছনে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের দায়িত্বহীনতা আর জবাবদিহি না থাকাকে দায়ী করছেন বিশিষ্টজনরা।

পাঠ্য বইয়ের ভুলের তদন্ত করে দায়ী ব্যক্তিদের খুঁজে বের করার দাবি উঠছে জোরালোভাবে। দাবি উঠছে এসব ভুল সংশোধনের। তা না হলে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা ভুলই শিখতে থাকবে, যা সারা জীবন বইয়ে বেড়াবে তারা।

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) সূত্রে জানা গেছে, একটি বই চূড়ান্তভাবে প্রকাশের আগে অনেকগুলো ধাপ পার হতে হয়। তাতে এ ধরনের ভুল কী করে ছাপা হয়, তা-ও প্রশ্নের উদ্রেক করে। নানা সমালোচনার মুখে এনসিটিবি অবশেষে একটি পর্যালোচনা কমিটি গঠন করেছে। বই অনুমোদনের প্রক্রিয়া সম্পর্কে এনসিটিবি সূত্র জানায়, লেখক প্যানেল, সম্পাদনা প্যানেল, পরিমার্জন প্যানেল- এই তিন ধাপ শেষে প্রাথমিক স্তরের বইগুলো দেয়া হয় এনসিটিবির প্রাথমিক উইংয়ের প্রধানের কাছে। তিনি বইগুলোর ভুলভ্রান্তি যাচাই করে তারপর অনুমোদন দেন। এরপর এটি প্রাথমিক স্তরের জাতীয় কমিটি ন্যাশনাল কারিকুলাম কমিটিতে (এনসিসি) যায়। এই কমিটি বইগুলো চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়। এনসিসি আছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ শিক্ষাবিদরা। আর এনসিটিবির প্রাইমারি উইংয়ের প্রধান হলেন অধ্যাপক আব্দুল মান্নান। এনসিসির অনুমোদনের পর বই সিডি আকারে ছাপাখানায় যায়।

এখানেই শেষ নয়, বই ছাপার আগে এনসিটিবির একটি কমিটি ‘ট্রাই আউট’ করে। তারা স্কুলের শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে পাঠ্য বই সম্পর্কে। এখানেও কোনো ভুলভ্রান্তি ধরা পড়লে সংশোধনের সুযোগ থাকে। এতগুলো ধাপ পেরিয়ে কিভাবে পাঠ্য বইয়ে ভুল থাকে, এ নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন অনেকের সঙ্গে খোদ এনসিটিবির কর্মকর্তারাও। এ নিয়ে নিরপেক্ষ তদন্ত হওয়া ও দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া দরকার বলে মনে করেন তারা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনসিটিবির এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বলেন, ‘এমন ভুল মানা যায় না। দায়িত্ব নিয়ে কাজ না করা, আর দায়সারা গোছের কাজের কারণে পাঠ্য বইয়ে এই ভুল।’ ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, ‘এনসিটিবির মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ সংস্থায় জাতীয় প্রয়োজনের কাজ হয়। বই প্রণয়নের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজ শুধু চাকরি বিবেচনায় করলে হয় না, শতভাগ দায়িত্ব নিয়ে কাজ করতে হয়। কিন্তু এখানে অনেকে আসেন শুধু চাকরি করতে, দায়িত্ব পালনের জন্য নয়।’ তাদের চিহ্নিত করা উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি।

প্রায় একই মন্তব্য করেন অন্যান্য শিক্ষাবিদরাও তাদের বক্তব্যে। তবে পাঠ্য বইয়ে এমন ভুলের জন্য তারা এনসিটিবির কর্মকর্তাদের দায়িত্বহীনতা ও জবাবদিহি না থাকাকেও দায়ী করছেন।
এ বিষয়ে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও সমাজচিন্তক অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘ওখানে (এনসিটিবি) কোনো জবাবদিহি নেই। সেই সংস্কৃতি গড়েও ওঠেনি। সংস্থাটির কর্মকর্তাদের দায়িত্বহীনতার কারণে পাঠ্য বইয়ে গুরুতর ভুল হয়েছে। তিনি বলেন, পাঠ্যপুস্তকে ভুল হবে- এটা মেনে নেয়াই যায় না। একটি শব্দ ভুল হলে শিক্ষার্থীরা সারা জীবন ওই ভুল শিখবে। এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

তিনি আরো বলেন, ‘ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে যারা পড়ে, তারা কিন্তু ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে না। তাদের বইয়ে পরিবর্তন হচ্ছে। কিন্তু সমস্যা হলো মূল ধারার ইংরেজি বইয়ে। এই বইগুলো অনেক দিন ধরে একই ধারায় চলে আসছে। ফলে শিক্ষার্থীরা যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে শিখতে পারছে না। তারা পিছিয়ে যাচ্ছে।’ বিভিন্ন মহলের সমালোচনার মুখে ভুলত্রুটি পর্যালোচনার জন্য একটি কমিটি গঠন করেছে এনসিটিবি। তবে ভুলত্রুটি পরিকল্পিত কি না তা এখনো নিশ্চিত নয় সংস্থা।

এনসিটিবি চেয়ারম্যান অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র সাহা বলেন, ‘আমরা নিজেদের মধ্যে পর্যালোচনার জন্য একটি কমিটি গঠন করেছি। এর মধ্য দিয়ে আমরা দেখব পাঠ্য বই প্রণয়নে কোন্ স্তরে ভুলগুলো হয়েছে। সে বিষয় আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে উপস্থাপন করব।’ পরবর্তী নির্দেশনার আলোকে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি। এক প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক নারায়ণ বলেন, ‘পাঠ্যপুস্তকের ভুল পরিকল্পিত কি না সে বিষয়ে আমরা এখনই কিছু বলতে পারছি না। তবে সব কিছু মাথায় রেখেই বিষয়টি পর্যালোচনা করছি।’

ভুলত্রুটি পর্যালোচনার জন্য এনসিটিবির সদস্য (অর্থ) কাজী আবুল কালামকে প্রধান করে গঠিত তিন সদস্যের কমিটির অন্যরা হলেন- এনসিটিবির ঊর্ধ্বতন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ফরহাদুল ইসলাম ও গবেষণা কর্মকর্তা সহযোগী অধ্যাপক শাহ আলম।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!