• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বগুড়ার চাঁনের কাছে হারলেন রিজভী!


জেলা প্রতিনিধি জুন ৫, ২০১৭, ০৫:৩১ পিএম
বগুড়ার চাঁনের কাছে হারলেন রিজভী!

বগুড়া: বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের জন্মস্থানের ত্যাগী নেতা ও দলের জেলা সম্পাদক জয়নাল আবেদীন চানকে দেয়া শোকজ নোটিশ প্রত্যাহার করার নির্দেশ দিলেন খোদ চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবীর রিজভী গেল ৩১ জুন ওই নোটিশটি পাঠিয়েছিলেন। তার স্বাক্ষর করা নোটিশে চাঁনকে অভিযুক্ত করে বলা হয়েছিল, দলের প্রতিষ্ঠাতার শাহাদৎ বার্ষিকীর কর্মসূচিতে অংশ নেয়ার পরিবর্তে তিনি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছিলেন।

আওয়ামী লীগের বগুড়া জেলা সভাপতি মমতাজ উদ্দিনের সঙ্গে বিএনপির এই ত্যাগী নেতার একটি ছবি প্রমাণ হিসেবে কেন্দ্রে পাঠানোর পরই চাঁনকে শোকজ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। শোকজ নোটিশ হাতে পাওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে চাঁনকে জবাব দিতেও বলা হয়েছিল।

তবে গত ২ জুন নোটিশ হাতে পেয়ে যারপর নাই হতভম্ব ও বিস্মিত হয়ে পড়েছিলেন বগুড়া বিএনপির উদার ও ত্যাগী নেতা হিসেবে সুপরিচিত জয়নাল আবেদিন চাঁন। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে চাঁন নিশ্চিত করে বলেছিলেন, ‘৩০ তারিখের কর্মসুচিতে (দলের প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি শহীদ জিয়াউর রহমানের ৩৬তম শাহাদৎ বার্ষিকী) আমি যে ছিলাম তা স্থানীয় ও জাতীয় সব পত্রিকা ও টিভি চ্যানেলে ব্যপকভাবে প্রচার হয়েছে। ওই অনুষ্ঠানে আমাকে লাঞ্ছিত করার চেষ্টাও করা হয়েছিল। তাই বুঝতে পারছি না কেন্দ্রীয় নেতাদের চোখে সেটা কেন পড়লো না?’

এদিকে, ছবি জালিয়াতি করে বগুড়া জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন চাঁনকে আওয়ামী লীগের কর্মসূচিতে যোগ দেয়ার যে মিথ্যা প্রমাণ দেখানো হয়েছে, সে ঘটনা জেনে বিস্মিত ও ক্ষুব্ধ হন চেয়ারপারসনের পাশাপাশি দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও। আর এর পরেই সেই শোকজ নোটিশ প্রত্যাহার করার নির্দেশ দেন দলীয় প্রধান।

সূত্রমতে, বগুড়া জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও সর্বমহলে ত্যাগী রাজনীতিবিদ হিসেবে পরিচিত জয়নাল আবেদীন চাঁনকে তার পদ থেকে সরিয়ে দিয়ে সেখানে একজন বিতর্কিত ব্যবসায়ীকে বসানোর জন্য দীর্ঘদিন ধরেই একটি গ্রুপ চেষ্টা করে আসছিল। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণের পরও তা সম্ভব না হওয়ায় গেল ৩০ মে বগুড়া জেলা বিএনপির কার্যালয়ে দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকীর আলোচনা সভায় সেই গ্রুপের ক্যাডাররা জয়নাল আবেদীন চাঁনকে শারীরিক ভাবে লাঞ্ছিত করে। এ ঘটনার জের ও ফের অপমানিত হওয়ার হুমকির মুখে পরদিন অপর একটি অনুষ্ঠানে যাননি তিনি।

এর দুদিন পর পহেলা জুন বগুড়া পৌরসভার মেয়র জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের অন্যতম সদস্য অ্যাডভোকেট মাহবুব আয়োজিত ইফতার মাহফিলে যোগ দেন জয়নাল আবেদীন চাঁন। ইফতার মাহফিলে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রবীণ রাজনীতিক মমতাজ উদ্দিনও।

সঙ্গত কারণেই দুই নেতার আসন হয় পাশাপাশি। মাহফিলে দুই দলের দুই প্রবীণ রাজনীতিক আলোচনাও করেন বিভিন্ন বিষয়ে। আর দুই মেরুর দুই রাজনীতিকের ঘনিষ্ট মুহূর্তের একটি ছবি ডিজিটালি কারসাজি করে ইফতার মাহফিলের ব্যানার ও অন্যান্য ব্যাক গ্রাউন্ড পারিপার্শিকতা মুছে দিয়ে সেটাকে আওয়ামী লীগের কর্মসূচি হিসেবে চালিয়ে দিয়ে বিভিন্ন মিডিয়ায় সংবাদও প্রকাশ করা হয়। আর প্রকাশিত সংবাদের ওপর ভিত্তি গত ৩১ মে জয়নাল আবেদীন চানের বিরুদ্ধে একটি শোকজ নোটিশ পাঠানো হয়। নোটিশে স্বাক্ষর করেন দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসিচব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।

গেল ২ জুন শোকজ নোটিশ পেয়ে বগুড়া জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন চাঁন ও দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের মধ্যে বিস্ময় ক্ষোভ ও হতাশা সৃষ্টি হয়। সোনালীনিউজসহ বিভিন্ন প্রিন্ট মিডিয়া সংবাদটি গুরুত্বের সঙ্গে প্রকাশ করলে কেন্দ্রীয় অনেক সিনিয়র নেতা বিষযটি জানতে পারেন। এতে তাদের মধ্যেও ক্ষোভ তৈরি হয়।

গত ৩ জুন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার ইফতার মাহফিলে অংশ নিতে গেলে চেয়ারপারসনের সঙ্গে কথা হয় জয়নাল আবেদীন চাঁনের। তিনি ইফতার মাহফিলেই খালেদা জিয়াকে তাকে নিয়ে ছবি জালিয়াতির ঘটনাটি জানালে তিনি রাতে গুলশান অফিসে চাঁনকে দেখা করতে বলেন।

ওই রাতেই জয়নাল আবেদীন চাঁন, পৌর মেয়র মাহবুব, বগুড়া সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আলী আজগর হেনা চেয়ারপারসনের গুলশান অফিসে দেখা করে পুরো ঘটনাটি খালেদা জিয়াকে খুলে বলেন। সব শুনে চেয়ারপারসন ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়ে দ্রুত বহিষ্কার সংক্রান্ত চিঠি প্রত্যাহার করার নির্দেশ দেন। গেল ৪ জুনা বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের চিঠি হাতে পান জয়নাল আবেদীন চান।

তবে কোনোকিছু যাচাই না করেই জয়নাল আবেদীন চাঁনের মতো ত্যাগী নেতাকে শোকজ করার জন্য রুহুল কবির রিজভীর ওপর ক্ষুব্ধ হন অনেক নেতাকর্মী। কিন্তু চেয়ারপারসনের সিদ্ধান্তে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করায় ক্ষোভ কিছুটা কমেছে নেতাকর্মীদের। তবে বগুড়ার চাঁনের কাছে যে রিজভী হেরে গেছেন- সেটাই এখন আলোচনার বিষয়।

রিজভীর শোকজে হতভম্ব চাঁন

সোনালীনিউজ/এন

Wordbridge School
Link copied!