• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রথম প্রতিবাদ বরগুনায়


বরগুনা প্রতিনিধি আগস্ট ১৫, ২০১৭, ০১:৩০ পিএম
বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রথম প্রতিবাদ বরগুনায়

বরগুনা: ১৫ আগস্ট শোকাবহ একটি দিন। ১৯৭৫ সালের এই দিনে সপরিবারে হত্যা করা হয় বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। শত বাধার মধ্যেও বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর প্রথম প্রতিবাদ হয়েছিল বরগুনায়। বরগুনা মহকুমার এসডিও সিরাজউদ্দীন আহমেদের নেতৃত্বে বরগুনার ছাত্র নেতা, ব্যবসায়ীসহ সর্বস্তরের মানুষ প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যেও জঘন্য হত্যাকাণ্ডের তীব্র প্রতিবাদ করেছিল ওই সময়। হত্যার প্রতিবাদে সর্বপ্রথম বিক্ষোভ মিছিল করেছিল বরগুনাবাসী। তবে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার প্রতিবাদের ইতিহাস বিকৃত করার চেষ্টা চলছে। তাই সঠিক ইতিহাস সংরক্ষণের দাবিও অনেকের।

বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর যখন নীরব ছিল সারাদেশের বঙ্গবন্ধু প্রেমীরা, দেশের বিভিন্ন জেলায় আনন্দ মিছিল করেছিল কিছু বিকৃত মনের মানুষ। তখন ব্যতিক্রমী ছিল বরগুনাবাসী। স্বাধীনতা আন্দোলনের মহনায়ককে হত্যার প্রতিবাদে মিছিলে মুখর ছিল বরগুনার রাজপথ।

রেডিওতে মেজর ডালিমের বক্তব্যে বঙ্গবন্ধুসহ তার পরিবারের হত্যাকাণ্ডের সংবাদ শুনে প্রতিবাদ করার সিদ্ধান্ত নেয় ছাত্রলীগের তৎকালীন বরগুনার সভাপতি জাহাঙ্গীর কবির ও ছাত্র ইউনিয়নের নেতারা। তাদের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করে তখন রাস্তায় নেমে আসতে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করতে মূল্যবান ভূমিকা নেন ফুলঝুড়ি ইউনিয়নের তৎকালীন চেয়ারম্যান ও পরে বরগুনার সংসদ সদস্য ছিদ্দিকুর রহমান।

সেই প্রতিবাদের বিষয়ে তৎকালীন ছাত্র নেতা মোতালেব মৃধা বলেন, বরগুনা মহকুমার এসডিও সিরাজউদ্দীন আহমেদ পুলিশকে নীরব থাকার নির্দেশ দিয়ে ছাত্র নেতাদের সঙ্গে জরুরি বৈঠকে বসেন। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বরগুনা সরকারি কলেজ থেকে ছাত্রলীগের সহায়তায় একটি ঝটিকা মিছিল বের করে ছাত্রলীগ ও ছাত্র ইউনিয়ন। পরে জনগণের সহায়তায় বরগুনার প্রধান সড়কে বিশাল মিছিল বের করেন তারা।

মিছিলে যোগদান করে বরগুনার ব্যবসায়ী, শিক্ষকসহ সর্বস্তরের মানুষ। ওই মিছিলে নেতৃত্ব দেন ছাত্রনেতা সুবল তালুকদার, মোতালেব মৃধা, মো. শাহজাহান, নন্দ তালুকদার, সৈয়দ রব, আনোয়ার হোসেন মনোয়ার, দেলোয়ার হোসেন ও তৎকালীন বরগুনা ছাত্রলীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর কবির এবং ইউপি চেয়ারম্যান ছিদ্দিকুর রহমান।

এতো দিন পরেও বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীরা যারা পালিয়ে আছে তাদের দ্রুত আইনের আওতায় আনতে না পারায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন তারা।

এই বঙ্গসেনাদের সঙ্গে কথা বললে তারা বলেন, বর্তমান সরকার মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী এবং অসম্প্রদায়িক। তবে কেন খুনিদের ফাঁসির রায় হওয়ার পরও দেশে ফিরিয়ে আনতে এত সময় লাগছে। তারা কি একটি দেশের সরকারের চেয়েও শক্তিশালী? তারা এই খুনিদের দ্রুত রায় কার্যকরের জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান।

এ বিষয়ে বরগুনার তৎকালীন ছাত্রলীগ সভাপতি মো. জাহাঙ্গীর কবির জানান, জীবনের মায়া ত্যাগ করে ১৫ আগস্ট শুক্রবার সকালে তারা প্রতিবাদ মিছিল নিয়ে রাস্তায় বের হয়েছিলেন। সারা বাংলাদেশের মধ্যে শুধু বরগুনায় তারা প্রথম প্রতিবাদ করেন। মায়ের কাছে দোয়া চেয়ে প্রতিবাদ করেছিলেন তিনি।

তিনি বলেন, তদিনেও সেসব খুনি আরাম-আয়েশ করে দিন কাটাচ্ছে। যাদের ফাঁসিতে ঝোলার কথা তারা আঙুল নাড়িয়ে দেশের বাইরে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এসব দেখার জন্য কি দেশ স্বাধীন করেছিলাম? এসব দেখার জন্য কি জাতির জনককে হত্যার প্রতিবাদ করেছিলাম?

রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় তিনি তিন বছর কারাবন্দী ছিলেন বলেও জানান।

বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ছাত্রলীগের নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিলে যোগ দিয়েছিল বরগুনার ব্যবসায়ীসহ সর্বস্তরের মানুষ। আর এসব মানুষকে রাস্তায় নামতে উৎসাহ দিয়েছিলেন গৌরবময় সেই দিনের আর এক নায়ক বরগুনার সাবেক এমপি সিদ্দিকুর রহমান। হত্যার প্রতিবাদ করে তিন বছর কারাবন্দি ছিলেন তিনিও।

এ বিষয়ে সিদ্দিকুর রহমানের কনিষ্ঠ কন্যা সানজিদা রহমান মনা বলেন, ইতিহাসে তার বাবার এই অবদান অনেকেই জানেন তবে কেউই স্বীকার করছেন না। ইতিহাস থেকে তার নাম মুছে দেয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে একটি কুচক্রি মহল। নতুন প্রজন্মের কাছে ইতিহাস পৌঁছাতে দিচ্ছে না একটি মহল।

এ বিষয়ে বরগুনার মানুষের কাছে হিরো নামে পরিচিত সেই বঙ্গবন্ধুপ্রেমী বরগুনা মহকুমার এসডিও সিরাজউদ্দিন বলেন, বঙ্গবন্ধুকে ভালবেসে তিনি সেদিন সরকারি কর্মকর্তা হয়েও অবৈধ সরকারের নির্দেশে বরগুনায় কার্ফু জারি করেননি। বরং বরগুনার মানুষকে প্রতিবাদ করতে সহায়তা করেছিলেন তিনি। যার ফলশ্রুতিতে দুই বছর চাকরিচ্যুত ছিলেন তিনি।

ইতিহাস বিকৃতির ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, ইতিহাস বিকৃত করার চেষ্টা কেউ করে থাকলেও তারা ব্যর্থ হবে। কারণ সেই প্রতিবাদ মিছিলে সিদ্দিকুর রহমানের অবদান ছিল অপরীসিম। তারা সবাই বঙ্গবন্ধুপ্রেমী ছিলেন তাই তারা প্রতিবাদ করেছিলেন। এটি সবাই জানে, এখানে ইতিহাস বিকৃতির চেষ্টা করলে তারা নিজেরাই কলঙ্কিত হবে।

সিরাজউদ্দীন আহমেদ তার প্রকাশিত স্মৃতিচারণে লেখেন, আমি গৌরবান্বিত যে একমাত্র বরগুনায় সর্বপ্রথম ইতিহাসের জঘন্যতম হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে সশস্ত্র প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ গড়ে তোলা হয়েছিল।


সোনালীনিউজ/ঢাকা/আকন

Wordbridge School
Link copied!