• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ করছে লাল-সবুজ জামায়াত!


মেহেদী হাসান, নিউজরুম এডিটর অক্টোবর ৩০, ২০১৬, ০৮:৩৫ পিএম
বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ করছে লাল-সবুজ জামায়াত!

বর্তমান লোগো, ডানে আগের লোগো

ঢাকা: নাম পরিবর্তনের আট বছর পর বদলে ফেলা হয়েছে লোগো। এর কয়েক মাস পর পরিবর্তন আনা হয়েছে গঠনতন্ত্রে। সম্প্রতি সংগঠনের আমির পদে ছয় বছরের ভারপ্রাপ্ত নেতা মকবুল আহমাদও ভারমুক্ত হয়েছেন।

গত ১৭ অক্টোবর তিনি পূর্ণকালীন আমির হিসেবে শপথ নিয়েছেন। এরপর দলীয় নেতাকর্মী ও দেশবাসীর উদ্দেশ্যে একটি বিবৃতি দিয়েছেন। চমকে দেয়ার বিষয় হচ্ছে, বিবৃতিতে তিনি সরকারের বিরুদ্ধে জুলুম-নির্যাতনের নানা অভিযোগ তুললেও বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ করেছেন শ্রদ্ধার সঙ্গে। সেই সঙ্গে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি।

নাম আর লোগো পরিবর্তনের পর গঠনতন্ত্রে মহান মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানো সেই সঙ্গে বঙ্গবন্ধুকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করার মধ্য দিয়ে সংগঠনটি কোনো বার্তা দেয়ারই চেষ্টা করছে। এ বার্তা বিগত সময়ের সব অভিযোগ মাথায় নিয়ে কলঙ্ক মোচনের মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক দল হিসেবে গ্রহণযোগ্য একটা অবস্থান সৃষ্টি করার পরিকল্পনাই হতে পারে।

তবে বিবৃতি দেয়ার পরদিনই (১৮ অক্টোবর) অপ্রীতিকর পরিস্থিতির মুখে পড়তে হয় সংগঠনের নয়া আমিরকে। দুটি অনলাইন নিউজ পোর্টালে তার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ তোলা হয়। প্রকাশিত খবরে বলা হয়, মকবুল আহমাদ ১৯৭১ সালে ফেনী ও চট্টগ্রাম অঞ্চলে মানবতাবিরোধী অপরাধে যুক্ত ছিলেন।

আবার ওই সংবাদের সূত্র ধরে পরদিনই জামায়াতের নতুন আমিরের সেই কথিত যুদ্ধাপরাধ অনুসন্ধানের উদ্যোগ নেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। খবরটি প্রথম প্রকাশ করে বিবিসি বাংলা। এদিকে, নতুন আমিরের ‘যুদ্ধাপরাধ’ অনুসন্ধানের উদ্যোগে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।

দলের ওয়েব সাইটে এক বিবৃতিতে বলা হয়, ছয় বছর ধরে ভারপ্রাপ্ত আমির থাকাকালে তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ ছিল না। এখন শপথ নেয়ার পরপরই এই অভিযোগ। বিবৃতিতে দাবি করা হয়, দলের বিরুদ্ধে সরকারের ‘ষড়যন্ত্রের’ অংশ হিসাবে এই অনুসন্ধান।

সূত্রমতে, ২০০৮ সালে রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন পাওয়ার জন্য ‘জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ’ নাম পরিবর্তন করে হয় ‘বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী’। এর প্রায় আট বছর পরে তাদের লোগো পরিবর্তন করা হলো।

চলতি বছরের গত ৭ জুন গণমাধ্যমে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে নতুন ওই লোগো প্রথম যুক্ত করতে দেখা যায়। লোগোটি জাতীয় পতাকার রঙ লাল-সবুজের আদলে করা হয়েছে। লাল রঙের অংশে বাংলাদেশ এবং সবুজ রঙের অংশে জামায়াতে ইসলামী লেখা আছে।

লোগো পরিবর্তনের এ বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়নি। তবে সম্প্রতি সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের জন্য জামায়াত-শিবির দায়ীকে দায়ি করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের দেয়া বক্তব্যের প্রতিবাদ জানায় সংগঠনটি। পরে গেল ৭ জুন কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য হামিদুর রহমান আযাদ নতুন ওই লোগো যুক্ত বিবৃতি গণমাধ্যমে পাঠান। বিবৃতিতে স্বাক্ষর করা ছিল ‘এম আলম’ নামে। এই লোগো পরিবর্তনের আগে চার/পাঁচ মাস ধরে সংগঠনটি সাদা কাগজেই বিবৃতি পাঠিয়ে এসেছে গণমাধ্যমগুলোতে।

প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে দলের গঠনতন্ত্রে গুরুত্বপূর্ণ সংশোধনী আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। সংশোধনীতে দলীয় ‘ঘোষণা’ হিসেবে বীরত্বপূর্ণ সংগ্রামের মাধ্যমে দেশের স্বাধীনতা অর্জন এবং এই স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষার বিষয়টি যুক্ত করা হচ্ছে। ভূমিকায় জাতীয় ঐক্য, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, ইতিহাস ও ঐতিহ্য সংরক্ষণের কথাও বলা হয়েছে।

স্বাধীনতার ৩৩ বছর পর ২০০৪ সালে জামায়াত গঠনতন্ত্রে মুক্তিযুদ্ধের বিষয়টি উল্লেখ করে। সেখানে ‘যেহেতু’ আর ‘সেহেতু’ শব্দ দুটি লাগিয়ে বলা হয়, ‘যেহেতু বাংলাদেশের জনগণ ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বপূর্ণ সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বের মানচিত্রে স্বাধীন সার্বভৌম জাতি-রাষ্ট্রের মর্যাদা লাভ করিয়াছে; সেহেতু শোষণমুক্ত ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গঠনের মহান উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর এই গঠনতন্ত্র প্রণীত ও প্রবর্তিত হইল।’

একযুগ পর ওই গঠনতন্ত্রের সংশোধনীর খসড়া করা হয়েছে। যাতে ‘যেহেতু’ এবং ‘সেহেতু’ শব্দ দুটি তুলে দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের বিষয়ে আগের চেয়ে অবস্থান পরিষ্কার করেছে সংগঠনটি।

খসড়া গঠনতন্ত্রে বলা বলেছে, ‘আমরা সুস্পষ্টভাবে ঘোষণা করিতেছি যে, বাংলাদেশের জনগণ ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বপূর্ণ সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বের মানচিত্রে স্বাধীন সার্বভৌম জাতি-রাষ্ট্রের মর্যাদা লাভ করিয়াছে। ...উপরোক্ত বিশ্বাস ও ঘোষণার ভিত্তিতে শোষণমুক্ত ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গঠনের মহান উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর এই গঠনতন্ত্র প্রণীত ও প্রবর্তিত হইল।’

এ ছাড়া গঠনতন্ত্রে দলীয় ‘কর্মসূচি’ হিসেবে চরমপন্থার বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি অবলম্বন ও সে লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করার বিষয়টিও উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, মুক্তিযুদ্ধে সশস্ত্র বিরোধিতা ও পাকিস্তানি বাহিনীকে সহযোগিতার অভিযোগে স্বাধীনতার পর ১৯৭১ সালে জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়। নেতারা পাকিস্তানে নির্বাসনে চলে যান। পরবর্তীতে ১৯৭৫ সালে প্রথম রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকাণ্ড এবং কয়েকটি সামরিক অভ্যুত্থানের পর ১৯৭৭ সালে তৎকালীন মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এলে জামায়াতের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেয়া হয়। দলটির নেতাকর্মীরা ফিরে আসার অনুমতি পান।

সোনালীনিউজ/এমএন

Wordbridge School
Link copied!