• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত বাংলাদেশ


মমতাজউদ্দীন পাটোয়ারী আগস্ট ১৫, ২০১৬, ১২:৫০ পিএম
বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত বাংলাদেশ

সম্প্রতি বঙ্গবন্ধুর লেখা ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ গ্রন্থটি প্রকাশিত হয়েছে। এটি যে কতোবড় একটি ঘটনা তা অনেকেই হয়তো বুঝতে পারছেন না। কিন্তুু ১৯৫৪ সাল পর্যন্ত রাজনীতির অসংখ্য জানা-অজানা ঘটনা ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির নামধাম, স্থান ইত্যাদির ঘনিষ্ঠ বিবরণ সংবলিত লেখা এই বইটি সেই সময়ের রাজনীতির ইতিহাস লেখায় এখন থেকে সবচাইতে সহায়ক তথ্যসূত্র ও গ্রন্থ হিসেবে কাজ করবে। হয়তো এতোদিনের লিখিত অনেক ইতিহাস এখন থেকে নতুনভাবেই লেখার প্রয়োজন পড়বে।

গ্রন্থটি হাতে নিলে মনে হবে বন্ধবন্ধু যদি জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত এভাবে ডায়রি লিখে যেতেন, তাঁর রাজনৈতিক জীবনের সঙ্গে মিশে থাকা গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা, ব্যক্তি ও নেতাকর্মীদের বিষয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ আত্মজীবনী লিখে যেতে পারতেন তা হলে বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাস অনেকটাই পরিপূর্ণভাবে জানার সুযোগ হতো নতুন প্রজন্মের। সেই পূর্ণাঙ্গ আত্মজীবনী পড়ে বর্তমান রাজনীতির নেতাকর্মীরা বুঝতে পারতো পরিপূর্ণ রাজনীতিবিদের জীবন, চিন্তা-ভাবনা ও রাজনীতি কীভাবে গঠিত হয় বা হতে পারে। 

আমাদের জাতীয় রাজনীতি নিয়ে অনেক হতাশা, অভাব, অভিযোগ আছে। কিন্তুু ১৯৭৫ সালের আগে বঙ্গবন্ধু ছিলেন, ছিলেন তাজউদ্দীন আহমেদ, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, ক্যাপ্টেন মনসুর আলী, কামরুজ্জামানের মতো অসংখ্য নেতা- যারা বাঙালির একটি মানসম্মত রাজনীতি প্রতিষ্ঠায় আত্মনিয়োগ করেছিলেন, যাদের জীবনের ব্রতই ছিল রাজনীতি করা, সেই রাজনীতিতে পূর্ব বাংলার জনগণের মুক্তি, একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা ছাড়া অন্য কোনো দ্বিতীয় চিন্তা ছিল না।

রাজনীতিতে সাধনা ও ব্রত বলতে যা বোঝায় তা তারা প্রায় সকলেই কমবেশি করার স্বাক্ষর রেখেছেন। তাদের মধ্যে মত ও পথের ভিন্নতা ছিল কিন্তুু আদর্শবোঁধ, দেশপ্রেম, শিক্ষা-দীক্ষা, দেশের জন্য জীবন উৎসর্গ করার সুমহান প্রেরণা ও উদাহরণ ছিল নজর কাড়ার মতো।

এক সময় তাজউদ্দীন আহমেদের ডায়রি পড়ে আমরা জানতে পেরেছি কীভাবে তিনি এবং অন্যান্য নেতৃবৃন্দ আন্দোলন-সংগ্রামের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জীবন কাটাতেন। তাজউদ্দীনের লেখা পড়ে মনে হতো কেন অন্য রাজনীতিবিদরা এমন করে তাদের কথাগুলো লিখে গেলেন না। কেউ কেউ অবশ্য লিখেছেন। আবুল মনসুর আহমদের ‘আমার দেখা রাজনীতির পঞ্চাশ বছর’ পড়ে অনেক কিছু জানা যেতো। আরো বেশ কজনের লেখা কিছু বই পড়ে রাজনীতিকে অন্য চোখে দেখা সম্ভব হতো। তবে তৃপ্তি কখনো মেটেনি।

আমাদের তেমন কোনো ধারণাই ছিল না যে, বঙ্গবন্ধু জেলে বসে কিছু লিখে গেছেন। তেমন কোনো তথ্য কারোই জানা ছিল না। হঠাৎ করেই ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ প্রকাশের খবর জানা গেলো। শেখ হাসিনা এবং শেখ রেহানা বঙ্গবন্ধুর এসব লেখা প্রকাশের উদ্যোগ নিলেন। অবশেষে তা আলোর মুখ দেখতে পেলো। বলা চলে এ বইটি সবকিছু সাড়া ফেলে দিলো।

এককালে বলা হতো, বঙ্গবন্ধু একজন সুবক্তা, অদ্বিতীয় সংগঠক, রাজনীবিদ হিসেবে তাঁর ভূমিকাকে কেউ কেউ খাটো করলেও স্বীকার করতে বাঁধ্য হন যে, শেখ মুজিবের মতো নেতা না হলে বাংলাদেশ স্বাধীনতালাভ করতো কিনা সন্দেহ আছে। স্বীকার করতেই হবে, তিনি তাঁর পূর্বসূরিদের অতিক্রম করতে পেরেছিলেন বলেই ষাটের দশকে তিনি হতে পেরেছিলেন অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু রূপে। 

তাঁকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছিল একঝাঁক রাজনৈতিক নেতার সম্মিলন, যৌথ নেতৃত্ব। এবং সে কারণেই পাকিস্তান রাষ্ট্র ব্যবস্থা থেকে বের হয়ে আসা, একটি স্বাধীন দেশ প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়েছিল। তবে অনেকেই বলে বেড়াতেন, শেখ মুজিবের অনেক গুণাবলী থাকলেও তেমন কিছু লিখে যাননি, কেউ কেউ তাঁর লেখাপড়া নিয়েও কটাক্ষ করতো। বাঙালির পরশ্রীকাতরতার নজির এ ক্ষেত্রেও ছিল। 

স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ, নজরুলের সাহিত্য প্রতিভা নিয়েও অনেকে সমালোচনামুখর ছিল। তাদের কথা এখন অনেকেই ভুলে গেছে, রবীন্দ্রনাথ, নজরুল কিন্তুু বাংলা সাহিত্যের সিংহাসন রচনা করে যে আসনে বসেছেন তার কোনো তুলনা হয় না। রাজনীতিতেও বঙ্গবন্ধু বিরোধীদের অনেক প্রচারণা ছিল। সেইসব সমালোচনার মধ্যে অন্যতম বিষয় ছিল যে, তিনি কিছুই লিখে যাননি! ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ প্রকাশের পর মনে হয় তাদের মুখে চুনকালি লেপন করা হয়েছে।

তবে যে কথাটি উল্লেখ করার জন্য এতো কিছুর অবতারণা করছি, তা হচ্ছে, সদ্য প্রকাশিত বইটি পড়তে বসে কেবলি মনে হচ্ছিল যে, ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত সময়ের পুরো রাজনীতি যদি তিনি লিখে যেতে পারতেন তা হলে বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাস অন্যভাবে লেখার সুযোগ হতো। আমরা সেই সুযোগ হারিয়েছি। যেমনিভাবে এতোদিন ১৯৫৪ সাল পর্যন্ত রাজনীতির ইতিহাস রচনায় অনেক তথ্যের অভাব ছিল, বিভ্রান্তি ছিল, বিকৃত ও অসম্পূর্ণ তথ্যও ছিল।

কিন্তুু বঙ্গবন্ধুর এই ডায়রি অসম্পর্ণ হলেও লেখা রাজনীতির ঘটনাবলির বর্ণনা সেই সময়ের ইতিহাস রচনায় এক বিপ্লবাত্মক সংযোজন ঘটিয়েছে। সার্বক্ষণিক রাজনীতিবিদ শেখ মুজিব জেলের অভ্যন্তরে বন্দী থাকার সুবাদে, স্ত্রী বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের পরামর্শে লিখতে বসায় বের হয়ে এসেছে রাজনীতির এক আকর ইতিহাসগ্রন্থ- যা আমাদের মতো ইতিহাসপ্রেমীদের নতুন নতুন তথ্য দিয়ে পেছনের ইতিহাসকে নতুনভাবে দেখা, লেখা ও গবেষণা করার সুযোগ করে দিয়েছে।

বঙ্গবন্ধু কিংবা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব কখনো ভাবেননি যে, তারা জাতির ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইতিহাস রচনায় এক অসামান্য অবদান রেখে গেছেন। অসম্পর্ণ রচনা হলেও এর গুরুত্ব অসাধারণ ও তুলনাবিহীন বলেই আমি মনে করি। অথচ এই লেখালেখিটা তাঁর কাছ থেকে পেতেই হতো এমনটি নয়, না পেলেও কোনো অভিযোগ করার ছিল না। কিন্তুু এতো বছর পর প্রাপ্ত পাণ্ডলিপির প্রকাশ নিঃসন্দেহে এক অনন্য অসাধারণ প্রাপ্তি হিসেবেই দেশে-বিদেশে বিবেচিত হবে।

বঙ্গবন্ধু রাজনীতিতে যেভাবে শীর্ষ সড়ক রচনা করেছিলেন তা ছিল ব্যতিক্রমধর্মী, সেই পথ ধরে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা সম্ভব হয়েছিল। রাজনীতি তো অনেকেই করেন, অনেকেই জাতীয় মুক্তির জন্য আন্দোলন, সংগ্রাম করেন, নেতৃত্ব প্রদানও করেন, কিন্তুু আন্দোলন-সংগ্রামকে যৌক্তিক পর্যায়ে নিতে পারেন কজন নেতা। বিশেষত পরাধীনতার হাত থেকে নিজের জনগণকে মুক্ত করতে, স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনে সাফল্য অর্জন করতে পারেন খুব কম সংখ্যক নেতাই।

বঙ্গবন্ধু বাঙালি এবং এ ভূখণ্ডে বসবাসকারী ৪৫টি জাতিগোষ্ঠীর জন্য একটি স্বাধীন রাষ্ট্র ব্যবস্থা গড়ার আন্দোলনকে মুক্তিযুদ্ধে রূপান্তরিত করতে সক্ষম হন, জনগণকে নিজেদের রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় আত্মোৎর্সগীকৃত করতে পেরেছিলেন, স্বাধীন রাষ্ট্র পাওয়ার আকাক্সক্ষায় কিশোর-তরুণ থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত সকলকে ঐক্যবদ্ধ করতে পেরেছিলেন। এসবের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন শেখ মুজিব নামক একজন অসাধারণ সাহসী নেতা- যাঁর জীবনটাই ছিল শাসকগোষ্ঠীর ফাঁসির রশিতে বাঁধা।

এমন নেতা না হলে একাত্তরে এতো মানুষ পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে প্রাণ দিতে যুদ্ধে যেতো না, এভাবে প্রাণপণ লড়তো না, স্বাধীন দেশ পাওয়ার আকাক্সক্ষা পোষণ করতো না। মুজিবের নেতৃত্ব ছিল, তাঁর ছিল বেশকিছু সুযোগ্য অনুসারী- যারা তাঁর অনুপস্থিতিতে মুক্তিযুদ্ধের মতো মহাকর্মযজ্ঞ সম্পাদন করতে পেরেছিলেন।

এখানেই মুজিবের বিশালতা, মুজিবের শক্তি, গণভিত্তি ও রাজনীতির সৃজনশীলতা। এ ক্ষেত্রে মুজিব একজন পরিপূর্ণ নেতা যিনি স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্ব প্রদান করেছেন, তিনি যুদ্ধের মাঠে উপস্থিত না থেকেও প্রেরণার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন। রাষ্ট্রস্রস্টার সংজ্ঞায়নে মুজিব এখানে অদ্বিতীয়। সে কারণেই তিনি জাতির পিতা, রাষ্ট্রের জনক।

মুজিব স্বাধীনতা প্রাপ্তির পর কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে সরকারের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিলেন। অনেকে তাঁকে অন্য যে কোনো সরকারের মতোই একজন সরকারপ্রধান হিসেবে দেখেন। আমার দৃষ্টি এর চাইতেও অনেক বেশি দূরে নিক্ষিপ্ত হচ্ছে। আমার দৃষ্টিতে মুজিব মামুলি কোনো সরকারপ্রধান ছিলেন না, তিনি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গঠনের পাশাপাশি ‘শোষিতের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা’ গড়ে তোলার আইনি, প্রশাসনিকসহ নানা কাঠামো গড়ে তুলতে পদক্ষেপ নেন।

মুজিব সংসদীয় পদ্ধতির সরকার ব্যবস্থাকে আর্থ-সামাজিকভাবে কতোগুলো লক্ষ্য এবং আদর্শনির্ভর করতে সচেষ্ট হন। তিনি জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা এবং গণতন্ত্রকে রাষ্ট্রের মৌলনীতি হিসেবে নির্ধারণ করেন। একটি আধুনিক শিক্ষানীতি গ্রহণ করে মানুষকে শিক্ষিত করার পরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর হন। দেশি-বিদেশী নানা অপশক্তির ষড়যন্ত্র ও বাঁধা তাঁকে পদে পদে পিছিয়ে দিচ্ছিল। তারপরও তিনি আপোসহীনভাবে এগিয়ে যেতে চাইলেন।

বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশসমূহের মধ্যে নিজস্ব ধারায় গড়ে তুলতে চাইলেন। ১৯৭৫-এর শুরুতে তিনি রাজনীতিতে নতুন চিন্তা ও সৃজনশীলতার পথে পা রাখলেন। মুজিবের পক্ষেই এমন নিরীক্ষা করা সম্ভব ছিল। দীর্ঘ রাজনৈতিক আন্দোলন, সংগ্রামের অভিজ্ঞতা, অর্জন ও জটিলতাকে অতিক্রম করে চলতে পারাটা মুজিবের জন্য ব্যতিক্রম কিছু নয়, বরং এটিই স্বাভাবিক।

সেই স্বাভাবিক ভূমিকাকে রাষ্ট্র নির্মাতা মুজিব কাজে লাগাতে গেলেন। তাঁর শত্রুপক্ষ বুঝতে পেরেছিল মুজিব রাজনীতির কোন মহাসড়কে উঠতে চাচ্ছেন। সেই সড়ক পছন্দ নয় দেশি-বিদেশী বেশকিছু অপশক্তির। তারা যৌথভাবেই ট্যাংক, কামান, বন্দুক নিয়ে রাতের আঁধারে ৩২ নম্বর ধানমন্ডি হাজির হলো। ঘুম থেকে জাগিয়ে তুলে বঙ্গবন্ধুর বুকে গুলি ছুড়লো, গোটা পরিবারের সবাইকে ঘরেই নৃশংসভাবে হত্যা করলো।

এ হত্যাকাণ্ডের একটি ছাড়া অন্য কোনো উদ্দেশ্য ছিল না। সেই একটি উদ্দেশ্য হলো মুজিবের চিন্তাপ্রসূত একটি বাংলাদেশ রাষ্ট্রব্যবস্থা সৃষ্টি করতে না দেয়া- যেখানে বৈষম্য কমে আসবে, শিক্ষা-দীক্ষায় মানুষ বড় হবে, অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ হবে, বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশ একটি নিজস্ব রাষ্ট্র পরিচয় ও চরিত্রে অনেকের কাছেই আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে। মুজিবের সেই পরিকল্পনা পূর্ণ হতে দিলো না।

স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় ১৯৭১ সালে মুজিবের চিন্তা সফল হয়েছিল কিন্তুু দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর রাষ্ট্র ব্যবস্থা গঠনের যাত্রা শুরু করলেও সেটিকে পূর্ণতা দানের সুযোগ তাকে দেয়া হলো না। ১৫ আগস্ট অসম্পর্ণ বাংলাদেশ রাষ্ট্রেরই ক্ষত বহন করে চলছে, চলবে। যে বাংলাদেশ ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর দিনে দিনে ফুলে ফুলে উঠেছে- সেটি মুজিবের চিন্তার বাংলাদেশ নয়। মুজিবের বাংলাদেশ তাঁর অসমাপ্ত আত্মজীবনীর মতোই চিরকাল অসমাপ্ত চেহারা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকবে। ১৫ আগস্ট সেই ভয়ানক, কলঙ্কজনক ঘটনারই চিহ্ন বহন করে। (সংকলিত)

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এএম

Wordbridge School
Link copied!