• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

বছরে কতটুকু চাল প্রয়োজন, তথ্য নেই কোথাও


শেখ আবু তালেব, জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জুলাই ২০, ২০১৭, ০২:১৭ পিএম
বছরে কতটুকু চাল প্রয়োজন, তথ্য নেই কোথাও

ঢাকা: চাল নিয়ে সরকারের কোনো পরিকল্পনা ও প্রয়োজনীয় পরিমাণ মজুদ না থাকার সুযোগ নিয়েছে ব্যাবসায়ী সিন্ডিকেট। এজন্য হঠাৎ করেই বাজারে মোটা চালের দাম গত দেড় মাসে কেজি প্রতি ১৪ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। রাজধানী ঢাকার সবচেয়ে বড় চালের আড়ৎ বাদামতলী ও বাবুবাজারে বিভিন্ন প্রকারের বস্তা প্রতি (৫০ কেজি) মোটা চালের দাম বেড়েছে ৬০০ টাকা ও সরু চালের দাম বস্তা প্রতি বেড়েছে ৬৫০ টাকা পর্যন্ত। খুচরা বাজারে প্রতি কেজি মোটা চাল ৩৮ টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ৫০, ৫১ ও ৫২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বিভিন্ন ব্রান্ডের চিকন চাল ৫০ টাকার বদলে বিক্রি হচ্ছে ৬২ টাকা কেজি প্রতি।

সরকারের চাল আমদানির কথা শুনার পরেই বাজারে মোটা চালের দাম কেজি প্রতি দুই টাকা পর্যন্ত কমেছে। হঠাৎ করেই কেনো এই চালের স্বল্পতা ও দাম বাড়লো তা খুঁজতে গিয়ে বের হয়েছে পিলে চমকানোর মতো তথ্য।

বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষের অধিকাংশেরই তিন বেলার প্রধান খাবার ভাত। স্বল্প আয়ের মানুষের খিদে পূরণ ও প্রয়োজনীয় শক্তি নিতে হয় ভাত থেকেই। আমিষ বা সবজি যোগার করতে না পারলেও কাচা বা শুকনা মরিচ দিয়েই এক প্লেট ভাত খেয়ে প্রয়োজন মেটান জনগণের বড় একটি অংশ। সেই ভাতের উৎস চালের বার্ষিক প্রয়োজন বাংলাদেশে কত, তার কোনো পরিসংখ্যান বা হিসাব সরকারের কোনো দপ্তরের কাছে নেই।

সূত্র জানিয়েছে, কৃষি বিভাগ প্রতি বছর ধান উৎপাদনের লক্ষ্যামাত্র নির্ধারণ ও উৎপাদিত ধানের তথ্য রাখে। খাদ্য গুদাম রাখে কতটুকু চাল মজুদ আছে। আর খাদ্য অধিদপ্তর ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় হিসাব রাখে কতটুকু চাল আমদানি ও রপ্তানি হলো। কিন্তু আমাদের প্রতি বছর কতটুকু চালের প্রয়োজন হয় তার কোনো তথ্য কারো কাছে নেই

মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের হিসাবে ২০১৬ সালে বিশ্বে মোট চাল উৎপাদন হয়েছে ৪৮ কোটি ৩১ লাখ টন। বিরূপ আবহাওয়ার কারণেচলতি বছরে তা নেমে ৪৮ কোটি ১০ লাখ টন হতে পারে। শতাংশ হিসেবে যা ০.৪৩ শতাংশ কম। দেশটির গবেষণা বিভাগ এ বিষয়ে আগেই পূর্বাভাস দিয়ে রেখেছে। অপরদিকে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যমতে, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে দেশে ৩ কোটি ৪৯ লাখ ৬৮ হাজার টন চাল উৎপাদিত হয়েছে, যা আগের বছরের চেয়ে ২ লাখ ৫৮ হাজার টন বেশি। চলতি অর্থবছরে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩ কোটি ৫০ লাখ টন।

চালের উৎপাদন বৃদ্ধি ও খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ন হওয়ায় গত বছর ৫০ হাজার টন সেদ্ধ চাল রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। অপরদিকে জুলন মাস পর্যন্ত খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সরকারিভাবে ৩.৯৩ লাখ মেট্রক টন ও বেসরকারিভাবে ৫০.০৫ লাখ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য আমদানি করেছে সরকার। চলতি অর্থবছরে মে মাস পর্যন্ত ১.১৫ লাখ টন চাল আমদানি করেছে সরকার। এ হিসাবে সরকারের কাছে যথেষ্ট চাল রয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে। চালের দাম বৃদ্ধির কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে সরকার দেখতে পেয়েছে গত ১৭ জুলাই পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন জায়গায় থাকা সরকারি খাদ্যগুদামে এক লাখ ৭৭ হাজার মেট্টিক টন চাল মজুদ আছে, যা গত ৭ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। অথচ ২০০৯-১০ অর্থবছরের সময়ে মজুদ ছিল ৫ লাখ ৪৬ হাজার মেট্টিক টন চাল। যা পরের বছর থেকে কমেই আসছে।

চালের দাম যাতে হঠাৎ করেই বৃদ্ধি না পায়, সেজন্য ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কবল থেকে বাজার নিয়ন্ত্রণ, সামাজিক নিরাপত্তা ব্যয়, দুযোর্গ ও আপদকালীন পরিস্থিতি মোকাবলা করার জন্য সরকারিভাবে পর্যাপ্ত পরিমাণে চাল মজুদ করা হয়। সাধারণত এক মৌসুমের উৎপাদিত চাল, গম ও ধানের মজুদ করা হয়, যাতে দেশে কোনো বিপর্যয় হলে তাৎক্ষণিক সামাল দেয়া যায়। বিশ্ব বাজার থেকে চাল আমদানি করে বাজার পরিস্থিতি সামাল দেয়ার সময় পাওয়া যায়। আমদানি করা চাল বাজারে আসার সময়টুকুতে নিজস্ব চাল দিয়ে চাহিদা মেটানো যায়।

কিন্তু চাল নিয়ে সরকারের এমন প্রস্তুতি তেমন ছিল কি-না তা নিয়ে বোদ্ধা মহলে প্রশ্ন উঠেছে। সবচেয়ে বড় বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে, প্রকৃতপক্ষে আমাদের বার্ষিক কত টন চাল ও গমের প্রয়োজন হয়। উৎপাদন ও লক্ষ্যমাত্রার হিসাব থাকলেও কতটুকু পরিমাণ চালের প্রয়োজন হয় তার কোনো পরিসংখ্যান বা তথ্য সরকারি কোনো দপ্তরে নেই। কৃষি বিভাগের কাছ থেকে খাদ্যশস্যর বিভিন্ন তথ্য ও পরিসংখ্যান সংগ্রহ করে থাকে খাদ্যমন্ত্রণালয়। কিন্তু চালের গুদাম, মজুদ, আমদানি ও উৎপাদন তথ্য থাকলেও চাহিদা বা কতটুকু চাল ভোগ করা হয়, তার কোনো তথ্য সরকারের কোনো মন্ত্রণালয়ের কাছে নেই।

মার্কিন গবেষণা বলছে, আগামী ২০২০ সাল থেকে ২০৫০ সালে চালের চাহিদা বেড়ে যাবে। একই গবেষণা বলছে ষাটের দশক থেকে নব্বইয়ের দশকে বাংলাদেশের মানুষের বাৎসরিক গড়ে ভাত খাওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়ে ৬০ কেজি থেকে ১০৩ কেজিতে পৌছেঁছে। সামনের দিনে তা আরো বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে।

কিন্তু আমাদের সেদিকে কোনো খেয়াল নেই। খাবারের চাহিদা বেড়েছে। চালের চাহিদা ভবিষ্যতে কতটুকু বাড়বে, তার কোনো পূর্বাভাস নিয়ে কাজ করছে না কোনো মন্ত্রণালয়। ফলে কোনো পরিকল্পনা ছাড়াই প্রতি বছর শুধু ধানের উৎপাদন বৃদ্ধির দিকে নজর কৃষি বিভাগের। বিশ্লেষকদের মতে, চাহিদার সঙ্গে উৎপাদনের যোগসূত্র রয়েছে। এ দুটির মধ্যে ভারসাম্য রাখতে পারলে শুধু জনগণই নয়, কৃষকরাও লাভবান হবে।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/তালেব

 

Wordbridge School
Link copied!