• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বদরুলের দম্ভোক্তি: ‘আমার কিছুই হবে না’


সিলেট প্রতিনিধি মার্চ ৮, ২০১৭, ০৩:২৮ পিএম
বদরুলের দম্ভোক্তি: ‘আমার কিছুই হবে না’

সিলেট: খাদিজা আক্তার নার্গিসকে হত্যাচেষ্টা মামলায় ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত নেতা বদরুল আলমকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। রায় ঘোষণার পর কারাগারে নেয়ার সময় এর প্রতিক্রিয়ায় আদালত চত্বরে দাঁড়য়ে বদরুল বলেন, ‘এই রায়ে আমার কিছুই হবে না।’ এ সময় তিনি জয় বাংলা স্লোগান দিতে থাকেন।

মঙ্গলবার দুপুর ১১টা ৩০ মিনিট থেকে ১২টা পর্যন্ত টানা আধাঘণ্টা সময় ধরে সিলেটের মহানগর দায়রা জজ মো. আকবর হোসেন মৃধা ৩০ পৃষ্ঠার দীর্ঘ রায় পড়ে শোনান। এসময় তিনি মামলার মোট ৩৭ সাক্ষীর মধ্যে ৩৪ জনই দ্রুত সময়ের মধ্যে সঠিকভাবে সাক্ষ্য দিয়ে বিচারিককাজে সহায়তা করায় সাক্ষীদের ধন্যবাদ জানান।

এদিকে, আদালতে আলোচিত এই মামলার রায় শুনতে সকাল থেকে আদালত চত্বরে কয়েক শতাধিক সাধারণ মানুষ জড়ো হন। রায় ঘোষণার পর তারা সন্তোষ প্রকাশ করে উচ্চ আদালতেও এই রায় বহাল থাকবে বলে আশা প্রকাশ করেন।

আলোচিত এই ঘটনার পাঁচ মাস পাঁচ দিনের মাথায় বিচার কার্যক্রম শেষে আদালত থেকে এই রায় এলো। রায় ঘোষণার সময় আদালতের কাঠগড়ায় আসামি বদরুল উপস্থিত ছিলেন।

গত বছরের ৩ অক্টোবর এমসি কলেজ ক্যাম্পাসে চাপাতি দিয়ে খাদিজাকে উপুর্যপুরি কুপিয়ে গুরুতর আহত করেন সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার মনিরজ্ঞাতি গ্রামের বাসিন্দা বখাটে বদরুল।

এদিকে রায়ের প্রতিক্রিয়ায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মহানগর ও দায়রা জজ আদালতের পিপি অ্যাডভোকেট মফুর আলী সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, আন্তর্জাতিক নারী দিবসে এ রায় নারীদের অধিকার ও সুরক্ষায় ভূমিকা রাখবে।

তবে আসামি বদরুলের আইনজীবী মো. সাজ্জাদুর রহমান চৌধুরী বলেন, এই রায়ের মাধ্যমে আমার মক্কেল ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। আমরা রায়ের নকল তোলার পরপরই উচ্চ আদালতে আপিল করবো।

মামলার বাদী খাদিজার চাচা আবদুল কুদ্দুস রায়ের সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, এই রায়ে আমরা খুশি। তিনি প্রধানমন্ত্রীসহ দেশবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, এই রায় যেন উচ্চ আদালতে বহাল থাকে। রায় বহাল থাকলে নারীর সুরক্ষা নিশ্চিত হবে এবং নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধ হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

রায়ের পর্যবেক্ষণে মহানগর দায়রা জজ মো. আকবর হোসেন মৃধা বলেন, আসামি পক্ষ যুক্তিতর্ক শুনানিকালে দাবি করেছিল খাদিজার সঙ্গে আসামি বদরুলের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। কিন্তু সাক্ষ্যপ্রমাণে তারা প্রেমের বিষয়টি প্রমাণ করতে পারেননি। এছাড়া প্রেমে প্রত্যাখাত হলে এরকম নিষ্ঠুর, নির্মম ও নৃসংশভাবে হত্যার উদ্দেশে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে আহত করা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না।

খাদিজার ওপর হামলার ভয়াবহতা বুঝাতে মামলার ৩৩ নম্বর সাক্ষী স্কয়ার হাসপাতালের নিউরো সার্জারি বিভাগের চিকিৎসক রেজউস সাত্তারের সাক্ষ্যের ব্যাখা দিয়ে আদালত বলেন, আসামি খাদিজার শরীরের ১০টি স্থানে ধারালো অস্ত্র দিযে মারাত্মক জখম করেছেন। এর মধ্যে তার মাথার ডান পাশের খুলির একটি অংশ ভাঙা পান চিকিৎসকরা। পরে তারা একাধিক অপারেশনের মাধ্যমে মাথার খুলির ওই অংশ প্রতিস্থাপন করেছেন।

আদালত রায়ে বলেন, এই ঘৃণিত অপরাধের জন্য দণ্ডবিধির ৩২৬ ধারায় আসামি বদরুলের সর্বোচ্চ সাজাই প্রাপ্য। তাই তাকে এই আইনে সর্বোচ্চ সাজা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হলো।

আদালত বলেন, মামলার অপর দুই ধারা ৩২৪ ও ৩০৭ ধারায় যেহেতু সাজার মেয়াদ কম তাই এই ধারাগুলোয় অপরাধ প্রমাণ হওয়ার পর তাকে আর সাজা দেয়ার প্রয়োজন নেই।

পর্যবেক্ষণে বিচারক আরও বলেন, আজ আন্তর্জাতিক নারী দিবস। এই দিবসেই সবার সংকল্প করা উচিত, নারীরাও সমাজের উন্নয়নে অর্ধেক ভূমিকা রাখছেন। তাই তাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা সরকার, আইনশৃঙ্খলাবাহিনীসহ সবার দায়িত্ব। যেভাবেই হোক নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমএইউ

Wordbridge School
Link copied!