• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

বদলে যাচ্ছে দেশের অর্থনীতির আদল


অর্থনৈতিক রিপোর্ট জানুয়ারি ২৭, ২০১৮, ০১:০৫ পিএম
বদলে যাচ্ছে দেশের অর্থনীতির আদল

ঢাকা : বদলে যাচ্ছে বাংলাদেশের অর্থনীতির মৌলিক কাঠামো। স্বাধীনতার ৪৬ বছরে অর্থনীতির চালিকাশক্তির পরিবর্তন এসেছে, ঘটেছে সেবা খাতের বিকাশ। কৃষিনির্ভর আদল বদলে রূপান্তরিত হচ্ছে শিল্প ও সেবা খাতভিত্তিক।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য বলছে, স্বাধীনতার সময় জিডিপিতে কৃষির অবদান ছিল প্রায় ৫৯ শতাংশ, আর শিল্পের ৬ থেকে ৭ শতাংশ। বর্তমান জিডিপিতে শিল্প খাতের অবদান ৩১ শতাংশের ওপরে। জিডিপির প্রধান (রিয়েল সেক্টর) তিনটি খাতের মধ্যে কৃষির ভূমিকা তৃতীয় স্থানে। শীর্ষে সেবা। পূর্ব পাকিস্তানে (বর্তমান বাংলাদেশ) জিডিপিতে শিল্পের অবদান ছিল ২০ শতাংশের বেশি।

বিবিএসের সর্বশেষ তথ্য মতে, বাংলাদেশের জনসংখ্যা এখন ১৬ কোটি ১৭ লাখ। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে দেশে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭ দশমিক ২৮ শতাংশ।
বাংলাদেশের অর্থনীতির ইতিহাসে এই প্রথম এত উচ্চমাত্রায় প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব হলো, যা ছিল নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি। তবে স্বাধীনতার পর ২৫ বছর পর্যন্ত জিডিপির প্রবৃদ্ধি সাড়ে ৪ শতাংশের বেশি বাড়েনি। এর মধ্যে ১৯৭৩-৭৪ থেকে ১৯৭৯-৮০ সময়ে বৃদ্ধির হার ছিল গড়ে মাত্র ৩ দশমিক ৮ শতাংশ। পরের ১০ বছর বেড়েছে প্রায় ৫ শতাংশ হারে। এরপর থেকে প্রবৃদ্ধি ছাড়িয়েছে ৬ শতাংশ। বর্তমানে জিডিপির আকার ২৪ হাজার ৯৬৮ কোটি ডলার। আর জিডিপির আকার ১০ হাজার কোটি ডলার ছাড়াতে ৩৪ বছর লেগেছে।

উন্নতি হয়েছে মাথাপিছু আয়েও। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশে বার্ষিক মাথাপিছু আয় ছিল মাত্র ৬৭১ টাকা। বর্তমানে তা ১ লাখ ২৮ হাজার ৮০০ টাকা বা ১ হাজার ৬১০ মার্কিন ডলার।

যুদ্ধপরবর্তী দেশে বস্ত্র-কাপড়ের সঙ্কট ছিল। সেই দেশ তৈরি পোশাক রফতানি করে এখন আয় করছে ২৫ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশ এখন তৈরি পোশাক বাণিজ্যে বিশ্বে দ্বিতীয় অবস্থানে।

অর্থনৈতিক চরিত্রে কৃষিপ্রধান বলা হলেও বাংলাদেশ এখন আর কৃষিনির্ভর নয়। কৃষিতে উৎপাদন বেড়েছে, বেড়েছে প্রযুক্তির ব্যবহারও। কিন্তু বাণিজ্য ও সেবা খাতের ওপর ক্রমান্বয়ে নির্ভরতা বাড়ছে বাংলাদেশের অর্থনীতির। সোনালি আঁশের সেই সুদিন আর নেই।

বিবিএস সূত্র মতে, দেশের মোট জনসংখ্যার শতকরা প্রায় ৭৫ ভাগ এখনো গ্রামে বসবাস করে। গ্রামীণ জনগণের প্রায় ৬০ শতাংশ এখনো কৃষিকাজে জড়িত। অন্যদিকে শহরেও শতকরা প্রায় ১১ ভাগ মানুষ সরাসরি কৃষির সঙ্গে যুক্ত। বর্তমানে মোট জিডিপিতে কৃষি খাতের অবদান নেমে এসেছে ১৫ দশমিক ৩৩ ভাগে।

পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) সর্বশেষ প্রতিবেদনও বলছে, বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান অর্থনীতি থেকে একটি শিল্প-সেবা খাতভিত্তিক অর্থনীতির দেশে পরিণত হচ্ছে।

১৯৮৬-৮৭ অর্থবছরে দেশের জিডিপির আকার ছিল ৮ হাজার ৮২৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে কৃষির অবদান ছিল ৪৫ শতাংশ। শিল্প খাতের অবদান ছিল ১০ শতাংশ। বাকি অংশ এসেছিল সেবা থেকে। সেবা খাতের আওতায় পরিবহন ও যোগাযোগ, বাণিজ্য, আবাসন, ব্যাংকিং, বীমা ও অন্যান্য সেবা-সংশ্লিষ্ট খাতকে বোঝায়।

১৯৯৬-৯৭ অর্থবছরে জিডিপির মোট আকার দাঁড়ায় ৬৮ হাজার ২০ কোটি টাকায়। তাতে কৃষির অবদান ছিল ৩২ দশমিক ৪১ শতাংশ, শিল্প খাতের ১১ দশমিক ৩৪ ও সেবা খাতের ৩৪ শতাংশ।

২০০৫-০৬ অর্থবছরে জিডিপিতে কৃষির অবদান ছিল ২১ দশমিক ৮ শতাংশ। ২০০৮-০৯ অর্থবছর থেকে ২০১২-১৩ সময়ে কৃষির অবদান দ্রুত কমতে থাকে। ২০১২-১৩ অর্থবছরে এসে এর পরিমাণ দাঁড়ায় ১৮ দশমিক ৭ শতাংশে। সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশের জিডিপিতে সেবা খাতের অবদান ৫৩ দশমিক ৩৯, শিল্প খাতের ৩১ দশমিক ২৮ ও কৃষি খাতের ১৫ দশমিক ৩৩ শতাংশ।

১৯৭২-৭৩ সালে বাংলাদেশের রফতানি আয় ছিল মাত্র ৩৪ কোটি ৮৩ লাখ ৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, যার ৯০ শতাংশ তখন আসে পাট ও পাটজাত পণ্য রফতানি করে। আশির দশকে এই ধারার পরিবর্তন শুরু হয়। তবে দেশের কৃষিপণ্য বলতে এখন শুধু ধান, গম, ভুট্টা, চা, পাট, তুলা, আখ, আলু, ডাল, তৈলবীজ, সবজি, ফল, মশলা, ফুল ও রেশমগুটি বুঝায় না। এর বাইরে মাছ, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগি পালনকেও গণ্য করা হয়। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কৃষির আনুপাতিক অবদান কমলেও মোট কৃষি উৎপাদন বাড়ছে। কৃষিতে উন্নত প্রযুক্তি, বীজ, সার ও যন্ত্রের ব্যবহার উৎপাদন বাড়ার প্রধান কারণ।

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) মহাপরিচালক এবং অর্থনীতিবিদ ড. কেএএস মুর্শিদ বাংলাদেশের খরবকে বলেন, বাংলাদেশ কৃষি থেকে শিল্প ও সেবা খাতনির্ভর দেশে রূপান্তরিত হচ্ছে। এর ফলে অর্থনীতির আদল বদলে যাচ্ছে। তবে মনে রাখতে হবে, কৃষি এখনো বড় কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র। শিল্প খাতেও কর্মসংস্থান বেড়েছে। তবে বাণিজ্য ও সেবা খাত দ্রুত প্রসারিত হলেও খুব বেশি কর্মসংস্থান হয়নি, যা অর্থনীতিকে কিছুটা দুর্বল করতে পারে। দেশে কৃষির প্রচুর সম্ভাবনা রয়ে গেছে। সে সম্ভাবনা ব্যবহার করা প্রয়োজন। কৃষির আরো আধুনিকায়ন দরকার।

ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দীন এ প্রতিবেদককে বলেন, স্বাধীনতার পর আমাদের শিল্প ও বাণিজ্যের ব্যাপক প্রসার ঘটেছে। আমরা আমাদের স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তিতে পোশাক রফতানি করে ৫০ বিলিয়ন ডলার আয় করতে চাই। এ থেকে বোঝা যায় আমরা কোথায় এসেছি গত ৫ দশকে। আরো এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ।

সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) সদস্য ড. শামসুল আলম বলেন, চলমান সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা অনুযায়ী অবশ্যই শিল্পের দিকে ঝুঁকতে হয়েছে। তার মানে এই নয় কৃষিকে অবহেলা করা হয়েছে। কিন্তু শিল্প এগিয়েছে দ্রুত, যা কৃষির পক্ষে সম্ভব নয়। তবে কৃষির বহুমুখীকরণের ওপর জোর দিতে হবে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!