• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বদলে যাচ্ছে বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া


নিজস্ব প্রতিবেদক মার্চ ২৪, ২০১৬, ০১:১৬ পিএম
বদলে যাচ্ছে বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া

বিশেষ প্রতিনিধি

বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগের পুরো প্রক্রিয়া এখন থেকে বদলে যাচ্ছে। এতদিন ধরে গতানুগতিক ধারায় শিক্ষকরা আবেদন করতেন সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে; পরিচালনা কমিটি তাদের নিয়োগ দিত। নতুন ব্যবস্থায় শিক্ষকরা অনলাইনে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) বরাবর আবেদন করবেন। নিয়োগ পরীক্ষায় ঘোষিত ফলের মেধা তালিকার ভিত্তিতে এনটিআরসিএ কর্তৃপক্ষই শিক্ষক নিয়োগ দেবে। সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচালনা কমিটি কেবল নিয়োগপত্র ইস্যু করবে। তাই এখন থেকে কেন্দ্রীয়ভাবে নিবন্ধন করে প্রিলিমিনারি, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে মেধাক্রম তৈরি করার দায়িত্ব পালন করবে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ)। তিন স্তরের পরীক্ষার ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা মেধাক্রম মেনেই শিক্ষকদের নিয়োগ দেয়া হবে। কাজটি সরকারি কর্মকমিশনের বিসিএস পরীক্ষা পরিচালনার মতো।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানা যায়, সর্বশেষ নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের ফলের ভিত্তিতে মেধা তালিকা ইতোমধ্যে প্রস্তুত করেছে এনটিআরসিএ। এখন শিক্ষকরা অনলাইনে আবেদন করলে তাদের নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হবে। আবেদনের পর চাহিদা ও মেধাক্রম অনুযায়ী এনটিআরসিএ থেকে প্রতিটি পদের বিপরীতে একজন করে প্রার্থীর নাম সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠানো হবে। এরপর এক মাসের মধ্যে নিয়োগপত্র জারি করবে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটি বা গভর্নিং বডি। সারাদেশে প্রায় ১৯ হাজার বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, সাড়ে তিন হাজার কলেজ ও সাড়ে নয় হাজার মাদ্রাসা রয়েছে। গত ডিসেম্বর এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগের নতুন নিয়ম জারি করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এজন্য সংশোধন করা হয়েছে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন বিধিমালা, ২০০৬-এর। শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, উপজেলা ও জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাদের মাধ্যমে এরই মধ্যে সারাদেশে শূন্য পদে তালিকা প্রণয়ন করা হয়েছে। এই শূন্য পদের ভিত্তিতে এনটিআরসিএর ওয়েবসাইট www.ntrca.gov.bd-এ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রচার করা হয়েছে।

এনটিআরসিএ সূত্রে জানা গেছে, পরীক্ষা হবে প্রাথমিক বাছাই (প্রিলিমিনারি), লিখিত ও মৌখিক-এই তিন দফায়। লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় আলাদাভাবে কমপক্ষে ৪০ শতাংশ নম্বর না পেলে কোনো প্রার্থী মেধাতালিকায় অন্তর্ভুক্ত হবেন না। পরীক্ষার ১৫ দিনের মধ্যে প্রকাশ করা হবে প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ফল। তবে অনিবার্য কারণে এই সময় পাঁচ দিন বাড়ানো যাবে। লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হবে পরীক্ষা নেয়ার ৩০ দিনের মধ্যে। এখানে আরো ১৫ দিন সময় বাড়ানোর সুযোগ রাখা হয়েছে। মৌখিক পরীক্ষার ফল ১৫ দিনের মধ্যে প্রকাশ করা হবে।

সূত্র আরও জানায়, শিক্ষক নিয়োগে আরও স্বচ্ছতা আনতে এবং মেধাবীদের নিয়োগ দেয়ার জন্য জাতীয় শিক্ষানীতি ও খসড়া শিক্ষা আইনানুযায়ী নতুন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ জন্য আইন ও বিধিমালায় প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে এনটিআরসিএর নাম পরিবর্তন করে বেসরকারি শিক্ষক নির্বাচন কমিশন (এনটিএসসি) করা হতে পারে।

লোকবল নিয়োগের এই পদ্ধতি চলে আসা বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগে গতানুগতিক পদ্ধতির তুলনায় অনেক বেশি নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। কেননা বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষক ও অন্যান্য লোকবল নিয়োগের ক্ষেত্রে সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ বা তত্ত্বাবধান নেই। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর নিজস্ব পরিচালনা কমিটিই এ কাজটি করে আসছে, যে কমিটিতে সাধারণত থাকেন স্থানীয় সাংসদ বা তাঁর প্রতিনিধি, পৌরসভার মেয়র কিংবা উপজেলা চেয়ারম্যানসহ অন্যরা। শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে এই কমিটির ক্ষমতাই একচ্ছত্র এবং নিয়োগ-প্রক্রিয়ায় নিয়োগপ্রার্থীদের মেধার চেয়ে বেশি গুরুত্ব পায় অন্যান্য বিষয়: অর্থ, প্রভাব-প্রতিপত্তি, রাজনৈতিক আনুগত্য। স্বজনপ্রীতি ও ‘ডোনেশন’-এর নামে মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে শিক্ষক নিয়োগের অভিযোগ বিস্তর। এখন কেন্দ্রীয়ভাবে পরীক্ষা নিয়ে নিয়োগপদ্ধতি চালু হলে অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির সুযোগ বন্ধ হবে বলে মতামত পাওয়া গেছে।

সোনালীনিউজ/এমএইউ

Wordbridge School
Link copied!