• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

‘বন্ধুত্ব’ নিয়ে যত সিনেমা


বাবুল হৃদয় আগস্ট ৬, ২০১৭, ০২:৩৫ পিএম
‘বন্ধুত্ব’ নিয়ে যত সিনেমা

ঢাকা: ‘একটাই কথা আছে বাংলাতে, মুখ আর বুক বলে একসাথে, সে হল বন্ধু বন্ধু আমার...’। অবিস্মরণীয় এই গানটি মনে করিয়ে দিচ্ছে বন্ধু দিসের কথা। রোববার (৬ আগস্ট) বিশ্ব বন্ধু দিবস। নানা আয়োজনের মধ্যদিয়ে বাংলাদেশেও পালিত হচ্ছে ‘বিশ্ব বন্ধু দিবস’। বন্ধুত্বের জন্য যদিও আলাদা কোনো দিনের প্রয়োজন হয় না। বিশ্ব বন্ধু দিবস একটি সাংস্কৃতিক কৃষ্টি ও আনন্দঘন দিবস হিসেবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে উদযাপিত হচ্ছে। বন্ধুত্ব নিয়ে দেশে নির্মিত হয়েছে অনেক নাটক ও সিনেমা।

জেনে নিন 'বন্ধুত্ব' নিয়ে কয়েকটি সিনেমার কথা-

১. দীপু নাম্বার টু (১৯৯৬): স্বনামধন্য লেখক মুহম্মদ জাফর ইকবাল এর কিশোর উপন্যাস অবলম্বনে প্রখ্যাত নির্মাতা মোরশেদুল ইসলামের জনপ্রিয় সিনেমা ‘দীপু নাম্বার টু’। মধ্যবিত্ত শিক্ষিত পরিবারের সন্তান দীপু। মা-বাবার বিচ্ছেদ ঘটেছে,থাকে বাবার সঙ্গে। বাবার খেয়ালি মন আর চাকরির কল্যানে প্রায়শই তাকে জায়গা পরিবর্তন করতে হয়। সাথে সাথে পরিবর্তিত হতে থাকে তার স্কুল, যদিও ব্যাপারটা মোটেই পছন্দ না দীপুর।

এইভাবেই নতুন স্কুলে দীপুর সাথে পরিচয় হয় তারিকের, মারামারি আর অকারণ ঝগড়া করা যার স্বভাবজাত। কিন্তু ঘটনাচক্রে দীপু আর তারিক একসময় হয়ে উঠে ঘনিষ্ঠ বন্ধু। যে বন্ধুত্বের কল্যানে এই জুটি পরাজিত করে দেশদ্রোহী এক ডাকাত দলকেও। দীপু চরিত্রে সেরা শিশু শিল্পী হিসেবে অরুণ সাহা ও সহ অভিনেতা হিসেবে বুলবুল আহমেদ জাতীয় পুরস্কার পান। বাংলা চলচ্চিত্রে বন্ধুত্ব নিয়ে সিনেমার কথা উঠলেই তালিকায় এই ছবিটিই সবার আগে আসে।

২.দারুচিনি দ্বীপ (২০০৭): একদল স্বপ্নবাজ তরুন তরুনীর বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক, ভালোবাসার পাশাপাশি সহজ-সরল পারিবারিক জীবনের নানা ঘটনা উঠে এসেছে এর গল্পে। যে পরিবারগুলো আমাদের পরিচিত পরিবারগুলোর মতই। তারুন্যে পৌছে যাওয়া সন্তানেরা এই গল্পে গুরুত্ব পেয়েছে বেশি।একদিন তারা সিদ্ধান্ত নেয় দারুচিনি দ্বীপে বেড়াতে যাবে। তাদের দারুচিনি দ্বীপে যাওয়া নিয়েই শুরু হয় নানা ঘটনা। কিংবদন্তি লেখক ও চলচ্চিত্রকার হুমায়ূন আহমেদের জনপ্রিয় উপন্যাস অবলম্বনে তৌকির আহমেদ নির্মান করেন ‘দারুচিনি দ্বীপ’।

গল্পে তারুণ্যের জয়গান,ভালোবাসা,পারিবারিক সম্পর্কের টানাপোড়নের মাঝে শুভ্র, জরী, অয়ন, আনুশকা, সঞ্জু্দের মাঝে আরেকটা দিক ফুটে উঠেছে সেটা হচ্ছে বন্ধুত্ব। রিয়াজ, মম, মোশাররফ করিম, বিন্দু, আবুল হায়াত, ইমন, মুনমুন সহ অনেক তারকাসমৃদ্ধ এই ছবিটি গত দশকের অন্যতম জনপ্রিয় সিনেমা, পাশাপাশি জুরি বোর্ডের রায়ে সেরা চলচ্চিত্র সহ মোট ৮ টি জাতীয় পুরস্কার অর্জন করে।কাহিনী ও চিত্রনাট্যের জন্য হুমায়ূন আহমেদ,সংগীতে এস আই টুটুল, নৃত্য পরিচালনায় কবিরুল ইসলাম রতন, প্রধান দুই চরিত্র শুভ্র ও জরী চরিত্রে অভিনয় করে রিয়াজ ও মম  এবং সহ-অভিনেতা হিসেবে আবুল হায়াত জাতীয় পুরস্কারে ভূষিত হন।

৩.ব্যাচেলর (২০০৪): একদল অবিবাহিত শহুরে বন্ধুদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রার আবেগি টানাপোড়নের গল্প ‘ব্যাচেলর’। ভালোবাসায় বিশ্বাস নেই সাথীর, কিন্তু ফাহিম আর রুমেলের সঙ্গে রয়েছে তার বেশ সখ্যতা। এক পর্যায়ে সাথীকে নিয়ে মানবিক দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ে দুই বন্ধু। এদিকে চল্লিশোর্ধ হাসান প্রেমে পড়ে যায় অল্পবয়সী শায়লার,কিন্তু কিছুতেই আর তার লুকানো অনুভূতিটা প্রকাশ করা হয়ে ওঠেনা। আবরার সাহেব ইতোমধ্যে পার করেছেন জীবনের ৫০ টি বছর কিন্তু এখন খুঁজে পাননি তার কাঙ্ক্ষিত ভালোবাসার মানুষটাকে। বয়স থামাতে পারেনি তার এই অনুসন্ধান যাত্রাকে।

অন্যদিকে মুরাদ চাকরি খোঁজায় ব্যর্থ হয়ে বড়লোক বাবার মেয়েকে বিয়ের স্বপ্নে মশগুল, মারজুক প্রেমে ছ্যাঁকা খেয়েছে। জটিল এই সম্পর্কগুলোর কোন কোনটি পায় সফল সমাপ্তি, কেউবা আবার ঘুরতেই থাকে সম্পর্কের বৃত্তে। কথাসাহিত্যিক আনিসুল হকের গল্প নিয়ে জনপ্রিয় পরিচালক মোস্তফা সারোয়ার ফারুকীর পরিচালনায় ‘ব্যাচেলর’ হয়ে উঠেছিল মধ্যবিত্ত শহুরে বন্ধুত্বের প্রতীক। অভিনয়ে ছিলেন ফেরদৌস,অপি করিম,হুমায়ূন ফরিদী,হাসান মাসুদ,শাবনূর,আহমেদ রুবেল, মারজুক রাসেলসহ আরো অনেকে। ছবিতে সেরা অভিনেত্রী হিসেবে জাতীয় পুরস্কার পান অপি করিম।

৪.পুরস্কার (১৯৮৩): সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হকের গল্পে কিশোর অপরাধ নিয়ে প্রথম চলচ্চিত্র 'পুরস্কার'।সিবি জামানের পরিচালনায় ছবিতে ফুটে উঠে অপরাধে অভিযুক্ত কিশোরদের জীবনযাপন,তাদের মধ্যে বন্ধুতার গল্প।বুলবুল আহমেদ,জয়শ্রী কবির, সুমন সাহা, শাকিল অভিনীত এই ছবিটি সেরা চলচ্চিত্র সহ মোট ৫ টি জাতীয় পুরস্কার লাভ করে।সৈয়দ শামসুল হক চিত্রনাট্য ও সংলাপের জন্য, সহ-অভিনেতা হিসেবে শাকিল জাতীয় পুরস্কার অর্জন করেন।

৫.আমার বন্ধু রাশেদ (২০১১): ছোট্ট মফস্বল শহরের এক স্কুলে এলো নতুন এক ছাত্র, নাম রাশেদ। তখন দেশ উত্তাল। মুক্তিযুদ্ধ চলছে দেশে। কিন্তু ছোট্ট স্কুল ছাত্ররা কেউ জানে না মুক্তিযুদ্ধ কি জিনিস। সাহসী রাশেদ বোঝালো তাদের। এক সময় রাশেদ আর তার বন্ধুরা মিলে উদ্ধার করলো বন্দী এক মুক্তিযোদ্ধাকে।

এরপর রাশেদ মুক্তিযুদ্ধে জড়িয়ে গেলো আরো বেশি, এক সময় রাজাকারের গুলিতে শহীদ হয় রাশেদ। দেশ স্বাধীন হবার অনেক বছর পর বন্ধু ইবু তাঁর ছেলেকে ঘুরতে আসে কিশোরবেলার স্মৃতিমাখা সেই স্থানে,আর মনে পড়ে রাশেদকে। এমনই এক কাহিনী নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের প্রথম শিশুতোষ চলচ্চিত্র ‘আমার বন্ধু রাশেদ'। মুক্তিযুদ্ধের পাশাপাশি গল্পে ফুটে উঠেছিল কয়েকদল কিশোরের বন্ধুত্বের গল্প।জনপ্রিয় লেখক মুহম্মদ জাফর ইকবালের 'My Friend Rashed' অবলম্বনে ছবিটি নির্মান করেন মোরশেদুল ইসলাম।রাশেদের ভূমিকায় অভিনয় করেছিল আফনান,এছাড়া আরো ছিলেন রাইসুল ইসলাম আসাদ,গাজী রাকায়েত,আরমান পারভেজ মুরাদ, হোমায়ারা হিমু সহ আরো অনেকে।কাহিনীকার হিসেবে মুহম্মদ জাফর ইকবাল জাতীয় পুরস্কারে ভূষিত হন, ছবিটি মোট ৩টি শাখায় পুরস্কার লাভ করে।

৬.জাগো (২০১০): দুইটি দেশের দুইটি স্থানীয় দল কুমিল্লা একাদশ ও ত্রিপুরা একাদশের মাঝে ফুটবল খেলার আয়োজন করা হয়, কোনোবারেই জিততে পারে না কুমিল্লা একাদশ।এইবার বেশ সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে,কারন দলে আছে মেধাবী খেলোয়াড় শামীম,ওর চেষ্টায় কোচ হিসেবে যোগ দিয়েছে স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের এক অভিজ্ঞ সদস্য।কিন্তু হঠাৎ দুর্ঘটনায় খেলা অসম্ভব হয়ে পড়ে শামীমের,তাচ্ছিল্য করে ত্রিপুরা একাদশে।আর ঠিক তখনই নিজেদের অস্তিত্বের চ্যালেঞ্জ নিতে এগিয়ে আসে এক তরুন দল,যাদের মধ্যে রয়েছে বন্ধুত্বের বন্ধন।এমনই এক গল্প নিয়ে খিজির হায়াত খান নির্মাণ করেন ‘জাগো’।ফেরদৌস, তারিক আনাম খান,রওনক হাসান,বিন্দু,আরেফিন শুভ,নাঈম অভিনীত এই ছবিটি বাংলাদেশে খেলাকেন্দ্রিক প্রথম ছবি।

এছাড়া বাংলা চলচ্চিত্রে বন্ধুত্ব নিয়ে আরো বেশকিছু চলচ্চিত্র আছে,যা পেয়েছিল বাণিজ্যিক সফলতা,তার মধ্যে দোস্ত দুশমন, বন্ধু আমার, অভিযান, ভাইবন্ধু, নারীর মন, মেঘের কোলে রোদ, অন্যতম।

সোনালীনিউজ/বিএইচ

Wordbridge School
Link copied!