• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বন্যার শঙ্কা : বাঁধে আশ্রয় নিতে শুরু করেছে চরাঞ্চলবাসি


হৃদয় আজিজ, বগুড়া জুলাই ১৮, ২০১৮, ০৩:২৩ পিএম
বন্যার শঙ্কা : বাঁধে আশ্রয় নিতে শুরু করেছে চরাঞ্চলবাসি

বগুড়া : জুলাইয়ের ২৩ তারিখ থেকে যমুনা নদীর বগুড়া অংশে পানি বাড়তে পারে এমন খবরে বাঁধে এসে অশ্রয় নিয়েছে নদীর চর ও বাঁধের পূর্বঅংশে বসবাসকারী মানুষ। পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, জুলাইয়ের ২৩ তারিখ থেকে যমুনার বগুড়া অংশে পানি বাড়তে পারে। তবে বিপদ সীমা (১৬ দশমিক ৭০) অতিক্রম করবে না। এক পর্যায়ে পানি কমতে থাকবে। কিন্তু সেপ্টেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে পানি বেড়ে বিপদ সীমা অতিক্রম করতে পারে।

এদিকে জুলাইয়ের শুরু থেকেই রংপুর অঞ্চল ও সিলেটে বন্যা হওয়ার সময় বগুড়ার সারিয়াকান্দি, ধনুট ও সোনাতলায় কিছুটা প্রভাব ফেলে। এতে যমুনার তীরে থাকা ঘর বাড়িতে পানি ঢুকে পড়ে। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বগুড়ার নির্বাহী প্রোকৌশলী হাসান মাহমুদ জানান, ‘গত ৯ জুলাই যমুনা নদীর সারিয়াকান্দি অংশে বিপদসীমা ছুঁইছুঁই অবস্থা (১৬ দশমিক ৬০) ছিল।’

এ সময় যমুনার চর ও বাঁধের পূর্ব অংশে বাসবাসকারী মানুষ বাঁধের ওপর এসে আশ্রয় নেয়। এ পানি বেশিদিন স্থায়ী না হওয়ায় খাদ্য সংকট দেখা দেয়নি। তবে বিশুদ্ধ পানি ও স্যানিটেশনের সংকট দেখা দিয়েছে। এ বিষয়ে জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা শাহারুল ইসলাম আবু হেনা বলেন, ‘এ মাসের (জুলাই) শুরু থেকে নদীতে যে পরিমান পানি বেড়েছে এটাকে বন্যা বলা যায় না। তবে যাদের বাড়ি বাঁধের পূর্ব অংশে সেসব ঘরে পানি ঢুকেছে। তারা বাঁধে এসে আশ্রয় নিয়েছে। এরা প্রকৃতির সঙ্গে লড়াই করে অভ্যাস্ত। এখনো এদের জন্য কোনো বরাদ্দ নেই। তবে বড় কোনো দুর্যোগ এলে আমাদের প্রস্তুতি আছে।’

সারিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাবিহা সুলতানা বলেন, ‘যমুনা নদীর পানি বাড়ার কারণে কিছু লোক বাঁধে আশ্রয় নিয়েছে। আবার কিছু লোক এখনো তাদের ঘরে আছে।’

উপজেলার নিম্নাঞ্চল খ্যাত চন্দনবাইশা, কামালপুর, কুতুবপুর এলাকা সরজমিনে দেখা যায়, বাঁধের পূর্ব অংশের বাড়ি ঘর, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কমিনিউটি হাসপাতাল ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান গুলোতে পানি ঢুকতে শুরু করেছে। ওই বাড়ি ঘরের লোকজন বাঁধে এসে আশ্রয় নিয়েছে। তারা বাঁধের দুই পাশে অস্থায়ীভাবে টিন ও খড়ের চালা দিয়ে ঘর বেঁধেছে। আবার কেউ বাঁশের খুটি দিয়ে জায়গা দখল কওে রেখেছে। তাদেরই একজন রহদহ এলাকার মো. আশরাফ, স্ত্রী ও এক মেয়েকে নিয়ে বাঁধে এসে আশ্রয় নিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘প্রতি বছরই এই সময় করে আমাদের ঘরবাড়ি ছেড়ে বাঁধে এসে আশ্রয় নিতে হয়। শুনছি ২০ জুলাইয়ের পর থেকে পানি বাড়তে পারে।’

আশরাফ বলেন, ‘বন্যা হলে আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হয় পানি ও স্যানিটেশনের। যে পরিমান সরকার থেকে সরবরাহ করা হয় তা পর্যাপ্ত নয়। কারণ, দেখা যায় এক এলাকায় একটা বা দুটো দেওয়া হয়। যা প্রায় এক দেড়শ মানুষ ব্যবহার করে।’

চন্দনবাইশা ইউনিয়নের রহদহ গহীন বাঁধ এলাকায় দেখা হয় চাষী শহিদুল হকের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এটা যে বন্যা হয়েছে তা গত বারের মত নয়। তারপরও আমাদের ঘর বাড়ি ছাড়তে হয়েছে। গো-খাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে।’

এ বিষয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা বলেন, ‘পানি স্যানিটেশন, মানুষ ও গবাদি পশুর স্বাস্থ্য সেবা আমাদের অফিসের অধীনে নয়। তারপরও যেহেতু আমাদের স্বমন্বয় করতে হয়, তাই আমি বলতে পারি যা থাকে তা পর্যাপ্ত থাকে।’

তাহলে কী বণ্টনে কোনো দুর্নীতি হয়? জানতে চাইলে এই কর্মকর্তা বলেন, ‘না, আমরা স্থানীয় জনপ্রতিনিধির (এমপি) মাধ্যমে বণ্টন করে থাকি। আর এই তালিকা করে উপজেলা প্রশাসন।’

বন্যার প্রস্তুতি সম্পর্কে জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা শাহারুল ইসলাম আবু হেনা বলেন, ‘আমরা দুই ভাবে বন্যার প্রস্তুতি নিয়ে থাকি। এক. বন্যার পূর্ব প্রস্তুতি দুই. বন্যার পরবর্তী প্রস্তুতি।’ বিস্তারিত বর্ণনা দিয়ে এই কর্মকর্তা বলেন, ‘বন্যার পূর্বে আমরা জনসচেতনতা সৃষ্টির কাজ করা, খাদ্য সংগ্রহ, পরিকল্পনা, প্রয়োজনীয় ওষুধ সংগ্রহ, বাঁধ সংস্কার। আর পরিবর্তীতে তথ্য সংগ্রহ, পূনর্বাসনের কাজ করা, আবাদি জমি সাবেকি করণে কৃষককে সহযোগিতা করা, স্বাস্থ্য সেবা দেওয়া ইত্যাদি।    

এবারের বন্যা মোকাবেলায় পর্যাপ্ত বরাদ্দ রয়েছে উলে­খ করে এই কর্মকর্তা বলেন, ‘এবার সরকার ২০ লাখ টাকা, ১০০ মেট্রিক টন চাল, দুই হাজার পেকেট সুকনা খাবার (গম, আটা, তেল, চিনি ইত্যাদি) বগুড়ার জন্য বরাদ্দ করেছে।

এদিকে ধনুট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাজিয়া সুলতানা বলেন, ‘ধনুটের বাঁধগুলোতে এখনো কোনো মানুষ আশ্রয় নেয়নি। তবে পাউবো বলেছে ২৫ তারিখের পর নদীতে পানি বাড়তে পারে। এজন্য আমাদের পর্যাপ্ত প্রস্তুতি আছে।’

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরের মহাপরিচালক মো. রিয়াজ আহমেদ জানিয়েছেন, বন্যা মোকাবেলায় ৩০ জেলার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। জেলাগুলোতে শুকনো খাবার পৌঁছে গেছে। আশ্রয় কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত রয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটিগুলোকে মিটিং করে ফলোআপ জানাতে বলা হয়েছে। স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে মেডিকেল টিম গঠন করতে বলা হয়েছে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!