• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বর্ষণে রাজধানী যেন জলাশয়


নিজস্ব প্রতিবেদক মে ২৫, ২০১৮, ০৫:৪৬ পিএম
বর্ষণে রাজধানী যেন জলাশয়

ঢাকা : হালকা থেকে মাঝারি মাত্রার বৃষ্টি। আর তাতেই রাজধানী ঢাকা যেন পরিণত হয় জলাধারে। সড়কে আর বিভিন্ন এলাকায় সৃষ্টি হয়ে যায় একেকটি অস্থায়ী নদী! শুক্রবার (২৫ মে) দুপুর থেকে এমনই চিত্র ছিল ঢাকার।  

আবহাওয়া অফিসের দেওয়া তথ্যানুযায়ী,  গত মঙ্গলবার রাত ১২টা থেকে বুধবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত রাজধানীতে দুই দফায় মোট ৬৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এর মধ্যে শুধু ভোর ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্তই বৃষ্টি হয়েছে ৫২ মিলিমিটার, যা আবহাওয়া দফতরের ইনডেক্সে ভারী মাপের বৃষ্টি।  

এরপর বৃহস্পতিবার (২৪ মে) যদিও কোনো বৃষ্টি ছিল না। আজ শুক্রবার দুপুরের ভারি বর্ষণে রাজধানীর অধিকাংশ এলাকায় সৃষ্টি হয় একেকটা জলাশয়। কোথাও কোথাও পানি হাঁটুর সীমা ছেড়ে ওঠে কোমর পর্যন্ত। বেশ কিছু এলাকায় দীর্ঘক্ষণ পানি না সরায় সড়কের ম্যানহোলের ঢাকনা খুলে দিতে হয়েছে সেবাসংস্থার কর্মীদের।

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয় গ্রিন রোড, শুক্রাবাদ, সোবহানবাগ, ধানমণ্ডি ২৭ নম্বর সড়ক, জিগাতলা, মিরপুর ১, ২, ১০, ১১ নম্বর এলাকা, শেওড়াপাড়া, কাজীপাড়া, আগারগাঁও তালতলা, শাহজাহানপুর, আলাউদ্দিন রোডে। এসব এলাকায় হাঁটুপানি জমে থাকার খবর পাওয়া গেছে।

দীর্ঘ জলজট দেখা যায় গুলিস্তান মোড় থেকে বঙ্গভবন পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে। একই চিত্র ছিল বঙ্গভবনের দক্ষিণ পাশের সড়কেও। মতিঝিল, দিলকুশা, আরামবাগ, শাহজাহানপুর, খিলগাঁও, ফকিরাপুল এলাকায়ও এক থেকে দেড় ফুট পর্যন্ত পানি জমে যায়। জিগাতলার বাসিন্দা মহিন উদ্দিন বলেন, বাসস্ট্যান্ড থেকে জিগাতলা পোস্ট অফিস পর্যন্ত রাস্তায় সামান্য বৃষ্টিতেই জমে হাঁটুপানি। আর একটানা দুই ঘণ্টা বৃষ্টি হলেই তা কোমর পর্যন্ত ওঠে। তখন রিকশায়ও চলাচল করা সম্ভব হয় না। সিটের ওপর পা তুলে বসতে হয়।

গ্রিন রোড এলাকার বাসিন্দা দেলোয়ার হোসেন শিমুল জানান, পান্থপথ মোড় থেকে গ্রিন রোডের পুরো এলাকায় সামান্য বৃষ্টিতেই হাঁটুপানি জমে যায়। এই এলাকার অলিগলিগুলোয়ও একই অবস্থা থাকে। বেশকিছু বাড়ির নিচ তলাও তলিয়ে যায়। প্রতিবেদকদের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, শুক্রবার দুপুরের বৃষ্টিতে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, শনির আখড়া, পোস্তগোলা এলাকায়ও সৃষ্টি হয় দীর্ঘ জলজট।

মহাখালী থেকে বিমানবন্দর সড়কের বেশ কয়েক জায়গায় পানি উঠে যায়। সৈনিক ক্লাব, চেয়ারম্যানবাড়ী হয়ে বনানী-কাকলী মোড় পর্যন্ত দেখা যায় হাঁটুপানি।  

তবে বিশেষ বিশেষ এলাকায় রাস্তার পানি সরাতে তৎপরতা দেখা যায় সেবা সংস্থার কর্মীদের। জলাবদ্ধতার কারণে রাজধানীতে ছিল যানবাহনের সঙ্কট। ফার্মগেট, কারওয়ানবাজার, বাংলামোটর, শাহবাগে শত শত মানুষকে পরিবহনের জন্য দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। তবে বেলা ৩টার পর সঙ্কট চরম আকারে দেখা দেয়।

যাও দু’-একটা বাসের দেখা মিলেছে তাতে ছিল উপচেপড়া ভিড়। মতিঝিলে কথা হয় সিএনজি অটোরিকশাচালক আবদুল লতিফ শেখের সঙ্গে। তিনি জানান, রাস্তায় পানি জমে থাকায় মিরপুর রোডে যাচ্ছে না কোনো সিএনজি।

বেসরকারি ব্যাংক কর্মকর্তা আশিকুর রহমান এমিল বলেন, মতিঝিল থেকে মহাখালী যাওয়ার জন্য দীর্ঘক্ষণ বাসের অপেক্ষায় আছি। কিন্তু বাস যাও পাচ্ছি, তাতে ওঠার উপায় নেই। দীর্ঘক্ষণ ধরে রাইডশেয়ারিংয়ে কল দিচ্ছি, কিন্তু কোনো বাইকার কল ধরছে না। জলাবদ্ধতার ব্যাপারে কথা বলা হলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাহী কর্মকর্তা খান মোহাম্মদ বিলাল বলেন, এ বছর আগাম বৃষ্টির কারণেই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। সমস্যা নিরসনে সমন্বিত বেশকিছু কাজ চলছে। যেগুলো মে মাসের মধ্যেই শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই বৃষ্টি বেড়ে যাওয়ায় কাজে একটু ধীরগতি দেখা দিয়েছে।

তবে আশা করছি জুন মাসের আগেই অধিকাংশ ড্রেনেজ ব্যবস্থার কাজ শেষ হবে। তখন আর জলাবদ্ধতা থাকবে না।

আবহাওয়া অফিসের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, গত বুধবার ভোর ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত রাজধানীতে ৫২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। তবে শনিবার (২৬ মে) নাগাদ বৃষ্টির প্রবণতা কিছুটা কমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।  

দফতরের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ আবদুর রশিদ খোন্দকার জানান, পশ্চিমা লঘুচাপের একটা অংশ বঙ্গোপসাগরের দক্ষিণাংশে অবস্থান করছে। যার ফলে দক্ষিণপূর্ব ও মধ্যাঞ্চলে বৃষ্টির প্রবণতা বেড়ে গেছে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!