• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বর্ষবরণে বৈসাবি


নিজস্ব প্রতিবেদক এপ্রিল ১৩, ২০১৬, ০৯:৩১ এএম
বর্ষবরণে বৈসাবি

সোনালীনিউজ ডেস্ক

উৎসবের প্রথম দিনকে চাকমা ভাষায় বলে ফুল বিজু। এদিনে ঘরবাড়ি ও আঙিনা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয় এবং ফুল দিয়ে সাজানো হয় ও পাহাড়ি ছড়া বা নদীতে ফুল ভাসিয়ে দিয়ে নতুন বছরকে স্বাগত জানানো হয়। চৈত্রের শেষ দিনটিতে থাকে এ উৎসবের মূল আকর্ষণ

দ্বারপ্রান্তে পহেলা বৈশাখ। আনন্দে-উল্লাসে নববর্ষকে বরণ করে নিতে এখন প্রহর গুনছে প্রতিটি বাঙালি। পহেলা বৈশাখে বাংলা নববর্ষের পাশাপাশি উদ্যাপিত হবে পাহাড়ের ঐতিহ্যবাহী ‘বৈসাবি’ উৎসব। বাঙালিদের কাছে পহেলা বৈশাখ শুধুই একটি সামাজিক উৎসব। আর পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর কাছে বৈসাবি হলো প্রধান সামাজিক ও ধর্মীয় উৎসব।

পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলায় বসবাসরত আদিবাসীদের মধ্যে চলে বর্ষবরণের অর্থাৎ বৈসাবি উদযাপনের নানা আয়োজন। সে অঞ্চলের প্রধান তিনটি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর স্বতন্ত্র বর্ষবরণ উৎসব হলো বৈসাবি। এ উৎসবটি চাকমাদের কাছে বিজু, ত্রিপুরাদের কাছে বৈসুক, মারমাদের কাছে সাংগ্রাই, রাখাইনদের কাছে সাংগ্রে, তঞ্চঙ্গ্যাদের কাছে বিষু নামে পরিচিত। প্রধান তিন সম্প্রদায়ের নামের আদ্যাক্ষর নিয়ে এ উৎসবকে বলা হয় ‘বৈসাবি’ উৎসব।

মহা ধুমধামে পাহাড়িরা বৈসাবি উৎসব পালন করে। আর হবে নাই বা কেন, বিষু মানে যে দলবেঁধে ঘুরে বেড়ানো। বিজু মানে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন সৃষ্টি করা, সুখ-দুঃখ ভাগাভাগি করা, সর্বোপরি বিজু মানে হালো মিলনমেলা।

এ উৎসবের রয়েছে নানা দিক। ত্রিপুরা সম্প্রদায় শিবপূজা ও শিবের কাছে ক্ষমা প্রার্থনার মধ্য দিয়ে পালন করেন ‘বৈসুক’ বা ‘বৈসু’ উৎসব। বৈসাবি অর্থাৎ মারমাদের ভাষায় ‘সাংগ্রাই’ উৎসব চলে তিন দিন ধরে। উৎসবে মারমাদের সবাই গৌতম বুদ্ধের ছবি নিয়ে নদীর তীরে যায় এবং দুধ বা চন্দন কাঠের জল দিয়ে স্নান করায় সেটাকে। এরপর আবার ওই ছবিটিকে ফিরিয়ে নিয়ে যায় আগের জায়গায় অর্থাৎ মন্দির বা বাসাবাড়িতে। আদিকাল থেকে অন্যান্য সম্প্রদায় থেকে ভিন্ন আঙ্গিকে পুরনো বছরকে বিদায় এবং নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে এ সাংগ্রাই উৎসব পালন করে আসছে মারমারা। ধারণা করা হয, ‘সাক্রাই’ মানে সাল শব্দ থেকে ‘সাংগ্রাই’ শব্দটি এসেছে, বাংলায় যা ‘সংক্রান্তি’ বা সাল গণনা করা হয়, যা ‘জ্যা সাক্রই’ নামে পরিচিত।

বাংলা বছরের শেষ দুদিন ও নববর্ষের প্রথম দিন─মোট তিন দিন ধরে পাহাড়ে চলে বৈসাবি। উৎসবের প্রথম দিনকে চাকমা ভাষায় বলে ফুল বিজু। এদিনে ঘরবাড়ি ও আঙিনা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয় এবং ফুল দিয়ে সাজানো হয় ও পাহাড়ি ছড়া বা নদীতে ফুল ভাসিয়ে দিয়ে পুরনো বছরকে স্বাগত জানানো হয়। চৈত্রের শেষ দিনটিতে থাকে এ উৎসবের মূল আকর্ষণ। এই দিনে প্রতিটি ঘরে মজার মজার খাবার তৈরি করা হয়। নানা ধরনের খাবারের মধ্যে বিশেষ এক প্রকার খাবার রয়েছে, যার নাম ‘পাঁচন’। এ খাবার কমপক্ষে ২০ ধরনের শাকসবজি দিয়ে তৈরি করা হয়। এই পাঁচনে যে যত পদের সবজি মেশাতে পারবে, তার গুরুত্ব তত বেশি। তাদের বিশ্বাস, এই পাঁচনের দৈব গুণাবলি আছে, যা আসছে বছরের সব রোগবালাই ও দুঃখ-দুর্দশা দূর করে থাকে। কিশোর-কিশোরীরা নদীর জলে ফুল ভাসায়। তিন দিনের এ উৎসবে ওই সম্প্রদায়ের কেউ কোনো জীবিত প্রাণী হত্যা করে না। আর তৃতীয় দিনকে ‘নুয়াবঝর’ বা ‘গেজ্যা পেজ্যা দিন’ বলা হয়। এই দিনে দলবেঁধে মন্দিরে গিয়ে নতুন বছরের সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করা হয়। এ সময় বাড়ি বাড়ি নানা ধরনের খানাপিনার আয়োজন করা হয়।

বৈসাবি উৎসব উপলক্ষে পার্বত্যাঞ্চলে ঘিলা, বৌচি, নাদের খেলা, বলীখেলা, ফোর খেলা, পুত্তি খেলা, তুমুরো খেলা, তৈলাক্ত বাঁশ বেয়ে উপরে ওঠাসহ বিভিন্ন খেলার আয়োজন করা হয়। তবে বৈসাবি উৎসবের মূল আয়োজন হলো জলখেলা। উৎসবটি পার্বত্য অঞ্চলে কমবেশি সবার কাছেই জনপ্রিয়। উৎসবে আদিবাসীরা সবাই সবার দিকে জল ছুড়ে আনন্দে মেতে ওঠে। আদিবাসীদের মতে, এ জলের মধ্য দিয়ে ধুয়ে যায় বিগত বছরের সব দুঃখ-পাপ। জলখেলার আগে অনুষ্ঠিত হয় জলপূজা। মারমা যুবকরা এ উৎসবে তাদের পছন্দের মানুষটির গায়ে জল ছিটিয়ে সবার সামনে প্রকাশ করে তাদের ভালবাসার কথা। এর মধ্য দিয়ে আন্তরিক হয় সম্পর্কের বন্ধন। বান্দরবান, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও কক্সবাজারে পালন করা হয়ে থাকে বর্ণিল বৈসাবি উৎসব।

সোনালীনিউজ/আমা

Wordbridge School
Link copied!