• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

‘বলবয়’ থেকে ‘ক্যাডি’ অতঃপর দেশ সেরা গলফার


এম জাফিউল ইসলাম এপ্রিল ২৬, ২০১৭, ০৭:৩৬ পিএম
‘বলবয়’ থেকে ‘ক্যাডি’ অতঃপর দেশ সেরা গলফার

ঢাকা: প্রতিভা কখনো লুকিয়ে রাখা যায় না। একদিন না একদিন তা বিকশিত হবেই। বিশ্বের বহু প্রতিভাবান মানুষদের কথাই আমরা জানি, যারা নিজের প্রতিভা দিয়েই শীর্ষে উঠেছেন, নজরে এসেছেন গোটা বিশ্বের। তেমনই একজন প্রতিভাবানের গল্প নিয়েই এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। মেধা আর পরিশ্রম কীভাবে একজন মানুষের জীবন বদলে দিতে পারে তারই যেন জ্বলন্ত উদাহরণ। রুপালী পর্দার সিনেমার গল্পের মতই তার উত্থান ঘটেছে। দেশে তো বটেই দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন গোটা বিশ্ব। আর তুলে ধরছেন লাল সবুজের পতাকা। অর্থ, যস আর খ্যাতি সবই পেয়েছেন। তিনিই আমাদের দেশ সেরা গলফার সিদ্দিকুর রহমান।

মাদারীপুরের আফজাল হোসেন এবং মনোয়ারা বেগম দম্প্রতির অভাব-অনটনের সংসারে ১৯৮৪ সালের ২০ নভেম্বর জন্ম নেন সিদ্দিকুর। জন্মের পর থেকেই প্রচন্ড অভাবের মধ্যেদিয়ে বেড়ে  উঠতে থাকেন তিনি। এক সময় পেটের দায়ে পরিবারের সাথে ঢাকায় চলে আসেন। উঠেন একটি বস্তিতে। একদিন পাশের বাড়ির এক ছেলের সাথে ঘুরতে ঘুরতে চলে আসেন কুর্মিটোলা সেনাবাহিনীর গলফ ক্লাবে। মাত্র ১০ বছর বয়সে জীবিকার প্রয়োজনে বেছে নেন বলবয়ের চাকুরি। একসময় ‘বলবয়’ থেকে ‘ক্যাডি’ পদে পদোন্নতি হয় তার। বল কুড়ানো আর খেলোয়াড়দের ব্যাগ বয়ে নিয়ে চলতে চলতে তার মনে উকি দেয় খেলোয়াড় হওয়ার স্বপ্ন। একদিন এক লোহা লস্করের দোকানে গিয়ে লোহার রড দিয়ে গলফ ক্লাবের মতো একটা কিছু তৈরি করে নেন। এই আনকোরা ক্লাব দিয়েই গলফ খেলতে থাকেন।

২০০০ সালের দিকে বাংলাদেশের গলফ ফেডারেশনের কর্মকর্তাদের উদ্যোগে দেশে প্রতিযোগিতামূলক গলফে বলবয়-ক্যাডি হয়ে আসা সুবিধাবঞ্চিত গলফারদের সুযোগ হয়। আর সেই সুযোগে কোচের অধীনে শুরু হয় সিদ্দিকুর রহমানের অনুশীলনও। তখন তাঁর আগ্রহ এবং ধৈর্য্য ছিল আর-সবার থেকে ঢের বেশি। একসময় এই আগ্রহ আর ধৈর্য্যের ফলও পেতে শুরু করলেন। সবাইকে আশ্চর্য করে দিয়ে তিনি জিততে শুরু করলেন: একে একে ১২টি অপেশাদার গলফ টুর্নামেন্টের শিরোপা জিতে ফেললেন সিদ্দিক।

অপেশাদার গলফে তাঁর সাফল্য তাঁকে টেনে নিলো পেশাদার গলফের দিকে এবং ২০০৮ সালে শুরু হলো তাঁর পেশাদার গলফের জগত। যথারীতি সেখানেও সাফল্যের স্বাক্ষর রাখলেন সিদ্দিক। ২০০৮ ও ২০০৯ সালে ভারত ও বাংলাদেশ সার্কিটের ৪টি পোশাদার শিরোপা জিতলেন সিদ্দিক।

সিদ্দিকুর রহমান ১২টি অপেশাদার গলফ টুর্নামেন্ট জয় করেছেন। এর মধ্যে বাংলাদেশে জিতেছেন ৫টি, পাকিস্তান, নেপাল ও শ্রীলঙ্কায় জিতেছেন ২টি করে, আর একটি জিতেছেন ভারতে। ২০১০ খ্রিস্টাব্দে প্রথম বাংলাদেশী গলফার হিসেবে সুযোগ পান এশিয়ান ট্যুর-এ অংশ নেয়ার। এবং এ বছরই ব্রুনাই ওপেন শিরোপা জিতে নেন। একই বছর তিনি এশীয় গলফারদের র‌্যাংকিংয়ে ৯-তে উঠে আসেন। ২০১০ খ্রিস্টাব্দে প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে এশিয়ান ট্যুর-এ স্থান পাবার পর পরই ১ আগস্ট প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে তিনি জয় করেছেন এশিয়ান ট্যুর-এর শিরোপা। ২০১৩ সালের নভেম্বরে হিরো ইন্ডিয়া ওপেন গলফ টুর্নামেন্টে তিনি চ্যাম্পিয়ন হন।

প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে সিদ্দিকুর রহমান বিশ্বকাপে নাম লিখিয়েছেন। এশিয়া প্যাসিফিক প্যানাসনিক ওপেনে ভালো পারফরম্যান্স করায় গলফ বিশ্বকাপে খেলার টিকেট পান তিনি। বাংলাদেশের গলফ আর সিদ্দিকুর রহমান একে অপরের পরিপূরক হয়ে গেছে। বাংলাদেশের প্রথম ক্রীড়াবিদ হিসেবে সরাসরি অলিম্পিকে অংশগ্রহণের সুযোগ পেয়েছেন গলফার সিদ্দিকুর রহমান। মরিশাসে অনুষ্ঠিত একটি প্রতিযোগিতায় রানারআপ হয়ে সরাসরি রিও অলিম্পিকে অংশগ্রহণের সুযোগ পেয়েছেন সিদ্দিকুর। সেখানে বাংলাদেশের পতাকা বহন করেন তিনি।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/আরআইবি

Wordbridge School
Link copied!