• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

বলিউডে ট্রাম্প এক ‘হিপোক্রাট’


বিনোদন ডেস্ক নভেম্বর ১০, ২০১৬, ০৭:০০ পিএম
বলিউডে ট্রাম্প এক ‘হিপোক্রাট’

ঢাকা: সদ্য নির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নিয়ে বলিউড পাড়ায় কোনো উচ্ছাস নেই। অনেকেই ঠাট্টা বিদ্রুপও করছেন এ নিয়ে। রাম গোপাল ভার্মা তো বলেই ফেললেন ট্রাম্পিং পার্টি দেবেন। আর টুইঙ্কল খন্না বলছেন ট্রাম্পের জয় দৈব-দুঃস্বপ্ন!

টুইটারে তো নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ার ঝড় বইছে। হবে না-ই বা কেন! বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর দেশের ভার যে লোকটার ওপর ন্যস্ত হলো তিনি তো আর যে সে হতে পারেন না। লোকটা এর আগে বহুবার টাকার জোরে প্রেসিডেন্ট হওয়ার চেষ্টা করেছেন, পারেননি। যে লোকটা ব্যবসায়ী ছিলেন, আছেন, থাকবেন। যিনি দেশে শুধু ‘পিওর ব্লাড’ আমেরিকানদের চান। মুসলিম এবং মেক্সিকান মানেই যার কাছে যথাক্রমে ‘সন্ত্রাসবাদী’ এবং ‘ধর্ষক’! যার দেশে শাহরুখ খান গেলে স্ট্রিপসার্চের রুটিনে হয়তো পরিবর্তন হবে না। আরও কড়াকড়ি আসবে! তৃতীয় বিশ্ব থেকে আবেদন করা ভিসা বাতিলের ঘটনাও নিয়মিত হয়ে যাবে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, আমেরিকার বর্ণবিদ্বেষী মনোভাবের একটা ‘ম্যানিপুলেশন’ ট্রাম্পের এই জয়। জাভেদ আখতার অনেকটা এদিক ধরেই মন্তব্য করেছেন টুইটারে, ‘ট্রাম্পের মতো নেতার নির্বাচন আসলে আমাদের ভিতরকার খারাপগুলোর প্রতিফলন। উনি যেটা প্রচার করেন তা হল, কোনো রকম অপরাধবোধে ভুগো না। তোমার মতো হাজার পাষণ্ড দুনিয়ায় আছে। এর জন্যেই ওকে আমরা ভালবাসি’!

শ্রীশ কুন্দের আবার ঠাট্টা করেছেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কিন্তু বর্ণবিদ্বেষী নন। গায়ের রং কমলা হওয়া সত্ত্বেও তিনি সাদা চামড়াদের পছন্দ করেন। আসলে ডোনাল্ড ট্রাম্পের নামে প্রচারটা এমনভাবেই হয়েছে, যে লোকটার কোনো ভালো দিক আতশকাচ নিয়ে খুঁজলেও পাবেন না। তিনি নারীবিদ্বেষী। দাবি তুলেছেন, গর্ভপাতের জন্য মহিলাদের শাস্তি হওয়া উচিত। বলেছেন, হিলারি ক্লিনটন নিজের স্বামীকে সন্তুষ্ট করতে পারেন না, দেশকে করবেন কী করে? মেয়েদের শুধু সুন্দর মুখ থাকলেই চলে না, চেহারা ভালো না হলে তাদের দ্বারা কিচ্ছু হবে না— নানা সময়ে এইসব মণিমুক্তো ছড়িয়েছেন ট্রাম্প! ইন্টারনেটের বেনাবনে সেগুলো দিব্যি জ্বলজ্বল করছে!

টুইঙ্কল খন্নার টুইট সেইসব ঘটনাকেই মনে করাচ্ছে, ‘মিসোজিনি (নারীবিদ্বেষ) ট্রাম্পকার্ডে খেলে বাজিমাত করে বেরিয়ে গেল’! অবশ্য আমেরিকাও যে মহিলা প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীকে চাইলো না, সেটা তো পরিষ্কারই। হিলারি ক্লিনটনের ভোটফল ট্রাম্পের ম্যাজিক নাম্বারের (২৭৯) কাছে ফিকে!

পরমাণু বোমার ব্যবহার নিয়ে বড্ড উৎসুক ট্রাম্প। যদিও বলেন, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কাজ করাই তার উদ্দেশ্য। কিন্তু বিভিন্ন টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে খোলাখুলি বলেছেন, ‘পরমাণু ক্ষমতার ব্যাপারে আমাদের আনপ্রেডিক্টেবল হওয়া উচিত। কিংবা, ‘আর কোনো দেশে পরমাণু শক্তি নেই, তা তো নয়। আমাদের থাকবে না কেন? ক্ষমতার বড়াই করার ব্যাপারে ট্রাম্পের কোনো রাখঢাক নেই। রিপাবলিকানদের অনেকেরই মত, ‘ট্রাম্প হিপোক্রিট নন। তিনি জানেন ক্ষমতা থাকা মানে কী। কী করা যেতে পারে সেই ক্ষমতা দিয়ে। উনি প্রকাশ্যে বলে ফেলেন। বাকিরা সেটা করেন না।’

এ ব্যাপারে ট্রাম্প একজন ভালো টিমমেটও পেয়েছেন— সারা পালিন। যার পরমাণুনীতির প্রস্তাবনা বারাক ওবামা বারংবার নাকচ করেছিলেন। পরিচালক নিখিল আডবাণী ধরেছেন এই দিকটাই। টুইট করেছেন, ‘পরমাণু বোতামে সারা পালিনদের হাত ছিল যে, সেটা এখন মনে করছি’!

বিষয়টা নিয়ে আশঙ্কায় অনেকেই। হনসল মেটা যেমন টুইট করেছেন, ‘দি এন্ড’! হুমা কুরেশির মন্তব্য, ‘প্রিয় আমেরিকা, বেশি রিয়্যালিটি টিভি দেখলে এমনটাই হয়’! দেশে অভিবাসীদের চান না ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি হোয়াইট হাউসে আসায় ইতোমধ্যেই ডলারের দাম পড়ে গিয়েছে, শেয়ার মার্কেটে টান পড়ছে ক্যাপিটালে। বিশ্বজুড়ে অর্থনীতিতে এর প্রভাব খুব বড়সড় না হলেও পড়বে তো নিশ্চিতই। ঠিক যেমনটা ব্রেক্সিট’ এর সময় হয়েছিল। কিন্তু আমেরিকানরা এই ‘রিয়্যালিটি’কে এখনও হজম করার জায়গায় পৌঁছননি। তারা সবে এক সময়ের রিয়্যালিটি টিভি তারকা ট্রাম্পকে দুনিয়ার সবচেয়ে ক্ষমতাশালী ব্যক্তির তকমা দেয়ার ঢেকুর তুলছেন!

কিন্তু সেসব নিয়ে চিন্তা করলে চলে! একদল বরাবরই হুজুগে বাঁচে। বলিউডেও তার কমতি নেই। রাম গোপাল বর্মা যেমন আনন্দে উদ্বাহু! তিনি নাকি ভবিষ্যদ্বাণীও করে দিয়েছিলেন, ট্রাম্প জিতবেন। নিজেই সে কথা টুইট করেছেন, নিজেই নিজের পিঠ চাপড়েছেন! সেখানেই কি শেষ? গেল বুধবার (৯ নভেম্বর) রাতে ট্রাম্পিং পার্টি দেবেন বলেও সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘোষণা করে দিয়েছেন রামু। আদপে কী যে ঘটবে এবং সেই ভবিষ্যদ্বাণী এখন কে করবেন, খোঁজ চলুক বরং সেই শ্রীভৃগুর!

এইসবের মধ্যে একেবারেই উচ্চবাচ্য নেই, এমন কয়েকজনও রয়েছেন। প্রিয়ঙ্কা চোপড়া, ফ্রিডা পিন্টো যেমন। প্রিয়ঙ্কা ওবামাদের হোয়াইট হাউস করেসপনডেন্টস’ ডিনারে নিমন্ত্রিত ছিলেন মাসখানেক আগেই। ফ্রিডা পিন্টো ক্লিনটন ফাউন্ডেশনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। কিন্তু ডেমোক্র্যাটদের হার নিয়ে বা গোটা নির্বাচন নিয়ে তারা চুপ। ‘ট্রিপ্‌ল এক্স: রিটার্ন অফ জ্যান্ডার কেজে’ অভিনয় করে আমেরিকায় প্রচুর বন্ধু পাতিয়েছেন দীপিকা পাড়ুকোন। কিন্তু টুইটে তিনিও মৌন। আসলে ট্রাম্পের ইতিহাসটাই এমন, যে বাকি সবকিছুই সেখানে গৌণ! সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা।

সোনালীনিউজ/এমএন

Wordbridge School
Link copied!