• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বসতি এলাকায় ইটভাটা : হুমকিতে জনজীবন


কাশিয়ানী (গোপালগঞ্জ) প্রতিনিধি অক্টোবর ১৫, ২০১৬, ০৬:৫১ পিএম
বসতি এলাকায় ইটভাটা : হুমকিতে জনজীবন

গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীতে জনবসতি এলাকায় এক প্রভাবশালী ব্যক্তি অবৈধভাবে গড়ে তুলেছেন ইটভাটা। ফলে চরম হুমকির মুখে পড়েছে আশপাশের জনজীবন ও পরিবেশ। এছাড়া ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে ওই এলাকার কৃষকরা। এ ব্যাপারে গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসক বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা। 

স্থানীয় সূত্র জানায়, স্থানীয় প্রভাবশালী হাবিবুর রহমান দীর্ঘদিন ধরে সরকারি নির্দেশ উপেক্ষা করে উপজেলা সদরে জনবসতি এলাকায় কৃষি জমিতে ‘হাবিব এন্ড কোম্পানী’ নামে ইটভাটা তৈরি করে ব্যবসা করে আসছেন। এতে আশপাশের ফসলি জমি ও পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। এমনকি পরিবেশ বিধিমালা লঙ্ঘন করে ভাটায় অবাধে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। 

ইট পোড়ানো (নিয়ন্ত্রণ) সংশোধন আইন-২০১০ এর ৪৫৬ উপধারায় আবাসিক এলাকা, উপজেলা সদর, ফলের বাগান, ফসলি জমি, বনাঞ্চল, লোকালয় ও জনবসতি এলাকার ৩ কিলোমিটারের মধ্যে ইটভাটা তৈরি করা যাবে না। অথচ ওই ব্যক্তি ক্ষমতার দাপটে এসব নীতিমালা লঙ্ঘন করে অবৈধভাবে জনবসতি ও কৃষি জমিতে ইটভাটা তৈরি আরমে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। 

সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলা সদরে জনবসতি এলাকা ও কৃষি জমিতে ইটভাটা স্থাপন করে প্রশাসনের নাকের ডগায় পোড়ানো হচ্ছে ইট। ভাটার দু’পাশে রয়েছে বিস্তীর্ণ ধানক্ষেত ও অন্যান্য ফসলের জমি। একশ’ গজের মধ্যে রয়েছে আবাসিক ভবন, মহাসড়ক, স্কুল, মসজিদ, মাদ্রাসা, দোকানপাট ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানসমূহ। এছাড়া প্রভাবশালী হাবিবুর রহমানের বিরুদ্ধে সওজ ও ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি দখলের অভিযোগ রয়েছে। ভাটার আশপাশে অবস্থিত জমি জোরপূর্বক দখলের জন্য পাঁয়তারা করছেন বলেও একাধিক অভিযোগ রয়েছে।  তিনি এলাকার সাধারণ মানুষের ফসলি জমি ঘেঁষে মাটি উত্তোলন করে ইট তৈরী করছেন। এতে ওই এলাকার অনেক কৃষকের ফসলি জমি ভেঙ্গে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। মাটি উত্তোলন করতে নিষেধ করলেও তিনি তা কর্ণপাত করছেন না। 

অভিযোগে আরো প্রকাশ, অর্ধশতাধিক জমির মালিক ও কৃষককে মিথ্যা মামলাসহ নানাভাবে হয়রানী করছেন ওই প্রভাবশালী ব্যক্তি। যার বেশ কয়েকটি মামলা এখনও আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।

কাশিয়ানী পূর্বপাড়ার বাসিন্দা মো. ফায়েকুজ্জামান জানান, কৃষি জমির পাশে ইটভাটা তৈরি করায় জমিতে ভাটার কালো ধোয়াতে ঠিকভাবে ফসল হচ্ছে না। ইটভাটার মালিক স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় তার বিরুদ্ধে আমরা এলাকাবাসী কেউ কিছু বলতে সাহস পাচ্ছি না।

ইটভাটার পাশে অবস্থিত জমির মালিক মো. রেজাউল আলম বলেন, ‘আমার জমি ঘেঁষে প্রভাবশালী হাবিবুর রহমানের লোকজন দীর্ঘদিন ধরে মাটি উত্তোলন করেছে, বাঁধা দিতে গেলে তার লোকজন আমাকে নানা ধরণের হুমকি দেয়।’ 

তিনি আরো বলেন, ‘আমার জমিটি বিক্রির জন্য একাধিকবার প্রস্তাব দিয়েছেন হাবিবুর রহমান। কিন্তু আমি বিক্রি করতে রাজি না হওয়ায় আমার বিরুদ্ধে তিনি গোপালগঞ্জ আদালতে একটি মিথ্যা মামলা দায়ের করেন। সে মামলায় আমার পক্ষে রায় হয়। আবারও তিনি আমার বিরুদ্ধে হাইকোর্টে একটি মামলা দায়ের করেছেন। 

ইনায়েত হোসেন, জয়নাল খলিফা, সাইফুর রহমান ও মশিউর রহমানসহ একাধিক জমির মালিক জানান, ‘প্রভাবশালী হাবিবুর রহমান তাদের জমি দখলে নিতে তাদেরকে নানাভাবে হয়রানি করছেন।’ 

জনবসতি এলাকায় ইটভাটা তৈরির ব্যাপারে পরিবেশবাদী বেসরকারী সংস্থা বাংলাদেশ সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড স্টাডিজ (বিসিএএস) এর গবেষক বিধান টিকাদার বলেন, ‘জনবসতিপূর্ণ এলাকায় ইটভাটা স্থাপন করায় ওই এলাকার পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা রয়েছে।’ 

কাশিয়ানী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ রসময় মন্ডল বলেন, ‘কৃষিজমিতে ইটভাটা তৈরি করা ঠিক নয়, এতে ফসলের উৎপাদন হ্রাস পায়।’

ইটভাটার মালিক মো. হাবিবুর রহমানের সঙ্গে কথা বলার জন্য তার মোবাইলে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। 

কাশিয়ানী উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মো. কামরুল হাসান বলেন, ‘নিয়মবহির্ভূতভাবে ইটভাটা পরিচালনা করা হলে বন্ধ করে দেয়া হবে।’

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমএইচএম

Wordbridge School
Link copied!