• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

বহুমুখী পরকীয়ার জেরেই খুন মৌমিতা!


আন্তর্জাতিক ডেস্ক  ডিসেম্বর ১০, ২০১৬, ০৭:০৬ পিএম
বহুমুখী পরকীয়ার জেরেই খুন মৌমিতা!

ঢাকা: আইনের ছাত্রী মৌমিতা দাস (২২)। পড়তেন বেসরকারি আইন কলেজে। পড়তে পড়তেই বিয়ে এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে। মাস ছয়েক পর থেকে শুরু হয় দাম্পত্য কলহ। বধূ নির্যাতনের অভিযোগে মামলা করেন মৌমিতা। এতে ঘটে যায় বিয়ে বিচ্ছেদ। এরপর থেকে বাবার বাড়িতেই থাকতে শুরু।

ব্যবসায়ী স্বামীর অভিযোগ, বহু তরুণের সঙ্গে বিয়ে বহির্ভুত সম্পর্ক থাকার কারণে তাদের দাম্পত্য জীবনে টানাপোড়েন শুরু হয়। এক পর্যায়ে স্বামী-শ্বশুরবাড়ির লোকজনের বিরুদ্ধে মামলা করে মৌমিতা। এরপর বিবাহ বিচ্ছেদের পথে হাঁটেন তারা।

বিয়ে বিচ্ছেদের পর বাবার বাড়িতে কিছুদিন থাকার পর কলেজের কাছেই পেয়িং গেস্ট হিসেবে থাকা শুরু করেন মৌমিতা। মাঝে মাঝে তার যাতায়াত ছিল বাবার বাড়ি।

বুধবার (৭ ডিসেম্বর) সকালে কলেজে যাওয়ার জন্য প্রতিদিনের মতো বাড়ি থেকে বের হন মৌমিতা। পরদিন বৃহস্পতিবার (৮ ডিসেম্বর) রাতেই বাড়িতে খবর আসে রাস্তার ধারে তার গুলিবিদ্ধ দেহ পাওয়া গিয়েছে। পরে মরদেহ হাসপাতালে ময়না তদন্তে পাঠানো।

মৌমিতার বাবা বিমান বিশ্বাস মেয়ের দেহ শনাক্ত করেন। কে বা কারা খুন করেছে কী কারণ আছে খুনের পেছনে এ নিয়ে তদন্ত শুরু হয়। বিভিন্ন সূত্র থেকে পুলিশের হাতে আসে বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য।

ঘাতক স্বামী নিখিল

এ ঘটনাটা ভারতের। মৌমিতার বাড়ি খড়দহ থানা এলাকার পাটুলিয়ায়। তার বাবা বিমান বসু খড়দহ থানার একজন কনস্টেবল। খড়দহ থেকেই কল্যাণীতে আইনের কলেজে পড়তে যেতেন মৌমিতা।

ঘটনার দুদিন পর মৌমিতার স্বামী নিখিল সেনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মৌমিতাকে হত্যার দায় স্বীকার করে কেন হত্যা করেছেন, তার ব্যাখ্যাও দিয়েছেন।

পুলিশ ও পরিবার সূত্রমতে, ২০১৫ সালের নভেম্বরে মৌমিতার বিয়ে হয় টিটাগড় থানা এলাকায় নিখিল সেন নামে এক কাপড় ব্যবসায়ীর সঙ্গে। মাস ছয়েক পর থেকেই তাদের দাম্পত্য জীবনে অশান্তি শুরু হয়। মৌমিতা তার স্বামী ও শ্বশুররবাড়ির লোকজনের বিরুদ্ধে বধূ নির্যাতনের মামলা করেন। এরপরই শ্বশুর বাড়ি ছেড়ে চলে আসেন বাবার বাড়ি।

নিখিল গ্রেপ্তারের পর টানা ৩৬ ঘণ্টা জেরা করে পুলিশ। এরপর শুক্রবার (৯ ডিসেম্বর) রাতে মৌমিতাকে খুনের কথা স্বীকার করেন। যে আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে মৌমিতাকে গুলি করে খুন করা হয়েছিল তা একটি পুকুরে ফেলে দিয়েছেন বলে পুলিশের কাছে বলেছেন নিখিল। সেটির খোঁজ চলছে।

মৌমিতা

জেরায় পুলিশের কাছে নিখিল জানান, মৌমিতা আলাদা থাকলেও তার সঙ্গে হোয়াটস‌্অ্যাপে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন। মৌমিতার জীবনযাপনের বিপুল খরচের অনেকটা তাকেই জোগাতে হত। ৮ ডিসেম্বর মৌমিতার কলেজের পর তাকে দেখা করতে ডেকে পাঠান। নিখিলের বাইকের পিছনে বসেন মৌমিতা। দুজনেই কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ে ধরে যাচ্ছিলেন। সে সময়ই কোনো একটা বিষয় নিয়ে দুজনের কথা কাটাকাটি হয়। মৌমিতা এমন কিছু কথা বলেন যাতে প্রচণ্ড রেগে যান নিখিল। তখন তার কাছে থাকা আগ্নেয়াস্ত্র দিয়েই মৌমিতাকে লক্ষ্য করে পরপর দুটি গুলি ছোঁড়েন। একটি মৌমিতার মাথায় আর একটি তার বুকে গিয়ে লাগে। রাস্তার পাশেই লুটিয়ে পড়েন মৌমিতা। আর বাইক নিয়ে চম্পট দেন নিখিল।

মৌমিতার গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধারের পর তার মোবাইল ফোন ঘেঁটে দেখা যায়, খুন হওয়ার কিছু ক্ষণ আগে নিখিলের সঙ্গে তার কথা হয়েছে। হোয়াটস‌্অ্যাপেও তাদের বেশ কিছু কথোপকথন খতিয়ে দেখেন তদন্তকারীরা। ওই রাতেই থানায় তুলে নিয়ে আসা হয় নিখিলকে। জেরার শুরুতে মৌমিতার সঙ্গে যোগাযাগ রাখার বিষয়টি পুরোপুরি অস্বীকার করছিলেন নিখিল। টানা জেরার পর অবশেষে মৌমিতাকে খুনের কথা স্বীকার করেন।

পুলিশ জানিয়েছে, যে আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে মৌমিতাকে খুন করা হয়েছে বলে নিখিল জানিয়েছেন তার কোনও লাইসেন্স দেখাতে পারেননি তিনি। উপরন্তু পুলিশকে জানিয়েছেন, এটি তার এক বন্ধুর। যে কি না বেআইনি অস্ত্র রাখার অভিযোগে বর্তমানে জেল হেফাজতে রয়েছে। লাইসেন্স ছাড়া দীর্ঘদিন নিখিল কেন ওই আগ্নেয়াস্ত্র নিজের কাছে রাখতেন? ব্যবসার আড়ালে অন্য কোনও চক্রের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন কি না তা সবটাই খতিয়ে দেখছে পুলিশ।

সূত্রমতে, বিয়ে বিচ্ছেদের পর একের পর এক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন মৌমিতা।

সোনালীনিউজ/এমএন

Wordbridge School
Link copied!