• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বাংকার খোঁড়াখুঁড়ি চলছে দুই সীমান্তে


আন্তর্জাতিক ডেস্ক সেপ্টেম্বর ৩০, ২০১৬, ১০:৩২ পিএম
বাংকার খোঁড়াখুঁড়ি চলছে দুই সীমান্তে

কাশ্মীরে ভারত-পাকিস্তান সীমান্ত সংলগ্ন এলাকায় গত বুধবার গভীর রাতে জম্মু-কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে দুই কিলোমিটার ভেতরে ঢুকে ভারতের সার্জিক্যাল স্ট্রাইকে ৩৮ জঙ্গি নিহতের ঘটনাকে ভুয়া বলেছে ইসলামাবাদ। পাকিস্তান বলেছে, সার্জিক্যাল স্ট্রাইক নয়, নয়াদিল্লি আসলে নিয়ন্ত্রণরেখায় সংঘর্ষ বিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করেছে। এর ফলে মৃত্যু হয়েছে তাদের দুইজন সেনার। এ জন্য বদলা নেয়ার কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছে দেশটি।

এদিকে ভারত-পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর মধ্যে গোলাগুলির মধ্যে ৮ ভারতীয় সৈন্য নিহত হয়েছে পাকিস্তানের এমন দাবি নাকচ করে দিল্লি বলেছে, অসাবধানতাবশত নিয়ন্ত্রণ রেখা অতিক্রম করায় পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর হাতে ভারতের একজন সৈনিক আটক হয়েছে।

অন্যদিকে, নিয়ন্ত্রণ রেখা (লাইন অব কন্ট্রোল) ঘিরে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক ও পাল্টা আঘাতের খবরের মধ্যে দুই দেশের সীমান্তে চলছে বাংকার (মাটির নিচে গর্ত করে আশ্রয়) খোঁড়াখুঁড়ি। নিজেদের নিরাপত্তায় সেখানকার জনগণ পাহাড়ি এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে এ বাংকার খুঁড়ছেন। খবর বিবিসি, ডন, হিন্দুস্তান টাইমস, দি হিন্দু ও রয়র্টাস।

পাকিস্তানের দৈনিক ডন জানায়, নিয়ন্ত্রণরেখার ওপাশে গিয়ে ভারতের সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের দাবিকে খারিজ করে দিয়েছে পাকিস্তান। ইসলামাবাদের দাবি, সার্জিক্যাল স্ট্রাইক নয়, নয়াদিল্লি আসলে নিয়ন্ত্রণরেখায় সংঘর্ষবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করেছে। এর ফলে মৃত্যু হয়েছে তাদের দুই সেনার। তবে ভারতের আক্রমণের যোগ্য জবাব দেওয়া হয়েছে বলেই দাবি করেছে পাক সেনা।

পাক সেনা সূত্রকে উল্লেখ করে পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যমের একাংশের দাবি, নিয়ন্ত্রণরেখায় তাতপানিতে একজন ভারতীয় সেনাকে বন্দি করেছে পাকিস্তান। রাতের লড়াইয়ে নিহত হয় আট ভারতীয় সেনা। দাবি করা হয়েছে, যে ভারতীয় সেনাকে পাকিস্তান বন্দি করেছে, তার নাম বাসন চহবান। তার বাড়ি মহারাষ্ট্রে। বন্দি ভারতীয় সেনাকে অজ্ঞাত জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে দাবি। কিন্তু নিহত ভারতীয় সেনাদের দেহ পাকিস্তানের হাতে নেই বলে জানানো হয়েছে।

এদিকে বুধবার গভীর রাতে ভারতের আচমকা আক্রমণের পরে বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠক করেন সেনাপ্রধান রাহিল শরিফের সঙ্গে। পাক সংবাদমাধ্যমগুলো জানায়, রাহিল শরিফ দেশের প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছেন, ভারতের তরফে সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের দাবি ভিত্তিহীন।
 
রেডিও পাকিস্তানের খবর, ভারতের আঘাতের পরেই নওয়াজ শরিফ বলেন, পাকিস্তানের সেনা দেশকে রক্ষা করতে জানে। ভারতকে মোকাবিলায় তৈরি রয়েছে ইসলামাবাদ। যদি সার্বভৌমত্বে আঘাত আসে, পাকিস্তান তার জবাব দেবে। এই টানাপড়েনের মধ্যে বৃহস্পতিবার ইসলামাবাদে ভারতের হাইকমিশনারকে ডেকে পাঠিয়েছে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

ভারতীয় ৮ সৈন্য নিহত হয়েছে ইসলামাবাদের এমন দাবি ভিত্তিহীন উল্লেখ করে ভারতের বিভিন্ন গণমাধ্যমে সেনা কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে বলা হয়, নিয়ন্ত্রণরেখার ওপারে অনুপ্রবেশের অপেক্ষায় থাকা জঙ্গিদের একাধিক ঘাঁটিতে বুধবার গভীর রাতে অভিযান চালানো হয়। রাত সাড়ে ১২টা থেকে শুরু করে বৃহস্পতিবার ভোর সাড়ে ৪টা পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে একাধিক জঙ্গিঘাঁটি ধ্বংস করে ভোরের আলো ফোটার আগেই ফিরে আসেন সেনা কমান্ডোরা। সেনার স্পেশাল ফোর্সের প্যারা কমান্ডোদের এই ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’-এ অন্তত ৩৮  জঙ্গি ও দুই পাক সেনা জওয়ান নিহত হয়েছে। ভারতীয় জওয়ানদের কেউ হতাহত হয়নি বলেই সেনার দাবি।

বৃহস্পতিবার সেনাবাহিনীর একটি সূত্রকে উদ্ধৃত করে ভারতীয় সংবাদ সংস্থা আইএএনএস জানায়, ‘অসাবধানতাবশত’ কাশ্মীরে নিয়ন্ত্রণরেখা অতিক্রম করায় পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে এক সৈনিক আটকা পড়লেও কেউ নিহত হয়নি। আটক সেনার ব্যাপারে ভারতীয় বাহিনীর মিলিটারি অপারেশনের ডিরেক্টর লেফটেন্যান্ট জেনারেল রণবীর সিং পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছেন।

একই খবরে বলা হয়, বুধবার রাত সাড়ে ১২টা নাগাদ অভিযান শুরু হয়। এমআই-১৭ হেলিকপ্টারে করে স্পেশাল ফোর্সের ১০০-১৫০ কমান্ডোকে নামিয়ে দেওয়া হয় নিয়ন্ত্রণরেখার ওপারে পাক-অধিকৃত কাশ্মীরে। তারাই ছোট দলে ভাগ হয়ে তিন কিলোমিটার পর্যন্ত ভিতরে ঢুকে জঙ্গিদের সাতটি লঞ্চ-প্যাডে অভিযান চালায়।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের পরই মূলত কাশ্মীরের বান্দিপোরা, পুঞ্চ ও কুপওয়ারা জেলাসহ সংলগ্ন এলাকার লোকজন বাংকার খুঁড়তে শুরু করেছেন। প্রশাসনের তরফ থেকেই তাদের বাংকার খুঁড়ে রাখতে বলা হয়েছে। তবে যারা বাংকার খুঁড়ছেন না এবং একেবারে সীমান্ত সংলগ্ন এলাকায় বসবাস করছেন, তাদের সরিয়ে দিচ্ছে প্রশাসন। কাশ্মীরের উপমুখ্যমন্ত্রী নির্মল সিংহ যেমনটি বলেছেন, আমরা নিয়ন্ত্রণ রেখা সংলগ্ন বাসিন্দাদের সরানো শুরু করেছি। দেখা যাক ভবিষ্যতে কী হয়!

এদিকে, ভারত সীমান্তে যখন এ ধরনের বাংকার খোঁড়াখুঁড়ি চলছে, তখন পাকিস্তানের সীমান্ত সংলগ্ন গ্রামগুলোও খালি করার খবর আসছে পাকিস্তানের বিভিন্ন গণমাধ্যমে। এমনকি ভারতীয় সংবাদমাধ্যম বলেছে, পাকিস্তান সীমান্ত খালি করে সেখানে সেনা অবস্থান ও অস্ত্রশস্ত্র মজুদ বাড়িয়েছে।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/আকন

Wordbridge School
Link copied!