• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলা চলচ্চিত্রে ফরীদির পরেই রাজীবের স্থান!


বিনোদন প্রতিবেদক নভেম্বর ১৪, ২০১৬, ১২:৪৮ পিএম
বাংলা চলচ্চিত্রে ফরীদির পরেই রাজীবের স্থান!

১২তম মৃত্যুদিনে স্মরণীয় অভিনেতাকে রাজীব(১ জানুয়ারি১৯৫২-১৪ নভেম্বর ২০০৪)-এর প্রতি শ্রদ্ধা...

ঢাকা: বাংলা চলচ্চিত্রের জাদরেল অভিনেতা রাজীব। খলনায়ক হিসেবে প্রসিদ্ধ থাকলেও বহু ভালো চরিত্রেও তিনি ছিলেন সমান দক্ষ। মূলত তিনি ছিলেন সত্যিকারের এক অভিনেতা। বাংলা চলচ্চিত্রে তুমুল জনপ্রিয় অভিনেতা হুমায়ুন ফরীদিকে বাদ দিলে তার ঠিক পরের আসনটিই দিতে হবে রাজীবকে। অন্তত খলচরিত্র হিসেবে রাজীব ছিলেন অনবদ্ধ।    

অন্যদিকে চলচ্চিত্রে রাজীবের ব্যক্তিগত জীবন এবং খলচরিত্র হিসেবে একটা মূল্যায়ন পাওয়া যায় এক নিকট ভক্তের স্মৃতিচারণে। অভিনেতা রাজীবের স্মৃতিচারণ করে একজন লিখেন, তাকে আমি ভিলেন বা খলনায়ক বলতে রাজি নই। তিনি একজন অভিনেতা, জাদরেল অভিনেতা। জীবনের অনেকটা সময় কেটেছে শালবনে সিনেমার শ্যুটিং দেখে দেখে। তখন প্রায় সকল ধরনের শিল্পীদেরই দেখা হয়েছে, খুব কাছ থেকেই। পর্দায় যারা নায়ক-নায়িকা তাদের বাস্তব জীবনেও দেখেছি খল চরিত্রের ব্যবহার। কিন্তু যতগুলো ভিলেন বা খল চরিত্রাভিনেতা দেখেছি, তাদের সবাইকেই অনেক ভালো মানুষ মনে হয়েছে। রাজীব আংকেলকে আমি কখনো ‘বাবা’ ছাড়া কথা বলতে দেখিনি। দেখিনি কারো সাথে উগ্র মেজাজে কথা বলতে বা ভাব দেখাতে। রোদে পুড়ে সারা দিনব্যাপী শ্যুটিং করছেন, ভক্তরা চারপাশে ঘিরে দাঁড়িয়ে বাতাস আসার পথটাও আটকে রেখেছে, তারপরও ‘বাবারা, একটু সরে আসো, বাতাস আসতে দাও’ বলতেই শুনেছি। অটোগ্রাফ দিচ্ছেন, কথা বলছেন। কোন ক্লান্তি বা বিরক্তি নেই। অথচ পর্দায় তাকে দেখে কত্ত খারাপ মানুষই না ভেবেছিলাম। আমার বিশ্বাস বেশীরভাগ খল চরিত্রাভিনেতার মধ্যেই এই পার্থক্যটা বিরাজমান। তারা পর্দার ঠিক উল্টোটা হয়। রাজীব তার মোক্ষম উদাহারণ।’- বাংলা চলচ্চিত্রের অবিসংবাদিত অভিনেতা রাজীবকে নিয়ে এতোটুকু মূল্যায়নই হয়তো তাকে চেনার জন্য যথেষ্ঠ নয়, কিন্তু এই বা কম কিসে। মৃত্যুর বারো বছর পরেও তার ভক্ত অনুরাগীদের কাছে নিজের কাজের জন্য তিনি উদাহারণ হয়ে রইছেন। 

প্রসঙ্গত,১৯৮১ সালে ‘রাখে আল্লাহ মারে কে’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে রূপালি পর্দায় পা রাখেন ১৯৫২ সালের পটুয়াখালীর দুমকিতে জন্মগ্রহণ করা জনপ্রিয় অভিনেতা রাজীব। মূলত, কাজী হায়াতের ‘খোকন সোনা’ সিনেমার মাধ্যমে তিনি পরিচিত পান। এর আগে তিনি তিতাস গ্যাস কোম্পানিতে চাকরি করতেন। অভিনয়ের টানেই সিনেমায় নাম লেখান। রাজীব দুই শতাধিক বাংলা চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। রাজীবের অভিনয়ে নিজস্ব ভাষা ছিল। ঝাঁঝালো ভরাট কণ্ঠ, ভয়ানক চাহনি, কৌতুকপূর্ণ অভিব্যক্তি তাকে খলনায়ক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে। আবার ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’, ‘বাবার আদেশ’সহ বেশ কিছু চলচ্চিত্রে ব্যতিক্রমী চরিত্রে দেখা গেছে। ওই সব চরিত্রেও তিনি প্রশংসিত হন। তার উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রের মধ্যে রয়েছে— উছিলা, মিয়া ভাই, সত্য মিথ্যা, বীরাঙ্গনা সখিনা, হুমকি, মা মাটি দেশ, প্রেম প্রতিজ্ঞা, দাঙ্গা, ত্রাস, দুর্নীতিবাজ, প্রেম দিওয়ানা, টাকার অহংকার, মৃত্যুদণ্ড, বন্ধন, চাঁদাবাজ, মীরজাফর, মিথ্যার রাজা, বেনাম বাদশা, আখেরি রাস্তা, বিদ্রোহী কন্যা, ক্ষমা, জবরদখল, প্রিয় তুমি, বিক্ষোভ, খলনায়ক, দেশদ্রোহী, লুটতরাজ, ভণ্ড, হাঙর নদী গ্রেনেড, ভাত দে, সত্যের মৃত্যু নেই, স্বপ্নের পৃথিবী, মগের মুল্লুক ও স্বপ্নের বাসর। রাজীব শ্রেষ্ট পার্শ্ব অভিনেতা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন চারবার— হীরামতি (১৯৮৮), দাঙ্গা (১৯৯১),বিদ্রোহ চারিদিকে (২০০০) ও  সাহসী মানুষ চাই (২০০৩) রাজীব চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, সংস্থা ও সংগঠনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তার প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের নাম ফ্রেন্ডস মুভিজ। বিএফডিসির ব্যবস্থাপক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন তিনি। এ ছাড়া জাতীয়তাবাদী চলচ্চিত্র পরিষদের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। 

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমটিএল

Wordbridge School
Link copied!