• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশ ব্যাংককে হাইকোর্ট দেখালো এনআরবিসি ব্যাংক


নিজস্ব প্রতিবেদক মার্চ ৩১, ২০১৭, ০৪:৪৩ পিএম
বাংলাদেশ ব্যাংককে হাইকোর্ট দেখালো এনআরবিসি ব্যাংক

ঢাকা: দেশে অবস্থিত সকল ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ ও জাতীয় অর্থনীতির অভিভাবক হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এবার সেই নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে হাইকোর্ট দেখাল বেসরকারি খাতের এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক।

বাণিজ্যিক ব্যাংকটির চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকের বিরুদ্ধে ঋণ বিতরণে দুর্নীতি, পরিচালকদের স্বাক্ষর জাল, বোর্ড সভায় বহিরাগতদের উপস্থিতি ও গ্রাহকের স্বার্থ ক্ষুণ্ণ করার অভিযোগ আনে বাংলাদেশ ব্যাংক। এজন্য কেন তাদের অপসারণ করা হবে না- তা জানতে চেয়ে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়েছিল। হাইকোর্টে গিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের দেয়া সেই নোটিশের কার্যকারিতা স্থগিত করে আনে এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকটি।

সূত্রমতে, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের পরিচালনা পরিষদের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার ফরাছত আলী ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) দেওয়ান মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে আলাদা দুটি অভিযোগ আনে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। অভিযোগে বলা হয়, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের চেয়ারম্যান ব্যাংকটিতে নেতৃত্ব দিতে ব্যর্থ হয়েছেন।

আর এমডির বিষয়ে বলা হয়, তিনি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনায় দুর্বলতা দেখিয়েছেন। তারা ব্যাংকের ঋণ বিতরণে দুর্নীতি ও গ্রাহকের স্বার্থ ক্ষুণ্ণ করেছেন। ব্যাংকিং আইন লঙ্ঘন ও ফৌজদারি অপরাধ বলে বিবেচিত এমন দশটি অভিযোগ আনা হয় তাদের বিরুদ্ধে।

গেল ২০ মার্চ তাদের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ এনে ব্যাংকটির চেয়ারম্যান ও এমডিকে কেন অপসারণ করা হবে না -তা জানতে চেয়ে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।

ব্যাংক কোম্পানি আইনের ৪৬ অনুযায়ী, কোনো বাণিজ্যিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান, পরিচালক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক যদি গ্রাহক স্বার্থের বিরুদ্ধে ক্ষতিকর কোনো কিছু করে, তাহলে তাদের অপসারণ করতে পারবে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে, আইনের ৪৬(২) ধারায় বলা আছে, অপসারণের আগে তাদের কারণ দর্শানোর নোটিশ ও আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য চিঠি দিতে হবে বাংলাদেশ ব্যাংককে। এই আইনের বলেই নোটিশ দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক।

অভিযোগের মধ্যে রয়েছে, ব্যাংকের পরিচালনা পরিষদের সদস্য না হয়েও মার্কেন্টাইল ব্যাংকের চেয়ারম্যান এম এস (শহীদুল) আহসান এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের বোর্ড সভায় যোগ দিয়েছেন। নিজ নামে শহীদুল আহসান ৩০১ কোটি টাকার ঋণ নিয়েছেন এই ব্যাংক থেকে। যা এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের মূলধন অনুযায়ী একক ঋণ গ্রাহীতার সীমা অতিক্রম ও এই প্রক্রিয়ায় ঋণ বিতরণ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালার লঙ্ঘন।

এছাড়াও ব্যাংকের চার পরিচালক বোর্ড সভায় উপস্থিত না থাকলেও তাদের স্বাক্ষর জাল করে উপস্থিতি দেখানো হয়েছে। নোয়াখালীতে একটি ফিশ ফিড মিলকে পরিচালনা পরিষদের আপত্তি সত্ত্বেও ঋণ দেয়া হয়েছে। এভাবে প্রায় সাতশত কোটি টাকার ঋণ বিতরণে দুর্নীতি করা হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের এই নোটিশের বিরুদ্ধে এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক হাইকোর্টে রিট করলে ২৮ মার্চ বিচারপতি সৈয়দ মুহাম্মাদ দাস্তগির হোসেইন ও বিচারপতি মো. আতাউর রহমানের দ্বৈত বেঞ্চ বাংলাদেশ ব্যাংকের নোটিশের কার্যকারিতা স্থগিত করে আদেশ দেন। একইসঙ্গে এই আদেশকে কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না-তা জানতে চেয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে।

এ বিষয়ে সোনালীনিউজের পক্ষ থেকে এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও কোনো মন্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

এর আগেও রাষ্ট্রায়াত্ব বেসিক ব্যাংকের সাবেক এমডি কাজী ফখরুল ইসলামের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার ও ঋণ বিতরণে অনিয়মের কারণে অপসারণ করতে এমন উদ্যোগ নিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। প্রথমে তাকে কারণ দর্শানো ও আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য চিঠি দেয়া হয়। সেই চিঠির উত্তরে সন্তুষ্ট না হলে মৌখিকভাবে আত্মপক্ষ সমর্থন করার জন্য ডেকেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। সে সময়ে ফখরুলের সেই ব্ক্তব্যেও সন্তুষ্ট হতে পারেনি বাংলাদেশ ব্যাংক।

পরে বেসিক ব্যাংকের এমডি পদ থেকে কাজী ফখরুল ইসলামকে অপসারণ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। একইসঙ্গে তাকে দুই বছরের জন্য দেশের ব্যাংকিং ও আর্থিক খাতে নিষিদ্ধ করা হয়। সেই থেকে বিদেশে আছেন এই বিতর্কিত ব্যাংকার। যেকোনো বাণিজ্যিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান বা এমডি অপসারণের ক্ষেত্রে এই প্রক্রিয়া অনুসরণ করে থাকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে, এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অভিযুক্তরা বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পরিষদের কাছে আবেদন করতে পারেন।

প্রসঙ্গত, ২০১১ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকের আপত্তি থাকা সত্ত্বেও রাজনৈতিক বিবেচনায় ৯টি ব্যাংককে অনুমোদন দেয় সরকার। এরমধ্যে প্রবাসী কোঠা বিবেচনায় যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী ইঞ্জিনিয়ার ফরাছত আলীর উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেড অন্যতম। ব্যাংক অনুমোদনের শর্ত হিসেবে ৩ বছর পরে পুঁজিবাজারে তালিকাভূক্ত হওয়ার নির্দেশ থাকলেও এখন পর্যন্ত তালিকাভূক্ত করা হয়নি বাণিজ্যিক এ ব্যাংকটি। ঋণ বিতরণে অনিয়ম ও অভ্যন্তরীণ সু-শাসনের ঘাটতি হওয়ায় ২০১৬ সালের শেষের দিকে ব্যাংকটিতে পর্যবেক্ষক নিয়োগ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।

সোনালীনিউজ/তালেব

Wordbridge School
Link copied!