• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচে কেন এত উত্তেজনা?


রবিউল ইসলাম বিদ্যুৎ জুন ১৩, ২০১৭, ০৭:৩৯ পিএম
বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচে কেন এত উত্তেজনা?

ঢাকা: হালে পাক-ভারত ম্যাচকেও হার মানিয়েছে বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচের উত্তেজনা। পাকিস্তান-ভারত ম্যাচ এখন অনেকটাই এক তরফা হয়ে গেছে। দুই পড়শি দেশের লড়াই আগের মত আর উত্তেজনা ছড়ায় না। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়গুলোতে দেখা গিয়েছে, বাংলাদেশ-ভারত মুখোমুখি হলেই তীব্র উত্তেজনা ছড়ায়। দুই দেশের সংবাদমাধ্যমে এতটা গুরুত্ব দিয়ে এই খবরগুলো ছাপা হচ্ছে যা গোগ্রাসে গিলছে বাংলাদেশ-ভারতের সমর্থকেরা। কোনও সাবেক ক্রিকেটার একটু নেতিবাচক কথা বললে হয়, আর অমনি খবরের জন্য গরম মসলা হয়ে গেল। যেটা খুব সহজেই একশ্রেণীর পাঠককে গেলানো যায়।

শুধু যে সংবাদমাধ্যম তা নয়, মাঠ এবং মাঠের বাইরেও ভারত-বাংলাদেশ ম্যাচ আলোচনার জন্ম দিয়ে যাচ্ছে। আগে এরকম ছিল না। এর শুরুটা হয়েছিল ২০০৭ ক্যারিবিয়ান বিশ্বকাপে। সেবার হাবিবুল বাশারের বাংলাদেশ ধরে দিয়েছিল ভারতকে। ম্যাচের আগে মাশরাফির করা সেই বিখ্যাত উক্তিটি ‘ধরে দেবানি’ শেষ অবধি সফল হয়েছিল। ওই ম্যাচের আগে নাকি লিফটে অনীল কুম্বলেদের সঙ্গে দেখা হয়েছিল মাশরাফির। তাঁরা এমনভাবে গল্প করছিল যেন মাঠে নামার আগেই বাংলাদেশকে হারিয়ে দিয়েছে। এটা মাশরাফিকে তাঁতিয়ে দিয়েছিল। শেবাগের স্ট্যাম্প উপড়ে তাঁর জবাবও দিয়েছিলেন নড়াইল এক্সপেস।

চট্টগ্রামে টেস্ট খেলতে এসে বিরেন্দ্র শেবাগ সটান বলে দিলেন এই টেস্ট বাংলাদেশ জিতবে না। কেন? শেবাগের উত্তর,‘ বাংলাদেশের বিশ উইকেট নেওয়ার মত বোলার নেই।’ তাঁর এই কথা সহজভাবে নিতে পারেনি বাংলাদেশের সমর্থকরা। কথার লড়াইয়ের শুরুটা হলো এখান থেকেই। শেবাগ বাংলাদেশের সমর্থকদের কাছে রীতিমত শত্রুতে পরিণত হলেন।

বড় রেষারেষি হয়েছে ২০১৫ বিশ্বকাপের বাংলাদেশ-ভারত কোয়ার্টার ফাইনালে। রুবেল হোসেনের ফুল টস বলে ক্যাচ দিয়ে ড্রেসিংরুমের দিকে হাঁটা শুরু করলেন রোহিত শর্মা। কিন্তু হঠাৎ আম্পায়ার ‘নো’ বল ডেকে বসলেন। বিস্ময়ে স্তব্ধ গোটা বাংলাদেশ। পরে এটা নিয়ে স্বয়ং কথা বলেছেন তৎকালিন বাংলাদেশের আইসিসি প্রেসিডেন্ট আ হ ম মুস্তফা কামাল। পরে সংবাদ সম্মেলনে মাশরাফিও নিজের অসুন্তষ্টির কথা লুকাতে পারেননি। মাঠের বাইরেও দাপট দেখিয়ে জায়ান্ট স্ক্রিনে ভারতকে উদ্বুদ্ধ করার বিজ্ঞাপণ দেখানো হয়েছে। এটা নিয়েও প্রতিবাদ করেছেন মুস্তফা কামাল।

এখানেই শেষ নয়, তখন আইসিসির চেয়ারম্যান ছিলেন এন শ্রীনিবাসন। মুস্তফা কামাল ভারতের বিপক্ষে কথা বলায় ক্ষেপে যান শ্রীনি। তাই ফাইনালে বিজয়ীর হাতে আইসিসি প্রেসিডেন্টের ট্রফি তুলে দেয়ার কথা থাকলেও এই কাজটি করেন চেয়ারম্যান শ্রীনি। যেটা ক্ষমতার দাপট ছাড়া আর কিছু ছিল না। মুস্তফা কামাল তো বটেই, এটা বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীরা ভালোভাবে গ্রহণ করেনি। দেশে ফিরেই আইসিসির প্রেসিডেন্ট পদ থেকে সরে দাঁড়ান তিনি।

বিশ্বকাপের পর ধোনির ভারত বাংলাদেশে এসে পর পর দুই ম্যাচে হেরে সিরিজ বিসর্জন দিয়ে ফেলে। মাশরাফি-তাসকিনদের উদযাপন পছন্দ হয়নি ভারতীয়দের। তাদের কারও কারও মনে হয়েছিল, উদযাপন শালীনতা ছাড়িয়েছিল। অল্প কিছুদিনের ব্যবধানে আবার ভারত বাংলাদেশে আসে এশিয়া কাপ খেলতে। এবার সোশ্যাল মিডিয়ায় অন্যরকম ঘটনা ঘটে যায়। সেখানে দেখা যায়, ধোনির কাটা মুন্ডু তাসকিনের হাতে ধরানো। এটা ভালোভাবে নেয়নি ভারতীয়রা। ফাইনালে বাংলাদেশকে হারিয়ে তাঁরাও ধোনির হাতে তাসকিনের কাটা মুন্ডু তুলে দেয়।

২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও উত্তেজনার ঢেউ আছড়ে পড়েছিল। বেঙ্গালুরুর এই ম্যাচটি বাংলাদেশের হৃদয় ভেঙে দিয়েছিল। জেতা ম্যাচ মুশফিকদের হাতছাড়া করতে হয়েছিল ১ রানে হেরে।

এবার এজবাস্টনে মুখোমুখি বাংলাদেশ-ভারত, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে। মাঝে একটা দিন রয়েছে।কিন্তু তাঁর আগেই সব টিকিট শেষ। ভারতীয়রা আগেভাগে সব টিকিট কেটে নিয়েছে। এজবাস্টনে অনেক বাংলাদেশী থাকেন। তাঁরা টিকিটের জন্য হ্যাপিত্যেশ করছেন। কিন্তু করলে কী হবে, সব টিকেট যে চলে গেছে ভারতীয়দের পকেটে! বাংলাদেশীরাও বসে নেই। তাঁরা যে কোন মূল্যে টিকেট সংগ্রহের চেষ্টা চালাচ্ছে। বৈশ্বিক কোনও আসরে এই প্রথম বাংলাদেশ সেমিফাইনালে উঠেছে। এই ঐতিহাসিক ক্ষণের কে না সাক্ষি হতে চায়? মাশরাফিরা কী পারবে বাংলাদেশের ক্রিকেটে নতুন ইতিহাস লিখতে? উত্তরটা না হয় সময়ের হাতেই তোলা থাক।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/আরআইবি/জেডআই

Wordbridge School
Link copied!