• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

বাংলাদেশ-মিয়ানমার সংলাপ চায় চীন


জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক নভেম্বর ১৮, ২০১৭, ১০:৫৫ পিএম
বাংলাদেশ-মিয়ানমার সংলাপ চায় চীন

ঢাকা: রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে আলোচনায় মধ্যস্থতার প্রস্তাব দিয়েছে চীন। সফররত চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই শনিবার(১৮ নভেম্বর) বিকালে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাতে এই প্রস্তাব দিয়েছেন।

বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের বলেন, চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে ডায়ালগ আয়োজনে ইচ্ছুক চীন। প্রায় তিন মাস আগে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সেনাবাহিনীর দমন অভিযানের মুখে দলে দলে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশ আসতে শুরু করলে এই সমস্যার সমাধানে চীনের শরণ নেওয়ার পরামর্শ দেন কূটনীতিকরা। 

মিয়ানমারের ঘনিষ্ঠ মিত্র চীনই দেশটির সেনাবাহিনীর সবচেয়ে বড় অস্ত্র সরবরাহকারী। দেশটিতে বিপুল বিনিয়োগ রয়েছে চীনের। রোহিঙ্গা সঙ্কটের অবসানে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের থার্ড কমিটিতে ১৫ নভেম্বর প্রস্তাব পাস হওয়ার দুদিন পর চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশে এসেছেন।

ওই প্রস্তাবে অবিলম্বে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর অভিযানের ইতি টানতে এবং রোহিঙ্গাদের পূর্ণ অধিকার দিয়ে নাগরিকত্ব দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।

প্রস্তাবটি নিয়ে ভোটাভুটিতে ১৩৫টি দেশ এর পক্ষে ভোট দেয়, বিপক্ষে যে ১০টি দেশ ভোট দিয়েছিল তার মধ্যে চীনও ছিল। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবর অনুযায়ী, চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশ থেকেই মিয়ানমারে যাবেন। সোম ও মঙ্গলবার নাইপিদোতে এশিয়া ও ইউরোপীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে যোগ দেওয়ার কথা রয়েছে তার।

বৈঠকে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ-চীন-ভারত-মিয়ানমার (বিসিআইএম) নিয়ে যে অর্থনৈতিক করিডোর বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়েছে, রোহিঙ্গা সমস্যার কারণে তাতে ধীরগতি আসতে পারে বলে তারা মনে করছেন।

রোহিঙ্গা সংকট বাংলাদেশের জন্য ‘বড় চ্যালেঞ্জ’ বলে মন্তব্য করেন ইয়াং ই। তিনি বলেন, এটা মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সমস্যা, এই সমস্যা এখন বাংলাদেশকে প্রভাবিত করেছে। বৈঠকে রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে মিয়ানমারের ওপর চাপ বাড়ানোর আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

গত ২৪ অগাস্ট রাতে একযোগে মিয়ানমারের ৩০টি পুলিশ পোস্ট ও একটি সেনা ঘাঁটিতে সন্ত্রাসী হামলার পর রাখাইনে রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে অভিযান শুরু করে দেশটির সেনাবাহিনী। তাদের দমন-পীড়নের মুখে ইতোমধ্যে সোয়া ছয় লাখের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়েছে।

 রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে আন্তর্জাতিক চাপের মুখে দেশটির স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চির দপ্তরের এক মন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরের পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের নেতৃত্বে বাংলাদেশের একটি প্রতিনিধি দলও মিয়ানমার সফর করেছে। আলোচনায় রোহিঙ্গাদের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনে একটি যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠনের সিদ্ধান্ত হলেও এখনও তার কোনো অগ্রগতি নেই।

পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের দুর্দশার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা মানবিক কারণে তাদের আশ্রয় দিয়েছি। সংকটের স্থায়ী সমাধানে নিরাপত্তা ও মর্যাদা দিয়ে মিয়ানমারকে তাদের নাগরিকদের ফেরত নিতে হবে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে মিয়ানমারের সম্পর্ক ভালো, কিন্তু এরা (রোহিঙ্গা) তাদের নাগরিক। তাই তাদের ফেরত নিতে হবে। সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদের প্রতি বাংলাদেশ সরকারের ‘জিরো টলারেন্সের’ কথা পুনর্ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের ভূমি ব্যবহার করে প্রতিবেশী কোনও দেশে বিচ্ছিন্নতাবাদী কর্মকাণ্ড চালাতে দেওয়া হবে না।

বৈঠকে বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে সহযোগিতার কথাও তুলে ধরেন সেদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। শেখ হাসিনার বেইজিং সফর ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিংয়ের ঢাকা সফরের সময় দুই দেশের মধ্যে গৃহীত বিভিন্ন সহযোগিতামূলক পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করেন ওয়াং ই।

তিনি বলেন, সাউথ সাউথ সহযোগিতার আওতায় চীন বাংলাদেশকে আরও সহযোগিতা করতে চায়। শি জিন পিং পুনরায় চীনা কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে অভিনন্দন পাঠিয়েছিলেন। সেজন্য শিয়ের ধন্যবাদ বার্তা শেখ হাসিনাকে পৌঁছে দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

সাক্ষাতে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী, প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভী, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব, চীনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এবং বাংলাদেশে চীনের রাষ্ট্রদূত উপস্থিত ছিলেন।

সোনালীনিউজ/আতা

Wordbridge School
Link copied!