• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিককে যুক্তরাষ্ট্রের না


আন্তর্জাতিক ডেস্ক ফেব্রুয়ারি ২২, ২০১৭, ০৭:১৩ পিএম
বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিককে যুক্তরাষ্ট্রের না

ঢাকা: এটি আমাকে এতো ছোট করে দিয়েছে, যেন আমি বড় কোনো অন্যায় করেছি। সবাই আমার দিকে তাকিয়ে ছিল। আমি কোথায় তাকাবো তা, ঠিক করতে পারছিলাম না। মনে হয়েছিল আমি যেন একজন অপরাধী।

বিমান থেকে নামিয়ে দেয়ার পরে ব্রিটিশ গণমাধ্যমকে এভাবেই নিজের তিক্ত অনুভূতির কথা বলেছেন জুহেল মিয়া। 

বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এক ব্রিটিশ নাগরিক জুহেল মিয়াকে যুক্তরাষ্ট্রে যেতে দেওয়া হয়নি। বৈধ ভিসা ও কাগজপত্র থাকা সত্বেও যুক্তরাষ্ট্রগামী একটি বিমান থেকে তাকে নামিয়ে দেয়া হয়েছে। জুয়েল যুক্তরাজ্যে ওয়েলসের একটি বিদ্যালয়ের গণিতের শিক্ষক। তবে কোনো কারণ ব্যাখ্যা করেনি আইসল্যান্ডের পুলিশ।

গত ১৬ ফেব্রুয়ারি আইসল্যান্ডের রিকজাভিক বিমানবন্দরে এ ঘটনা ঘটে। পরবর্তিতে ব্রিটিশ মিডিয়া ফলাও করে এ সংবাদ প্রকাশ করে।

জুহেলকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগদাতা নিথ পোর্ট টালবোট কাউন্সিল লন্ডনের মার্কিন দূতাবাসের কাছে এই ঘটনায় ব্যাখ্যা দাবি করেছে। একইসঙ্গে জুহেল মিয়ার প্রতি যে আচরণ করা হয়েছে এতে তারা বিস্মিত বলে উল্লেখ করেছে। কাউন্সিলের একজন মুখপাত্র ঘটনাটিকে অন্যায় এবং বৈষম্যমূলক উল্লেখ করে বলেন, জুহেল মিয়া একজন ব্রিটিশ নাগরিক, এ ছাড়া ভিন্ন কোনো দেশের নাগরিকত্ব তার নেই।

ব্রিটেনের গণমাধ্যম বলছে, বাংলাদেশি পরিবারের সন্তান জুহেল মিয়ার(২৫) জন্ম ওয়েলসের সোয়ানিসতে। তিনি ওয়েলসের নেথ পোর্ট টালবোট এলাকার ল্যানগেটগ কম্প্রিহেনসিভ স্কুলের শিক্ষক। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে তিনি আইসল্যান্ডে শিক্ষা ভ্রমণে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে তাদের নিউইয়র্কে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে ছাড়াই বাকীরা যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান। 

জুহেল মিয়া সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, বিমানবন্দরে চেক ইন করার সময় তার পাসপোর্ট দেখেই বলা হয় যে, তাকে নিরাপত্তার স্বার্থে তল্লাশি করা হবে। এরপর আলাদা একটি কক্ষে নিয়ে তার জিনিসপত্র ও পুরো শরীর তল্লাশি করা হয়। প্রায় পাঁচ মিনিট ধরে চলে ওই তল্লাশি। এরপর তাকে বিমানে ওঠার অনুমতি দেওয়া হয়। তিনি শিক্ষার্থী ও সহকর্মীদের নিয়ে বিমানে ওঠেন। বিমান ওড়ার কিছুক্ষণ আগে কয়েকজন নিরাপত্তারক্ষী গিয়ে তাকে বিমান থেকে নামিয়ে আনেন। তাকে শুধু বলা হয়, তিনি যুক্তরাষ্ট্রে যেতে পারবেন না। 

জুহেল আরো বলেন, যখন আমি কেবিন থেকে আমার ব্যাগ নিচ্ছিলাম, তখন সবাই আমার দিকে তাকিয়ে ছিল। পুরো বিমানে সুনসান নীরবতা। আমার কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রী, সহ-কর্মীরা আমার দিকে তাকিয়ে ছিল। সঙ্গে থাকা শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরাও বুঝতে পারছিল না কি করবে। এটি আমাকে এতো ছোট করে দিয়েছে, যেন আমি বড় কোনো অন্যায় করেছি। আমি কোথায় তাকাবো তা, ঠিক করতে পারছিলাম না। মনে হয়েছিল আমি যেন একজন অপরাধী।

আমি কোনো অন্যায় করিনি। ক্রিমিনাল কোনো রেকর্ড নেই আমার। যথাযথ প্রক্রিয়া মেনেই আমি বোর্ডিং পাস সংগ্রহ করেছিলাম। শুধু আমি একজন মুসলিম তাই আমার প্রতি এমন আচরণ করা হল। এটি যেন, আর কারও সঙ্গে না হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, জুহেলকে বিমান থেকে নামিয়ে আনার পর দুই ঘণ্টা তাকে একটি হোটেলে রাখা হয়। এরপর তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। আইসল্যান্ডে অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস থেকেও কোনো সাহায্য পাননি তিনি। পরদিন তিনি যুক্তরাজ্যে ফিরে যান।  

যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত ২৭ জানুয়ারি এক বিতর্কিত নির্বাহী আদেশে সাতটি মুসলিম অধ্যুষিত দেশের নাগরিকদের দেশটিতে প্রবেশ নিষিদ্ধ করেন। ১০ ফেব্রুয়ারি মার্কিন আদালতে ওই নিষেধাজ্ঞা স্থগিত হয়ে যায়। 

সাতটি দেশের তালিকায় বাংলাদেশের নাম ছিল না। তারপরেও কোনো কারণ না জানিয়েই জুহেলের সঙ্গে এমন আচরণ করা হয়।

ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞার পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তরাজ্য সরকার এক বিবৃতিতে আশ্বস্ত করেছিল যে, জন্ম যে দেশেই হোক ব্রিটিশ পাসপোর্টধারী কোনো ব্যক্তি যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞার সম্মুখীন হবেন না। যুক্তরাজ্য সরকারের এই ঘোষণার নির্ভরযোগ্যতা নিয়েও এখন প্রশ্ন উঠেছে।  

সোনলীনিউজ/আতা 

Wordbridge School
Link copied!