• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বাচ্চারা পাল্টে দিয়েছে বাবুলের জীবন


নিজস্ব প্রতিবেদক মার্চ ১৬, ২০১৭, ০২:১৮ পিএম
বাচ্চারা পাল্টে দিয়েছে বাবুলের জীবন

বাবুল আক্তার। ছবি: সংগৃহিত

ঢাকা: সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের চলাফেরা ও দিনের রুটিন পাল্টিয়ে দিয়েছে মা হারা ছেলে ও মেয়ে। এই কিছু দিন আগেও তিনি ঘুম থেকে উঠতেন সকাল ৮টায় কিন্তু এখন উঠতে হয় ভোর ৬টায়। এর জন্য তিনি তার ছোট্ট মেয়ে নিখাদ ও ছেলে মাহিরকেই সামনে এনেছেন।

বৃহস্পতিবার (১৬ মার্চ) সকাল নয়টায় বাবুল আক্তার তার ফেসবুকে এক পোস্টের মাধ্যমে এ তথ্য দিয়েছেন। সোনালীনিউজের পাঠকদের জন্য সেই পোষ্ট হুবহু তুলে ধরা হলো...

‘দশ মাস আগেও আমার সকাল হত আটটায়। এখন রুটিন বদলে গেছে সময়ের তাড়নায়।আমার মেয়ে পড়ে নার্সারিতে আর ছেলে দ্বিতীয় শ্রেণীতে। মেয়ের স্কুল সকালে। তাই আমার রোজ ভোর ছ'টায় উঠতে হয়। নিজে ফ্রেশ হয়ে মেয়েকে উঠাই। এত ভোরে প্রায় দিনই মেয়ে উঠতে চায় না। রাতে ঘুমানোর আগে বলে রাখে, ‘বাবা, আমি যদি সকালে না উঠি তাহলে আমার চোখে পানি দিয়ে দিও, ঠিক আছে?’ না, আমি চোখে পানি দিই না। বরং আদরে আদরে ঘুম থেকে উঠিয়ে রেডি করি তাকে। আমার মা নাশতা রেডি করেন। নাশতা করিয়ে মেয়েকে স্কুলে নিয়ে যাই। 

বাবুল আক্তারের ফেসবুক থেকে নেয়া

বাবাভক্ত মেয়ে আমার, তাকে ক্লাসে বসিয়ে আসার সময় কাছে টেনে কানে কানে বলে, ‘বাবা, আমাকে কিন্তু নিতে আসবা।’ বাসায় ফিরে ছেলেকে ঘুম থেকে উঠিয়ে নাশতা করিয়ে নিজে নাশতা সেরে তারপর যাই অফিসে। এরপর শত ঝামেলার মাঝেও মেয়েকে স্কুল থেকে নিয়ে আসি। সারাদিন ফোনে তদারকি করি। মেয়ে দুপুরের ভাতটুকু আমার হাতে ছাড়া খায় না। খেয়ে মেয়েকে ঘুম পাড়ানো, আবার ছেলেকে আনতে যাওয়া। এসবের মাঝেই অফিস করা।

আমার ছেলে-মেয়ে আমার দেখা সবচেয়ে যৌক্তিক শিশু। যেকোন বিষয় তাদের সঠিক যুক্তিতে বুঝালে তারা বুঝে। যেমন, মাঝে নানারবাড়ি থাকার সময় বাচ্চারা খুব ডিভাইসনির্ভর হয়ে উঠেছিল। কিন্তু, ডিভাইসের অত্যাধিক ব্যবহার মানেই শারিরীক আর মানসিক বিকাশের ক্ষতি, একথাটি আমি তাদের বিভিন্নভাবে বুঝিয়েছি। অত্যধিক ডিভাইস ব্যবহারের ক্ষতিকর দিক নিয়ে নানা গল্প আর ভিডিও দেখিয়েছি তাদের। আর আমি নিজে বাচ্চাদের সামনে পারতপক্ষে ডিভাইস ব্যবহারই করি না। প্রতিদিন আমরা তিনজন একসাথে গল্পের বই পড়ি আর ড্রইং করি। প্রথমদিকে বই পড়তে তারা পছন্দ করত না আর এখন গল্প না পড়ে রাতে ঘুমাতেই পারে না।

মায়ের মৃত্যুর পর থেকে ছেলে মানসিকভাবে খুবই বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল। কারও সাথে মিশতে বা খেলতে চাইত না। কিন্তু সঠিকভাবে বেড়ে উঠতে হলে খেলাধুলা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই প্রথমদিকে ছেলেকে খেলা দেখাতে স্টেডিয়ামে নিয়ে যেতাম। তারপর সে নিজেই খেলাধুলায় আগ্রহী হয়ে উঠে। পাশাপাশি যেহেতু তারা দুজনেই ছবি আঁকতে ভালোবাসে তাই তাদের ছবি আঁকার স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিয়েছি। 

নানা এক্সট্রা কারিকুলাম অ্যাক্টিভিটিসে ছেলেটা ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে। এতটা মানসিক চাপ আর প্রতিকূলতার মাঝেও পড়াশুনায় নিয়মিত ভাল করছে সে। রোজ রোজই খাতায় ‘স্টার’ নিয়ে আসে। আমি মজা করে বলি এত স্টার কোথায় রাখব। ছেলে হাসে।

কোন কিছু কিনতে গেলে ছেলে-মেয়ে দুজনেই আগে দাম জানতে চায়। তারপর জিজ্ঞেস করে পকেটে কত টাকা আছে। যদি বেশি দাম হয় তবে বরং আমারই বাচ্চাদের বুঝিয়ে সেটা কেনার জন্য রাজি করাতে হয়। নিজের জামাকাপড় আর পড়ার রুম ভীষণ পরিপাটি করে গুছিয়ে রাখে দুজনেই।

আর মেয়েটা নিজের জন্য যা কিনবে তা তার বাবার জন্যও চাই। নিজে যা খাবে তা তার বাবাকেও খাওয়ানো চাই। তার মুখের এক একটা বুলি যেন ময়নার বুলি। আমি আদর করে তাকে ডাকি ‘ময়না’।

প্রতিনিয়ত শুভানুধ্যায়ীরা ফোনে এবং ম্যাসেজে বাচ্চাদের সম্পর্কে জানতে চান। সকলের শুভকামনায় সব বাঁধা পেরিয়ে বেড়ে উঠুক আমার মাহির আর নিখাদ।

সোনালীনিউজ ডটকম/ঢাকা/এআই

Wordbridge School
Link copied!