• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

বাজারেই নাভিশ্বাস


নিজস্ব প্রতিবেদক অক্টোবর ২৭, ২০১৭, ০৯:২২ পিএম
বাজারেই নাভিশ্বাস

ঢাকা: নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বৃদ্ধিতে নাভিশ্বাস উঠেছে সাধারণ মানুষের। রাজধানীর বাজারগুলোতে লাগামহীনভাবে বেড়েই চলছে পেঁয়াজের দাম। এক মাসের ব্যবধানে দেশি ও আমদানি করা পেঁয়াজের দাম বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি। 

বাজারগুলোতে এখনও চড়া দামেই বিক্রি হচ্ছে শাকসবজি। চালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় হিমশিম খাচ্ছেন গড়পড়তা আয়ের ক্রেতারা। শুক্রবার (২৭ অক্টোবর) কারওয়ানবাজার, রামপুরা, মালিবাগ চৌধুরীপাড়া এবং খিলগাঁও অঞ্চলের বিভিন্ন বাজার ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে।

রাজধানীর বাজারগুলোতে দেখা যায়, পটল, ঝিঙা, করলা, ঢেঁড়স, ধুন্দল, বেগুন কোনো সবজিই প্রতি কেজি ৪০ টাকার নিচে মিলছে না। ২০ টাকা আঁটি বিক্রি হচ্ছে লাল শাক।

চড়া দামের সঙ্গে দাম বাড়ার তালিকায় নতুন করে স্থান করে নিয়েছে পেঁয়াজ, টমেটো, শিম ও গাজর। গত সপ্তাহে ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া দেশি পেঁয়াজ এখন বিক্রি হচ্ছে ৭০-৭৫ টাকা দরে। ১১০-১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া টমেটোর দাম বেড়ে হয়েছে ১৪০-১৫০ টাকা। শীতের আগাম শিম বিক্রি হচ্ছে ১২০-১৩০ টাকা কেজি। যা আগের সপ্তাহে ছিল ১০০-১১০ টাকা। আর গাজরের কেজি ৮০ থেকে বেড়ে হয়েছে ১২০ টাকা।

ব্যবসায়ীরা জানান, ভারতে পেঁয়াজের দাম বাড়ার প্রভাব পড়েছে দেশের বাজারে। আগে ভারত থেকে যে দামে পেঁয়াজ আমদানি করা যেতো, এখন সেই পেঁয়াজ আমদানি করতে প্রায় দ্বিগুণ খরচ পড়ছে। ফলে আমদানি করা পেঁয়াজের দাম বেড়েছে।

আর আমদানি করা পেঁয়াজের দাম বাড়ার প্রভাব পড়েছে দেশি পেঁয়াজের ওপর। বড় ব্যবসায়ীরা সুযোগ বুঝে অতিরিক্ত মুনাফার জন্য দেশি পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। তিন দিনের টানা বৃষ্টি তাদের দাম বাড়ানোর পথ সুগম করে দিয়েছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।

খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, বড় ব্যবসায়ীরা বৃষ্টির অজুহাতে দেশি পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। তাদের অজুহাত বৃষ্টিতে কিছু পেঁয়াজ নষ্ট হয়েছে এবং কিছু খেতও নষ্ট হয়েছে। তবে বাস্তবতা হলো বৃষ্টিতে পেঁয়াজের তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি। মূলত আমদানি করা পেঁয়াজের দাম বাড়ার কারণে অতিরিক্ত মুনাফার লোভে বড় ব্যবসায়ীরা দেশি পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন।

বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজার ও মান ভেদে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৭৫ টাকায়। যা গত সপ্তাহে ছিল ৫০ থেকে ৫৫ টাকা কেজি। অর্থৎ এক সপ্তাহের ব্যবধানে দেশি পেঁয়াজের দাম কেজিতে বেড়েছে ২০ টাকার ওপর। আর এক মাসের হিসেবে দেশি পেঁয়াজের দাম কেজিতে বেড়েছে প্রায় ৪০ টাকা। সেপ্টেম্বরের শেষের দিকেও প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৩৫ থেকে ৪০ টাকায়।

এদিকে আমদানি করা পেঁয়াজের মধ্যে খোসা ওঠা বড় আকারের ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকায়। আর ছোট আকারের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে। এক সপ্তাহ আগেও এই পেঁয়াজের দাম ছিল ৪০ থেকে ৪৫ টাকা। আর সেপ্টেম্বর মাসে আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ২০ থেকে ২৫ টাকা কেজি দরে।

কারওয়ানবাজারে পেঁয়াজ কিনতে আসা তেজগাঁওয়ের বাসিন্দা মো. ইয়াসিন বলেন, গত মাসে এক পাল্লা (৫ কেজি) দেশি পেঁয়াজ কিনেছি ১৭৫ টাকা দিয়ে। এখন সেই পেঁয়াজের দাম চাচ্ছে ৩২৫ টাকা। এক মাসের ব্যবধানেই পেঁয়াজের দাম বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে।

খিলগাঁও বাজারে পেঁয়াজ কিনতে আসা আশেয়া বেগম বলেন, গত সপ্তাহে এক কেজি পেঁয়াজ কিনেছিলাম ৫৫ টাকা দিয়ে। এখন সেই পেঁয়াজের দাম চাচ্ছে ৭০ টাকা। ব্যবসায়ীরা বলছেন দাম বেড়ে গেছে। পেঁয়াজ ছাড়া তো আর কোনো তরকারি রান্না করা যায় না, তাই দাম বাড়লেও কিছু করার নেই। বেশি দামেই কিনতে হচ্ছে।

কারওয়ানবাজারের ব্যবসায়ী মো. হাসান বলেন, দুই সপ্তাহ ধরে পেঁয়াজের দাম বেশি। ভারতে পেঁয়াজের দাম বাড়ার কারণে এই দাম বেড়েছে। ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি করতে এখন আগের চেয়ে দ্বিগুণ টাকা লাগছে। ফলে আমাদের বাজারেও আমাদানি করা পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। আর ভারতে দাম বাড়লে স্বাভাবিকভাবেই আমাদের দেশি পণ্যেরও দাম বেড়ে যায়। তাই দেশি পেঁয়াজেরও দাম বেড়েছে। তবে আমদানি করা পেঁয়াজের দাম যে হারে বেড়েছে, দেশি পেয়াজের দাম সে হারে বাড়েনি।

রামপুরা জামতলা বাজারের ব্যবসায়ী মো. কামাল হোসেন বলেন, এক সপ্তাহ আগেও দেশি পেঁয়াজ বিক্রি করেছি ৬০ টাকা কেজি দরে। এখন বিক্রি করতে হচ্ছে প্রতি কেজি ৭৫ টাকায়। আর আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি করতে হচ্ছে ৫৫ টাকায়। আমাদের কিছুই করার নেই। পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে বেশি দামে কিনে আনতে হচ্ছে, তাই বিক্রি করতে হচ্ছে বেশি দামে।

পাইকাররা কেন দাম বেশি রাখছেন জানতে চাইলে এ ব্যবসায়ী বলেন, বড় ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন পেঁয়াজের আমদানি খরচ বেড়ে গেছে। সেই সঙ্গে বৃষ্টিতেও কিছু পেঁয়াজ নষ্ট হয়েছে। ফলে পেঁয়াজের সরবরাহ কিছুটা কম। এসব কারণেই পেঁয়াজের দাম বেড়ে গেছে।

তবে গত সপ্তাহের তুলনায় কিছুটা কমেছে সাদা ব্রয়লার মুরগির দাম। রামপুরা এলাকার বাজারে সাদা বয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১২০-১২৫ টাকা কেজি দরে। যা গত সপ্তাহে ছিল ১৩৫-১৪০ টাকা কেজি। তবে লেয়ার মুরগি আগের মতই ১৬০-১৬৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, শীতের সবজি হিসেবে পরিচিত ফুলকপি, বাধাকপি, শিম, লাউ বাজারে এসেছে বেশ আগেই। এর সঙ্গে ঝিঙা, পটল, করলা, ঢেঁড়স, ধুন্দল, চিচিঙ্গিা, বেগুনসহ বাজারে সব সবজিই ভরপুর আছে। তবে যে হারে আমদানি রয়েছে দাম তার তুলনায় একটু বেশিই।

এ প্রসঙ্গে তারা জানান, তিন দিনের টানা বৃষ্টিতে কিছু ফসল নষ্ট হয়েছে। এ কারণে দাম বেড়েছে। টানা বৃষ্টি না হলে এখন সব সবজিই আরও কম দামে পাওয়া যেত। তবে সামনে আর বৃষ্টি-বন্যা না হলে এক মাসের মধ্যেই দাম কমে যাবে।

বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গত সপ্তাহের মতো আজও প্রতি কেজি পটল ৪০-৪৫ টাকা, করলা ৪০-৫০ টাকা, ধন্দুল ও ঝিঙার দাম ১০ টাকা বেড়ে ৫০-৬০ টাকা, বেগুন ও ঢেঁড়স আগের সপ্তাহের মতোই ৬০-৬৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

এ ছাড়া চলতি মাসের শুরুতে হঠাৎ বেড়ে যাওয়া কাঁচামরিচ এখনও ১৪০-১৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর ডিমের হালি বিক্রি হচ্ছে ২৮-৩০ টাকা দরে।

এদিকে, লালশাক ও সবুজশাকের আঁটি বিক্রি হচ্ছে ২০-২৫ টাকা এবং পুঁইশাক ৩০-৪০ টাকা দরে। কলমি ও মুলাশাকের আঁটি ১০-১৫ টাকা, লাউ শাক ৩৫-৪০ টাকা এবং ডাটা ২৫-৩০ টাকার নিচে মিলছে না।

রামপুরা জামতলা বাজারের বিক্রেতা মো. জামাল বলেন, বাজারে সবজির কোনো অভাব নেই। কিন্তু দাম একটু চড়া। বৃষ্টি না হলে দাম কিছুটা কমে যেত।
এই ব্যবসায়ী বলেন, বাজার ঘুরে দেখেন লাল শাকের আঁটি বিক্রি হচ্ছে ২০ টাকার ওপরে। অথচ বৃষ্টির আগে লাল শাকের দাম কমে ১০ থেকে ১৫ টাকা হয়েছিল। শাকের দাম না কমলে সবজির দামও সহসা কমবে না।

খিলগাঁও বাজারের সবজি বিক্রেতা মো. রুবেল মিয়া বলেন, টমেটো, শিম, লাউ, গাজর ছাড়া প্রায় সব সবজির দাম কিছুটা কমেছে। এক মাস আগে তো কোনো সবজিই ৬০ টাকার নিচে পাওয়া যেত না। এখন পটল, করলা, কাকরোল, বরবটি ৪০-৫০ টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে।

এ ব্যবসায়ীর মতেও টানা বৃষ্টি না হলে সবজির দাম আরও কমে যেতে। এখন বড় কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে সবজির দাম আরও কমবে।
তিনি বলেন, বাজারে ইতিমধ্যে শীতের অনেক সবজি চলে এসেছে। আগামী মাস থেকে সরবরাহ আরও বাড়বে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই কমে যাবে দাম।

সোনালীনিউজ/জেএ  

Wordbridge School
Link copied!