• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বাজেটের দ্বিগুণের বেশি আমানত ব্যাংকে


অর্থনৈতিক রিপোর্ট মার্চ ১২, ২০১৮, ০১:৪০ পিএম
বাজেটের দ্বিগুণের বেশি আমানত ব্যাংকে

ঢাকা : দেশের ব্যাংকিং খাতে আমানতের পরিমাণ রেকর্ড ছুঁয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে, ২০১৭ সালের ডিসেম্বর শেষে এই আমানত দাঁড়িয়েছে ৯ লাখ ২৬ হাজার ১৭৮ কোটি টাকা, যা স্বাধীনতার পর এযাবৎকালের সর্বোচ্চ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিক মার্চ মাস শেষে এই আমানত ১০ লাখ কোটি টাকার মাইলফলক ছুঁতে পারে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, বর্তমানে ব্যাংকিং খাতে যে আমানত দাঁড়িয়েছে তা সরকারের চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটের প্রায় আড়াই গুণ। সরকার গত জুনে চলতি অর্থবছরের জন্য ৪ লাখ ২৬৬ কোটি টাকার রেকর্ড বাজেট ঘোষণা করেছে। আর দেশের ৫৭টি ব্যাংকে ডিসেম্বর মাস শেষে আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯ লাখ ২৬ হাজার ১৭৮ কোটি ৩০ লাখ টাকা। সে হিসাবে ব্যাংকগুলোতে আমানত বাজেটের ২ দশমিক ৩৩ গুণ বেশি। অর্থাৎ ব্যাংকগুলোতে যে আমানত রয়েছে তা দিয়ে বর্তমান বাজেট অনুযায়ী দুই বছরেরও বেশি সময়ের ব্যয় মেটানো যাবে।

গত নয় বছরে ব্যাংকিং খাতে আমানত বেড়েছে প্রায় সাড়ে তিন গুণ। ফলে ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ সক্ষমতা বেড়েছে। তবে নতুন বছরের শুরুতে ব্যাংকগুলোতে নগদ টাকার টানাটানি দেখা দিয়েছে। যার ফলে ব্যাংকগুলো সুদহার বাড়িয়ে দিয়ে আমানত সংগ্রহের প্রতিযোগিতা শুরু করেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য থেকে দেখা যায়, ২০০৮ সালে দেশে ব্যাংকিং খাতে মোট আমানতের পরিমাণ ছিল ২ লাখ ৭৮ হাজার ৬৮০ কোটি টাকা। বর্তমানে ব্যাংকে মোট আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯ লাখ ২৬ হাজার ১৭৯ কোটি ৩০ লাখ টাকা। অর্থাৎ টাকার হিসাবে আট বছরে আমানত বেড়েছে ৬ লাখ ৪৭ হাজার ৪৯৮ কোটি টাকা। এই পরিমাণও বাজেটের প্রায় দেড় গুণ। মোট আমানতের ২ লাখ ১৪ হাজার ২৫৯ কোটি টাকা আবার রয়েছে দেশে পরিচালিত ৮টি ইসলামী ব্যাংকের কাছে।

ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকিং খাতে মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮ লাখ ৪৪ হাজার ৪৩৫ কোটি ৬০ লাখ টাকা। ঋণের এই পরিমাণ সরকারি-বেসরকারি খাত মিলিয়ে, যা ২০০৮ সালে ছিল ২ লাখ ৯ হাজার ৫০ কোটি টাকা। অর্থাৎ ১০ বছরে ঋণের পরিমাণ বেড়েছে ৬ লাখ ৩৫ হাজার ৩৮৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ ঋণের পরিমাণ বেড়েছে প্রায় ৪ গুণ।

বাংলাদেশ ব্যাংক সম্প্রতি ব্যাংকগুলোর অগ্রিম আমানত হারে কিছুটা পরিবর্তন আনায় হঠাৎ করে ব্যাংকগুলোতে নগদ টাকার টানাটানি চলছে। তবে ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাস শেষে ব্যাংকগুলোতে অলস টাকার পরিমাণ ছিল ৯৭ হাজার ১২২ কোটি টাকা। ঋণের সুদহার কম থাকলেও ব্যাংকগুলোতে এই অর্থ পড়ে ছিল। বর্তমানে আমানতের সুদহার বেড়ে যাওয়ায় ব্যাংকগুলো থেকে ব্যবসায়ীরা ঋণ নিতে আগ্রহ হারাবেন বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ অতিরিক্ত সুদে ব্যবসায়ীরা ঋণ নিয়ে বিনিয়োগ করতে চান না।

জানতে চাইলে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি সফিউল ইসলাম মহিউদ্দীন বলেন, ঋণের সুদহার যে হারে বাড়ছে তাতে আমরা চিন্তিত। এভাবে চলতে থাকলে বিনিয়োগ স্থবির হয়ে পড়বে। ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করতে পারবেন না। আমরা এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংককে চিঠি দিয়েছি।

অবশ্য বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র দেবাশীষ চক্রবর্তী জানান, ঋণের সুদহার বাংলাদেশ ব্যাংক নিয়ন্ত্রণ করে না। মুক্তবাজার অর্থনীতিতে ব্যাংকগুলো প্রতিযোগিতামূলক ব্যবসা করতে নিজেরাই এর হার নির্ধারণ করে।

অপরদিকে, অর্থনীতিবিদ ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এবি মীর্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম বলেন, ধারাবাহিকভাবে ব্যাংকিং খাতে আমানত ও ঋণ বাড়ছে সেটি ভালো। তবে উদ্বেগের জায়গা হলো ব্যাংকিং খাতে সুশাসনের অভাব। আমানত পেতে ব্যাংকগুলো অনেক সময় অসুস্থ প্রতিযোগিতা করে। আবার ঋণ যাচ্ছে অনেক সময় যাচাই-বাছাই না করে। ফলে আদায় হচ্ছে না। এদিকে ব্যাংকগুলোকে নজর বাড়াতে হবে।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সফররত দলের প্রধান তাইসাকু কাহিরা গত বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাত ধারাবাহিকভাবে উন্নতি করছে। তবে ব্যাংকিং খাতে সুশাসন নিশ্চিত করা জরুরি। নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থাকে নজরদারি ও তদারকি বাড়াতে হবে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!