• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বাণিজ্য মেলায় নারীর উপস্থিতি ছাড়িয়ে গেছে পুরুষদের


শেখ আবু তালেব, জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জানুয়ারি ২২, ২০১৮, ০১:৫৯ পিএম
বাণিজ্য মেলায় নারীর উপস্থিতি ছাড়িয়ে গেছে পুরুষদের

ঢাকা : পুরো জানুয়ারি মাসজুড়ে চলছে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা। তীব্র শীত উপেক্ষা করেও মেলার দর্শনার্থী বৃদ্ধির পাশাপাশি বিক্রিও বাড়ছে। ছুটির দিনগুলোতে দর্শনার্থীর সংখ্যা অন্য দিনের তুলনায় বেশি হয়। তবে, এবারে ব্যতিক্রমী হয়ে দাঁড়িয়েছে মেলায় আগতদের মধ্যে নারীদের সংখ্যাই বেশি। তা রীতিমত পুরষকে ছাপিয়ে গিয়েছে।

নারী দর্শনার্থীদের মধ্যে তরুণী ও যুবতির সংখ্যাই বেশি। মেলা ঘুরে দেখা গিয়েছে এমন চিত্র। মেলায় নিয়মিত স্টল দেয়া ব্যবসায়ীরা জানান, বাণিজ্য মেলায় সাধারণত প্রথম দিকে ক্রেতারা আসেন শুধু পণ্য দেখতে। পরে বাসায় গিয়ে ঠিক করেন কোন পণ্য কোন স্টল থেকে নিবেন। এসময়ও তারা কমদামের প্রয়োজনীয় পণ্য কিনে নিয়ে যান। এজন্য মেলায় বিক্রি জমে উঠে মধ্যভাগ থেকে।

মাসের প্রথমভাগ শেষ হলেই তাই আশায় থাকেন বিক্রেতারা। এজন্য মেলার দ্বিতীয় দশক থেকেই ক্রেতা টানতে সবপণ্যে ছাড় দেয়া শুরু করেন তারা। তবে ছুটির দিনে মেলায় দর্শনার্থী ও বিক্রি দুটিই বেশি হয়। সরকারি পর্যায়ে সাপ্তাহিক ছুটি দুই দিন হওয়ায় সরকারি কর্মজীবীরা বৃহস্পতি, শুক্র ও শনিবার এই তিনদিনই মেলায় একবার ঢুঁ মারেন। মিরপুর, আগারগাঁও, গাবতলি, শ্যামলী ও মোহাম্মাদপুর এলাকায় থাকা ব্যক্তিরা প্রতিদিনই বাড়ি ফেরার সময়ে মেলায় একবার হলেও হাজিরা দেন।

১ জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া মেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভিড় হয়েছে গত ১৯ জানুয়ারি সরকারি ছুটির দিন শুক্রবারে। এদিন বিকেল তিনটার সময়েই টিকেট কাউন্টারগুলো থেকে দর্শনার্থীদের লাইন চলে যায় মিরপুর-আগারগাঁও প্রধান সড়কে। মানুষের চাপে গাড়ি ওয়ালারাও এগোতে পারেনি মেলার দিকে। বাধ্য হয়ে পার্কিং ইজাদারের লোকজন সামনে এগিয়ে গাড়িগুলোকে টোকেন দিয়ে আসে। মোটরসাইকেল ও গাড়ি রাখার পার্কিং এলাকা ভর্তি হয়ে যায় সাড়ে তিনটার সময়েই। তিল পরিমাণ ফাঁকা জায়গা থাকে না। বিকেল চারটার পরে নতুন আসা গাড়িগুলোকে জায়গা দিতে পারেনি মেলা কর্তৃপক্ষ। ফলে বাধ্য হয়ে অনেক গাড়ির মালিক পরিবার নিয়ে এলেও মেলায় প্রবেশ করতে পারেনি।

মেলার আয়োজক কর্তৃপক্ষের কয়েকটি সূত্র জানিয়েছে, বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত দর্শনার্থী টিকেট বিক্রয় এক লাখ পার হয়েছে। এটাই ছিলে এ পর্যন্ত মেলার সর্বোচ্চ টিকেট বিক্রির দিন। পাঁচটার পর মেলার টিকেট বিক্রি কমে গিয়েছে। কারণ হিসেবে তারা মনে করছেন, যারা গাড়ি নিয়ে এসেছেন তারা পার্কিং জায়গা পাননি। আবার ভিড় দেখেও ফিরে গেছেন অনেকে।

বাইরে দীর্ঘ লাইন, বাড়তি মানুষের চাপ, বাতাসে ধুলার মিশ্রণে শীতের বিকেলেও ঘাম ঝড়িয়ে দিলেও মেলার ভেতরে দেখা গিয়েছেসম্পূর্ণ বিপরীত দৃশ্য । আগতরা প্রাণোচ্ছল ভঙ্গিতে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন মেলা প্রাঙ্গন। তবে এবারের মেলায় আগতদের ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে নতুন চিত্র। মেলয় আগতদের সংখ্যায় পুরুষদের ছাড়িয়ে গিয়েছে নারীরা। অনেক জায়গায় নারীদের একচ্ছত্র আধিপত্য দেখা গিয়েছে।

নারীদের মধ্যে অধিকাংশই কিশোরী, বিভিন্ন স্কুল-কলেজ ও বিশ্বিবিদ্যালয়ের ছাত্রী। তরুণীর পাশাপাশি এসেছেন বিবাহিত নারীরা। স্বামীছাড়া শুধু ছোট ছোট শিশু সন্তানদের নিয়ে মেলায় এসেছেন অনেকেই। সব জায়গায় মেলায় নারীদের সরব উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো।

আবার নারীদের মধ্যে যারা পুরুষ সঙ্গীকে নিয়ে এসেছেন, তাদের দেখা গিয়েছে নারীদের ফরমায়েশ অনুযায়ী চলতে। নারীরা নির্ভয়ে যাচ্ছেন বিভিন্ন স্টলে। কথা বলছেন, করছেন দরদামও। পছন্দ হলে কিনছেন, দরদামে না মিললে মূহুর্তেই চলে যাচ্ছেন অন্য স্টলে।

মেলায় আসতে অনেক তরুণী নিয়েছেন বিশেষ সাজ। আধুনিকতার ছোয়া লাগানো সাজ-গোজের পাশাপাশি একই রঙের পোশাক পড়ে দল বেধে এসেছেন অনেকে। মূলত কেনাকাটার পাশাপাশি মেলাকে উপভোগ করায়ই ছিল তাদের উদ্দেশ্য। এ বিষয়ে পাঁচ জনের কিশোরী গ্রুপে থাকা কলেজছাত্রী তানিয়া জানান, ঈদের সময়ে বান্ধবীরা এক রঙের পোশাক নিয়েছিলাম। সেই পোশাক পরেই মেলায় এসেছি। কথায় কথায় হাসির ঝিলিক দিয়ে বলেন, যদি হারাই..তাহলে খুঁজে পাওয়া সহজ হবে।

একই গ্রুপের আরেক সদস্য রূপা জানান ভিন্ন কথা। তিনি বলেন, মেলা উপভোগ করতে এসেছি। বান্ধবীদের নিয়েই আসল মজা। ঘুরবো, খাবো, পছন্দ হলে কেনাকাটাও করবো।

ভয় করছে না এমন কৌতুল প্রশ্নের উত্তরে তারা সবাই এক স্বরেই বলেন, ভয়! কিসের ভয়। মেলায় কোনো ভয় নেই। বের হওয়ার আগে বাসায় ফোন দিয়ে দেব। ঘরের কেউ এসে গেট থেকে নিয়ে যাবে।

কারও ভাই, বড় বোন, কারও বা মা; এসে নিয়ে যাবেন বলে জানান সবাই।

কালোরঙকে প্রধান করে সোনালী, মেরুন ও লাল রঙের সঙ্গে যুতসই অলঙ্কার পড়ে মেলায় এসেছেন বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া দুই বান্ধবী। তারা জানান, মাঝে মাঝেই মিল রেখে পোশাক বানাই দুজনে। এবারও তাই করলাম।

পার্লার থেকে সেজে এসেছেন..নাকি এমন প্রশ্নের উত্তরে তারা বলেন, ঘরেই(হাসির ভঙ্গিতে) পার্লার আছে। মানে, সাজার জন্য বাসায় সবকিছুই আছে। তাই পার্লারে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। একটু সাজু-গুজু করতে দোষ কী।

এভাবেই মেলায় আগত নারীরা মনখুলে উপভোগ করছেন তাদের জীবন। বিশ্লেষকরা বলছেন, নিরাপদ ও স্বাচ্ছন্দ হওয়ায় নারীরা এ মেলায় আসতে বেশি উদগ্রীব থাকেন। অন্যান্য মেলাগুলোতে নিরাপত্তার বিষয়টি কম গুরুত্ব পায়। কিন্তু এখানে তা নেই, বাজে মানুষদের উপদ্রব নেই। সবাই সবাইকে সহযোগিতা করে। তাই নারীরা বেড়ানোর জন্য বিশেষ জায়গা হিসেবে বেছে নিচ্ছে এ মেলাকে।

সোনালীনিউজ/তালেব/এমটিআই​

Wordbridge School
Link copied!