• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বাণিজ্যিক ব্যাংকে উপেক্ষিত হচ্ছে কৃষি যন্ত্রাংশ ঋণ


নিজস্ব প্রতিবেদক আগস্ট ২৭, ২০১৬, ০১:৩৭ পিএম
বাণিজ্যিক ব্যাংকে উপেক্ষিত হচ্ছে কৃষি যন্ত্রাংশ ঋণ

বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে উপেক্ষিত হচ্ছে কৃষি যন্ত্রাংশ ঋণ। অথচ কৃষিতে শ্রমিক সঙ্কট নিরসনের পাশাপাশি ফলন বাড়ানো এবং ফসলোত্তর ক্ষতি কমিয়ে আনতে কৃষি যন্ত্রপাতি কার্যকর ভূমিকা রাখতে সক্ষম। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকেও কৃষি যন্ত্রাংশ কিনতে বড় ধরনের আর্থিক সহায়তা দিতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। 

কিন্তু তারপরও ব্যাংকগুলো ওই খাতে ঋণ দিতে আগ্রহী হচ্ছে না। গত অর্থবছওে ব্যাংকগুলো কৃষি যন্ত্রাংশ খাতে মোট কৃষিঋণের মাত্র শূন্য দশমিক ৮৩ শতাংশ বিতরণ করে। এক বছরের ব্যবধানে ওই খাতে ঋণ বিতরণ কমেছে প্রায় সাড়ে ৮ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংক সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বেসরকারি ও বিদেশী বাণিজ্যিক ব্যাংক তাদের মোট ঋণ ও অগ্রিমের ২ শতাংশ হারে এবং সর্বশেষ চালুকৃত ৯টি বেসরকারি ব্যাংকের মোট ঋণ ও অগ্রিমের ৫ শতাংশ হার বিবেচনায় নিয়ে কৃষিঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়ে থাকে। ক্ষেত্রে কৃষি ও পল্লী ঋণ কর্মসূচির আওতাভুক্ত খাত ও উপ-খাতগুলো হলো- শস্য বা ফসল, মৎস্যসম্পদ, প্রাণিসম্পদ, কৃষি যন্ত্রপাতি, সেচ যন্ত্রপাতি, বীজ উৎপাদন, শস্যগুদাম ও বাজারজাতকরণ এবং দারিদ্র্য বিমোচন ও আয় উৎসারী কর্মকান্ড। তবে মোট ঋণের ৬০ শতাংশ শস্য ও ফসল খাতে বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। অনান্য খাতে ওই ধরনের কোনো লক্ষ্যমাত্রা না থাকায় ব্যাংকগুলো স্বাধীনভাবে ঋণ বিতরণ করে। সেক্ষেত্রে উপেক্ষিত থেকে যাচ্ছে যন্ত্রাংশ খাত।

সূত্র জানায়, দেশের সব বাণিজ্যিক ব্যাংক বিগত ২০১৫-১৬ অর্থবছরে মোট ১৭ হাজার ৬৪৬ কোটি টাকা কৃষিঋণ বিতরণ করেছে। তার মধ্যে কৃষি যন্ত্রাংশে বিতরণ করা হয়েছে মাত্র ১৪৫ কোটি ২৯ লাখ টাকা। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ওই খাতে ১৫৮ কোটি ৪৬ লাখ টাকা ঋণ বিতরণ করা হয়েছিল। ওই হিসাবে বছরের ব্যবধানে ঋণ বিতরণ ৮ দশমিক ৩১ শতাংশ কমেছে। যদিও কৃষিঋণ-সংক্রান্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনায় বলা হয়েছে- বিজ্ঞানসম্মত চাষাবাদ পদ্ধতির মাধ্যমে ফসল উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে কৃষি যন্ত্রপাতি যেমন- ট্রাক্টর, পাওয়ার টিলার, বারি সিডার (বীজ বপন যন্ত্র), বারি উইডার (আগাছা নিড়ানি যন্ত্র), অটোমেটিক সিডলিং নার্সারি মেশিন ইত্যাদি উপখাতে ব্যবহারকারী পর্যায়ে প্রয়োজনীয় ঋণের সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। 

তাছাড়া সারের অপচয় রোধ, উৎপাদন খরচ হ্রাস এবং তার বিপরীতে উৎপাদন বৃদ্ধির স্বার্থে ব্যাংকগুলো দানাদার ও গুটি ইউরিয়া তৈরির মেশিন প্রস্তুতকারীদের ঋণ প্রদান বিবেচনা করতে পারবে। পাশাপাশি প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং অন্যান্য কারণে পাকা ফসল ঘরে তুলতে যাতে দেরি না হয় সেজন্য ফসল কাটা-মাড়াইয়ের যন্ত্র যেমন- পাওয়ার থ্রেসার, পাওয়ার ইউনোনেয়ার, ড্রায়ার ইত্যাদি বাবদ কৃষিঋণ বিতরণ করতে হবে।

সূত্র আরো জানায়, আগামী ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হতে প্রতি বছর ৭ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি দরকার। সেজন্য কৃষি খাতে কমপক্ষে ৪ থেকে ৪ দশমিক ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হবে। সেজন্য ক্রমহ্রাসমান আবাদি জমিতে উন্নত উপকরণ এবং নতুন প্রযুক্তি ও যন্ত্রাংশ ব্যবহারে জোর দিতে হবে। 

তাছাড়া শস্য খাতে উৎপাদন এখন সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে। তা ধরে রেখেই পর্যায়ক্রমে আরো উন্নত করতে অবশ্যই প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। এ পরিস্থিতিতে কৃষি খাতকে টেকসই, সমৃদ্ধ ও কৃষিঋণকে অন্তর্ভুক্তিমূলক করতে কৃষি যান্ত্রিকীকরণের ওপর ব্যাংকগুলোকে জোর দিতে হবে।

এদিকে কৃষি যন্ত্রাংশে ঋণ বিতরণের প্রসঙ্গে ঢাকা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান জানান, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কৃষিঋণ বিতরণ কার্যক্রম বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো গুরুত্বের সাথেই নিচ্ছে। সেজন্য প্রতি বছর লক্ষ্যমাত্রা থেকে বেশি ঋণ বিতরণ করা হচ্ছে। তবে যন্ত্রাংশ খাতে ঋণ বিতরণ বাড়াতে হলে অবশ্যই ওই খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে। তাহলে ব্যাংকগুলো ইতিবাচকভাবে ঋণ প্রদানে উদ্বুদ্ধ হবে।

অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের সুপারনিউমারি অধ্যাপক ও পূবালী ব্যাংকের সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হেলাল আহমেদ চৌধুরী জানান, বাংলাদেশ ব্যাংকের কৃষিঋণ বিতরণ কার্যক্রমে উৎসাহের পাশাপাশি নজরদারির কারণেই খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা এসেছে। 

ওই স্বয়ংসম্পূর্ণতা ধরে রাখার সাথে সাথে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো নিজেদের স্বার্থেই ঋণ প্রদানে বহুমুখিতা আনতে পারে। প্রযুক্তি ও যন্ত্রাংশে ঋণ দিলে শস্য উৎপাদনে অবশ্যই কৃষকের উৎপাদন খরচ কম হবে। তাতে খরচ কমে কৃষকের মুনাফা বাড়বে। ফলে কৃষকও দ্রুত ঋণ ফেরত দিতে উদ্বুদ্ধ হবে।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এএম

Wordbridge School
Link copied!