• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বাবাকে বলবো জজ সাহেব স্কুলে যেতে বলেছে


আদালত প্রতিবেদক জানুয়ারি ২৯, ২০১৭, ০৭:৩৭ পিএম
বাবাকে বলবো জজ সাহেব স্কুলে যেতে বলেছে

ঢাকা: বাবাকে গিয়ে বলবে জজ সাহেব স্কুলে যেতে বলেছে। আরও বড় হয়ে তারপর কাজ করবে খুনি সন্দেহে আদালতে উপস্থিত কামরাঙ্গীরচরের দুই শিশুকে উদ্দেশ্য করে এভাবেই উপদেশ দেন হাইকোর্টের বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক।

এ বিষয়ে করা এক রিট আবেদনের শুনানির সময় গত ১৫ জানুয়ারি এই দুই শিশুকে আদালতে হাজিরের নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি মোহাম্মদ উল্লাহর হাইকোর্ট বেঞ্চ। সে অনুযায়ী তাদেরকে আদালতে হাজির করা হলে,  শুনানি শেষে আদালত কক্ষ ত্যাগের আগে দুই শিশুকে একথা বলেন বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি কাজী রেজাউল হক।

একইসঙ্গে আদালত দুই শিশুকে মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত জামিন দিয়েছেন তার বেঞ্চ। তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতেও কামরাঙ্গীর চরের থানা পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। বয়স নির্ধারণ না করেই দুই শিশুকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ আইনের বরখেলাপ করেছে বলেও আদালত মন্তব্য করেন।

আদালতে দুই শিশু ইউসুফ ও জয়দাশ উপস্থিত ছিলো। রোববার (২৯ জানুয়ারি) আদালেত শিশুদের পক্ষে শুনানি করেন চিল্ড্রেন চ্যারিটি বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আব্দুল হালিম। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তাপস কুমার বিশ্বাস।

মামলা শুনানির শুরুতেই দুই শিশুকে উদ্দেশ্য করে আদালত বলেন, বাবুরা এদিকে এসো। তোমাদের কি আদালতে আসতে ভয় লাগে? ভয়ের কিছু নাই। কি নাম তোমাদের?  দুজন তাদের নাম ও বয়স জানায়। তারা বলে, তাদের একজনের বয়স ৮ ও একজনের ৯ বছর।

এ সময় রিটকারী আইনজীবী ব্যারিস্টার আবদুল হালিম বলেন, যে ছেলের খুনের অভিযোগে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, সেই লাশ বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করা হয়েছে। লাশটির বিষয়ে অভিযোগকারী নিজেই সন্তান হিসেবে পরিচয় নিশ্চিত হতে পারেননি। সেদিনই বলছে চিনতে পারছে না। অথচ পুলিশ জোরপূর্বক স্বীকারোক্তি আদায় করেছে।

তখন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তাপস কুমার বিশ্বাস বলেন, তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগকারীর এফআইআর এর ভিত্তিতে স্বাভাবিক নিয়মে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গেল বছরের ১১ অক্টোবরে দায়ের করা এফআইআর-এ দুজনেরই নাম ছিল। এদের নামে সরাসরি অভিযোগ ছিল।

ব্যারিস্টার আবদুল হালিম বলেন, গেল ২৯ সেপ্টেম্বর নিহত শিশুর নিখোঁজের পর জিডি করা হয়। পরে বুড়িগঙ্গা নদীতে নিহতের ঘটনায় ৮ অক্টোবর একটি অপমৃত্যুর মামলা করা হয় কামরাঙ্গীরচর থানায়। বাদী উজ্জল কীভাবে বুঝল এটা তার সন্তানের লাশ?

এ সময় শিশু আইনের ৪৪ ধারা বের করে দেখান আইনজীবী আবদুল হালিম। যেখানে বলা হয়েছে, শিশুদের কোনোভাবেই গ্রেপ্তার করা যাবে না। একান্তই যদি গ্রেপ্তার করতে হয় তবে বয়স নির্ধারণ করতে হবে।

আদালত তখন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, পুলিশ কেন তাদেরকে গ্রেপ্তার করল?

ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, এই ধারার পরবর্তী অংশে শিশু গ্রেপ্তারের কথা বলা আছে। জবাবে আদালত বলেন, গ্রেপ্তার করতে হবে কেন? তাদেরকে সঙ্গে নিয়ে যেতে পারতো। আগে বয়স নির্ধারণ করে তারপর ব্যবস্থা নেয়া উচিত ছিল। শুধু তাই নয়, এসআই মো. আতাহার হোসেন তাকে শুধু গ্রেপ্তারই করেননি তাকে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দির জন্য ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে পাঠিয়েছেন। এর মাধ্যমে তিনি আইনের বরখেলাফ করেছেন।

আদালত দুজনকে প্রশ্ন করেন তোমরা কি কর?  দুই শিশুর একজন বলে, আমি গাড়িতে কাজ করে। অপরজন কিছু করে না। তবে দুজনের কেউই স্কুলে যায় না, বলেও আদালতকে জানায়। আদালত বলেন, এতটুকু বয়স। ওদের তো এখন স্কুলে থাকার কথা। কিন্তু আজ এই শিশুদের কাজ করে খেতে হয়। আমাদের দেশের রাজনীতিবিদরা, সমাজপতিরা অনেক কথা বলেন। কিন্তু এসব বিষয় তাদের চোখে পড়ে না!

আদালত আরও বলেন, রাষ্ট্রের তো দায়িত্ব ছিল এই শিশুদের শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত করা। এতটুকু বাচ্চারা কাজ করে এটা আমাদের রাষ্ট্র ও সমাজের জন্য লজ্জার। আমাদের সমাজ এর কি জবাব দেবে? সরকার এতো টাকা খরচ করে, এদিকে একটু গুরুত্ব দিলেই তো পারে।

আদালত বলেন, সরকার আইন করুক স্কুল টাইমে শিশুরা বাইরে ঘুরাফেরা করলে পুলিশ তাদের হেফাজতে নেবে। স্কুল টাইমে বাচ্চা শিশুদের ধরে নেয়ার পর তাদের অভিভাবককে শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে। এছাড়া এই শিশুদেরকে যারা কাজে নেবে তাদেরও শাস্তির আওতায় আনতে হবে। বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে এই ধরনের আইন আছে।

গেল বছরের ২৪ নভেম্বর একটি জাতীয় দৈনিকে ‘লাশের পরিচয় মেলেনি, খুনি সন্দেহে ২ শিশু গ্রেপ্তার’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন যুক্ত করে রিট করা হয়।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রায় দুই মাস আগে পুলিশ অজ্ঞাত–পরিচয় এক শিশুর অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করেছিল। ১০ দিন পর লাশটি নিখোঁজ এক শিশুর দাবি করে শিশুটির পরিবার খুনের মামলা করে। খুনি সন্দেহে পুলিশ দুই শিশুকে গ্রেপ্তার করে।

বিচারিক হাকিম স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নিয়ে তাদের টঙ্গীর কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রেপাঠান। বিষয়টি নিয়ে রিট করলে আদালতে দুই শিশুকে হাজিরের নির্দেশ দেন। আদালতের নির্দেশে রোববার (২৯ জানুয়ারি) দুই শিশুকে হাজির করেছিলেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমএইচএম

Wordbridge School
Link copied!