• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলের রহস্য উদঘাটন!


বিজ্ঞান প্রযুক্তি ডেস্ক অক্টোবর ২৪, ২০১৬, ১০:৫৭ পিএম
বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলের রহস্য উদঘাটন!

ঢাকা: তাহলে কি বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলের রহস্য উদঘাটনে শেষ তথ্য পাওয়া গেলো? সেই মিথ আর নানা কিংবদন্তির কুলকিনারা কিংবা শেষ কথা বলে একটা কিছু উদঘাটন হচ্ছে এবার। হ্যাঁ, এতোদিন ধরে কত বিজ্ঞানী কত ব্যাখ্যা দিয়ে গেলেন, কিন্তু কোনোটাই শেষ কথা হতে পারেনি।

সে কি আরও এক ‘দেবতার গ্রাস’! কেন বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলে গিয়ে হারিয়ে যায় জাহাজ? কেনই বা নিখোঁজ হয়ে যায় বিমান? আর তারপর সেই জাহাজ বা বিমানগুলোর আর কোনো হদিশ মেলে না কেন? এমনকী খুঁজে পাওয়া যায় না কেন তাদের ধ্বংসাবশেষও? হাজারো তত্ত্ব-তালাশ করেও, গত অর্ধ শতাব্দী ধরে যে ধাঁধার কোনো উত্তর মেলেনি, সম্প্রতি তার জট খুলেছে বলে দাবি বিজ্ঞানীদের।

আসুন দেখি নরওয়ের আর্কটিক বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা কী বলেন? তারা নাকি একেবারে হালে নরওয়ের উপকূলে ব্যারেন্টস সাগরের তলদেশে ওই সুবিশাল আগ্নেয়গিরিগুলোর সন্ধান পেয়েছেন। তারা জানাচ্ছেন, ওই মিথেন গ্যাস সমুদ্রের জলের অন্তত ১৫০ ফুট ওপর পর্যন্ত ছড়িয়ে থাকে। আর তা ছড়িয়ে থাকে আধ মাইল এলাকা জুড়ে।

তাদের গবেষণা বলছে, বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলে সমুদ্রের একেবারে তলদেশে কয়েকটি সুবিশাল আগ্নেয়গিরি রয়েছে। তার জ্বালামুখ থেকে গলগল করে বেরিয়ে আসছে বিষাক্ত মিথেন গ্যাস। অসম্ভব রকমের গরম অন্যান্য গ্যাসও। ওই সুবিশাল আগ্নেয়গিরিগুলি থাকায় আর সেগুলো থেকে প্রচুর পরিমাণে মিথেনের মতো বিষাক্ত গ্যাস বেরিয়ে আসায় সমুদ্রের তলদেশে জলজ প্রাণীদের পক্ষেও বেঁচে থাকাটা সম্ভব হয় না।

সেই মিথেন গ্যাসই সমুদ্রের তলদেশ থেকে উঠে এসে জলের ওপর বুদবুদ তৈরি করে। জলকে আরও ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে তোলে। গ্যাসে চারপাশ ঢেকে যায় বলে জাহাজের নাবিকের পক্ষে তো আর কিছু দেখা সম্ভব হয়ই না, এমনকী, তা কমপিউটারের নেভিগেশান ব্যবস্থাকেও বিগড়ে দেয়। ফলে পথ হারিয়ে ফেলা ছাড়া জাহাজের নাবিকের আর কিছুই করার থাকে না। একই কারণে, পথ হারিয়ে ভেঙে পড়ে বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলের ওপর দিয়ে উড়ে যাওয়া বিমানও।

এতো গেল এক ধরণের ব্যাখ্যা। কিন্তু এতো ব্যাখ্যাতেও সেই ‘কেন’র উত্তর খোঁজার কাজ থেমে থাকেনি। এবার আরেকটা নতুন ব্যাখ্যা নিয়ে হাজির হলেন বিখ্যাত আবহাওয়াবিদ র‌্যান্ডি কারভ্যানিসহ বেশ কয়েকজন বিজ্ঞানী। তাদের দাবি, বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলের রহস্যের পেছনে রয়েছে এক রকম ষড়ভুজাকৃতি মেঘ (হেক্সাগোনাল ক্লাউড)। উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরের বারমুডা দ্বীপে ২০ থেকে ৫৫ মাইল জুড়ে ষড়ভুজাকৃতি মেঘ তৈরি করে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বায়ু। যার গতিবেগ ঘণ্টায় ১৭০ মাইল। এই উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বায়ুকে বলা হয় ‘এয়ার বম্ব’। এই বায়ু প্রায় ৪৫ ফুট উচ্চতার ঝড় তৈরি করতে পারে। যার ফলে বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল দিয়ে যাওয়া জাহাজ বা প্লেন উধাও হয়ে যায়। তবে উধাও হয়ে কোথায় সেই জাহাজ বা প্লেনের শেষ ঠিকানা হয়- সে বিষয়ে এখন পর্যন্ত বিজ্ঞানীরা স্পষ্ট নন। যদিও এখন আর কোনো জাহাজ বা বিমান ওই এলাকা দিয়ে যায় না।

চলুন এক নজরে জেনে নেয়া যাক বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল সম্পর্কে কিছু অবাক করা তথ্য:

  • আটলান্টিক মহাসাগরের প্রায় ৪ লাখ ৪০ হাজার মাইল এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল। যা ভারতের মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র ও রাজস্থানের সম্মিলিত এলাকার চেয়েও বড়।
  • কোনো নির্দিষ্ট স্থানে সীমাবদ্ধ নয় বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল। এই ট্রায়াঙ্গেলের বাইরেও এর রহস্যময় প্রভাব বহুবার অনুভূত হয়েছে।
  • বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলে হারিয়ে যাওয়া বিমান বা জাহাজের কোনো ধ্বংসাবশেষ আজ পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া যায়নি। এই রহস্যের মধ্যে পড়ে শেষ একশো বছরে অন্তত ১০০০ মানুষ হারিয়ে গিয়েছেন।
  • অনেক মানুষ এখানে ‘বৈদ্যুতিক কুয়াশা’ও দেখেছেন বলে দাবি করেছেন। যার মধ্যে পড়ে একাধিক বিমানের রাডার সংযোগ বেশ কিছুক্ষণের জন্য বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার অভিজ্ঞতার কথাও জানিয়েছেন অনেক বিমানচালক।
  • ১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় পাঁচটি মার্কিন বোমারু বিমান এই ট্রায়াঙ্গেলে পড়ে নিখোঁজ হয়ে যায়। নিখোঁজ বিমানগুলোর সন্ধানে আরও তিনটি বিমান পাঠানো হয়। ফোর্ট লডরডেলের বিমানঘাঁটিতে ফেরেনি সেইসব বিমান।
  • ১৪৯২ সালে স্পেনের নাবিক ও ভূপর্যটক ক্রিস্টোফার কলোম্বাস প্রথম এই বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল সম্পর্কে লেখেন। তার জাহাজের কম্পাসও এই স্থানে গিয়ে অকেজো হয়ে যায়। সে যাত্রায় কোনো ক্রমে উদ্ধার পান তিনি।
  • অসংখ্য রহস্যে মোড়া এই বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলকে ‘ডেভিলস ট্রায়াঙ্গেল’ও বলা হয়। এখানে চৌম্বকীয় উত্তর দিকের পরিবর্তে প্রকৃত উত্তর দিক নির্দেশিত হয়, যা জাহাজের নাবিকদের বিভ্রান্ত করে।

সোনালীনিউজ/এমএন

Wordbridge School
Link copied!