• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বারী সিদ্দিকীর প্রয়াণে শোকের মাতম সংগীতাঙ্গনে


বিনোদন প্রতিবেদক নভেম্বর ২৪, ২০১৭, ০৬:২১ পিএম
বারী সিদ্দিকীর প্রয়াণে শোকের মাতম সংগীতাঙ্গনে

ঢাকা: ‘শুয়াচান পাখি আমার শুয়াচান পাখি/আমি ডাকিতাছি তুমি ঘুমাইছ নাকি’- যে একবার চিরস্থায়ী ঘুমে নিমজ্জিত হয়, কোনো ডাকই তাকে আর ফিরিয়ে আনতে পারে না। যার কণ্ঠে এ গান বারবার উচ্চারিত হয়েছে- সেই বারী সিদ্দিকীও তার অজস্র ভক্ত-অনুরাগীদের এ ডাকে আর কোনোদিন সাড়া দেবেন না। 

বৃহস্পতিবার (২৪ নভেম্বর) রাত আড়াইটার কাছাকাছি সময় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন প্রখ্যাত আধ্যাত্মিক-লোকসংগীত শিল্পী এবং বংশী বাদক বারী সিদ্দিকী। এর পরপরই সংগীতাঙ্গনে নেমে আসে গভীর শোক।

তিনি সর্বদাই বিশ্বাস করতেন, প্রতিটা মানুষের পরিণতিই ঈশ্বর প্রদত্ত। মানুষ পৃথিবীতে ঈশ্বর প্রদত্ত দায়িত্ব পালনে আসে, দায়িত্ব শেষ হওয়া মাত্রই তাকে চলে যেতে হয়।

এত সুন্দর হৃদয়ের একজন মানুষ, এত বিনয়ী একজন শিল্পীর এ প্রস্থান তাই মেনে নিতে পারছে সংগীত অঙ্গন। আর তাই গুণী এ শিল্পীর মৃত্যুতে তার অগণিত ভক্ত-অনুরাগী, কাছের মানুষ, সহকর্মীরা নিজেদের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে তাদের শোক প্রকাশ করেছেন।

জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী আঁখি আলমগীর তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে লিখেছেন- ‘শান্তিতে থাকুন বারী ভাই। আপনাকে মনে পড়বে’।
বারী সিদ্দিকীকে ভালোবাসেনি এমন শুভাকাঙ্ক্ষী হয়তো মিলা বেশ ভার, অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরীও তাদের মধ্যে একজন, যিনি তার অ্যাকাউন্টে লিখেছেন- ‘বিনম্র শ্রদ্ধা......বারী সিদ্দিকী’।

বারী সিদ্দিকীর কণ্ঠ ও বাঁশির সুর কালজয়ী হয়ে থাকবে, এতে সন্দেহ নেই কোনো। আর এ অনুভূতি তার অনুজদেরও। সংগীতশিল্পী শফিক তুহিন তাই লিখেছেন- ‘আপনার কণ্ঠের জাদু আর বাঁশির সুর বাংলার আকাশে বাতাসে ছড়িয়ে থাকবে কাল থেকে মহাকাল...যেখানে থাকবেন ভালো থাকবেন। বিনম্র শ্রদ্ধা’।

ভালোবাসার যন্ত্রণা বারী সিদ্দিকীর কণ্ঠে অনেক বেশি মধুর হয়ে উঠেছে সব সময়। ভালোবেসে যন্ত্রণা পাওয়া মানুষগুলো যেন তার গানেই ফিরে ফিরে আশ্রয় খুঁজে পেয়েছেন। অভিনেত্রী শাহনাজ খুশি তার স্বামী নির্মাতা বৃন্দাবন দাসের সঙ্গে বারী সিদ্দিকীর একটি ছবি পোস্ট করে লিখেছেন- ‘আমি পীরিতের অনলে পোড়া, মরার পরে আমায় পুড়িস না’...প্রেম আর গভীর অনুভবকে এক সুরে বেঁধে সবার প্রাণে নাড়া দেওয়ার সুনিপুণ কারিগর আমাদের প্রাণের শ্রদ্ধেয় বারী সিদ্দিকী। আপনাকে প্রেম আর বিরহেই স্মরণ করি। বিনম্র শ্রদ্ধা’।

গুণী এ শিল্পী শুধু নিজেই সুর সাধন করেছেন তা নয়, যতটা মনোযোগে তিনি নিজে সুর-তার-লয় শিখেছেন, ঠিক ততটাই পরম যত্নে তিনি তার শিষ্যদেরও শিখিয়েছেন। তাই হয়তো তার শিষ্যরা আজ পরম শ্রদ্ধায়, ভালোবাসায় তাকে জাগতে ডাকছে। 

তার শিষ্য, জলের গানের অন্যতম সদস্য রাহুল আনন্দ তাই ফেসবুকে লিখেছেন- ‘গুরুজী...আমি ডাকিতাছি তুমি ঘুমাইছ নাকি?’
শুধু পৃথিবীতে নয়, এমন একজন সুর সাধকের কণ্ঠ হয়তো অনন্তলোকে গিয়েও মরমী সুরে বেজে উঠবে।

 সংগীতশিল্পী ও ‘মেঘদল’ ব্যান্ডের ভোকাল শিবু কুমার শীল তেমন আশা করেই লিখেছেন- ‘বিদায় বারী সিদ্দিকী। মরমিয়া সুর বাজুক অনন্তলোকে...’।

বাংলাদেশের সংগীত অঙ্গন সত্যিই বারী সিদ্দিকীর মতো একজন শিল্পী পেয়েছিল বলে গর্বিত, আর তাই আলোচিত শিল্পী প্রীতম আহমেদ বারী সিদ্দিকীকে স্মরণ করে লিখেছেন- ‘যেখানেই থাকবেন ভালো থাকবেন বারী ভাই। আপনার মোহনীয় বাঁশির সুর ও কণ্ঠের যাদুর কাছে ঋণী থাকবে বাংলাদেশ’।

নায়ক বাপ্পী চৌধুরী লিখেছেন, যত দু:খ গায়ে সয়, তারচেয়েও বেশি দু:খ তোমার প্রস্থানে। সুর পাগল এ হৃদয় আর কোনোদিন বারী সিদ্দিকীর হাহাকার শুনতে পারবে না! তবু চিরকাল তোমার বাঁশি, তোমার সুর আমাদের হৃদয় নাচাবে। প্রেম-বিরহ, ব্যাথা-আনন্দে গভীর শ্রদ্ধা নিয়ে আমরা তোমার স্মরণে গাইতেই থাকবো- আমি ডাকিতাছি তুমি ঘুমাইছো নাকি...

প্রখ্যাত গীতিকার শহীদুল্লাহ ফরায়জি ভাষায়, বারী সিদ্দিকী ভিন্ন ধারার বাংলা গানের প্রচলন করেন। তার কণ্ঠ, সুর আর গায়কিতে রয়েছে ভিন্নতা। আর তা সবাই গ্রহণ করেছেন। এই ভিন্ন ধারা গানের জন্য বারী সিদ্দিকী বাংলা গানের জগতে বেঁচে থাকবেন।

প্রখ্যাত এ সংগীতশিল্পীর জন্ম ১৯৫৪ সালের ১৫ নভেম্বর নেত্রকোণায়। জন্মেছিলেন এক সংগীত প্রাণ পরিবারে, ফলে শৈশব থেকেই গানের শিক্ষা পেয়েছেন পরিবারের সদস্যদের হাতে ধরেই। ক্লাসিক্যাল সংগীতে আগ্রহ থাকায় এ বিষয় নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেন তিনি। সংগীতে উচ্চতর তালিম গ্রহণের জন্য নব্বই দশকে ভারতবর্ষেও পাড়ি জমান। ভারতের পুনে শহরে পণ্ডিত ভিজি কার্নাডের কাছে শিক্ষা নিয়ে দেশে ফিরে মনোযোগী হয়ে ওঠেন আধ্যাত্মিক ও লোকসংগীতে।

১৯৯৫ সালে নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের ‘রঙের বাড়ই’ নামের একটি ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানে জনসমক্ষে প্রথম সংগীত পরিবেশন করেন তিনি। এর ঠিক চার বছর পর, ১৯৯৯ সালে হুমায়ূন আহমেদের রচনা ও পরিচালনায় নির্মিত ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’ চলচ্চিত্রে ৭টি গানে কণ্ঠ দিয়েছিলেন বারী সিদ্দিকী। এর মধ্যে নেত্রকোণার বাউল সাধক রশিদ উদ্দিনের লেখা ‘শুয়া চান পাখি’ গানটির জন্য তিনি ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেন।

গত ১৭ নভেম্বর শুক্রবার দিবাগত রাত ১টার দিকে তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হন। আধা ঘণ্টার মধ্যে তাকে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সে সময় তিনি অচেতন ছিলেন। এরপরই তাকে দ্রুত নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ভর্তি করা হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে লাইফ সাপোর্ট দেন। ২৪ নভেম্বর মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি সেখানে লাইফ সাপোর্টেই ছিলেন।

সোনালীনিউজ/বিএইচ

Wordbridge School
Link copied!