• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বার্ড ফ্লু ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় সতর্ক প্রাণিসম্পদ বিভাগ


এমএ ইউসুফ জানুয়ারি ২৬, ২০১৭, ১২:৪৮ পিএম
বার্ড ফ্লু ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় সতর্ক প্রাণিসম্পদ বিভাগ

রাজশাহীতে মৃত কাক, মুরগির খামারে বার্ড ফ্লু ভাইরাস এইচ৫এন১ শনাক্ত হয়েছে। এ খামার থেকে পুরো উপজেলার সব খামার এমনকি সারা দেশেও এ জীবাণু ছড়াতে পারে বলে জানান বিশেষজ্ঞরা। বিশ্ব পশু স্বাস্থ্য সংস্থা (ওআইই) জানায়, ঢাকার ধামরাই এলাকায় একটি মুরগি খামারে উচ্চ সংক্রমক 'এইচফাইভএন১' বার্ড ফ্লু ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ায় সাত শতাধিক 'সোনালি' প্রজাতির মুরগি মারা যায়। এবার রাজশাহীতে মারা গেছে ৪৫০টি মুরগি।

সংশ্লিষ্ট প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তারা বলছেন, মরে যাওয়া কাক ও মুরগির দেহে বার্ড ফ্লুর জীবাণু শনাক্ত হয়েছে। দু-এক দিনের মধ্যেই তারা এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন হাতে পেয়ে যাবেন।

জানা গেছে, গত সপ্তাহে দেশের দুই অঞ্চলের খামারে মুরগির দেহে সংক্রামক এইচ৫এন১ বার্ড ফ্লু ভাইরাস শনাক্ত করা হয়। ওয়ার্ল্ড অর্গানাইজেশন ফর অ্যানিমল হেলথ (ওআইই) ও বাংলাদেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সোমবার রয়টার্সকে এ তথ্য জানিয়েছেন।

বিশ্ব পশু স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, ঢাকার ধামরাইয়ে একটি খামারে বার্ড ফ্লু ভাইরাসে আক্রান্ত সোনালি প্রজাতির প্রায় তিন হাজার মুরগির মধ্যে ইতোমধ্যে ৭৩২টি মুরগি মারা গেছে।

প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের পরিচালক (উৎপাদন) ডা. এইচবিএম গোলাম মাহমুদ বলেন, ‘বার্ড ফ্লু প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে সরকার এবং অধিদফতরের পক্ষ থেকে সব রকমের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। দেশের সব এনজিও ও বিভিন্ন সংস্থাকে সঙ্গে নিয়ে বার্ড ফ্লু শনাক্ত ও আক্রান্ত এলাকায় তাৎক্ষণিক সব ধরনের সহযোগিতা দেয়ার ব্যবস্থা আছে। অধিদফতরের মাধ্যমে সংশ্লিষ্টদের নিয়ে দফায় দফায় মিটিং করছি, কীভাবে আরও ভালো পদক্ষেপ নেয়া যায়। আমরা দেশের সব স্থানের প্রাণিসম্পদ অধিদফতরে খোঁজ নিচ্ছি। এখন পর্যন্ত রাজশাহী ও ধামরাই ছাড়া অন্য কোনো জায়গায় এ ভাইরাস সংক্রমণের ঘটনা ঘটেনি।’ কোনো দেশের সাহায্য ছাড়াই এ ভাইরাস নিরসনে আমাদের সব ধরনের ব্যবস্থা আছে জানিয়ে তিনি বলেন, সাধারণ মানুষের এ ক্ষেত্রে কোনো ধরনের আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। দু’বছর পর আবার বার্ড ফ্লু ভাইরাস সংক্রমণের কারণ তদন্ত করা হচ্ছে এবং সারা দেশে মুরগির খামারে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

রাজশাহী ব্যুরো জানায়, রাজশাহীতে মৃত কাকের শরীরে এভিয়েন ইনফ্লুয়েঞ্জা বা বার্ড ফ্লুর জীবাণু শনাক্ত হয়েছে। জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ বিষয়টি নিশ্চিত করে জানিয়েছে, আরও নিশ্চিত হওয়ার জন্য মঙ্গলবারও কিছু মৃত কাকের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। চলতি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে রাজশাহীতে ঝাঁকে ঝাঁকে মারা যাচ্ছে কাক। এসব মৃত কাকের নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকায় পাঠানো হয়েছিল পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য। রাজশাহী জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, চলতি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে রাজশাহীতে মারা যাওয়া কাকের দেহে বার্ড ফ্লুর জীবাণু শনাক্ত হয়েছে। দু-এক দিনের মধ্যেই তারা এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন হাতে পেয়ে যাবেন। এদিকে রাজশাহীতে কাকের মড়ক সরেজমিন দেখতে মঙ্গলবার প্রাণিসম্পদ অধিদফতর ঢাকা, রোগ নির্ণয় কেন্দ্র (ইপিডিমিওলজি) ও জাতিসংঘ পরিচালিত সংস্থা ‘ফুড অ্যান্ড এগ্রিকালচার অ্যাসোসিয়েশনের’ সমন্বয়ে গঠিত একটি দল রাজশাহীতে গিয়ে অকুস্থল রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও পদ্মার তীরবর্তী এলাকা পরিদর্শন করেছে। বুধবারও দলটি রাজশাহীতে মরা কাক দেখতে নগরীর বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করে।

রাজশাহী জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের একটি সূত্র জানায়, চলতি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে প্রতিদিনই দশ থেকে পনেরোটি করে কাক মারা যাচ্ছে। এ জন্য চলতি মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও বড়কুঠি পদ্মার পাড় এলাকা থেকে মৃত কাকের নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকার কেন্দ্রীয় রোগ নির্ণয় ও অনুসন্ধান কেন্দ্রে পাঠানো হয়। সেখান থেকে রাজশাহী প্রাণিসম্পদ বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে, মৃত কাকের শরীরে এভিয়েন ইনফ্লুয়েঞ্জা বা বার্ড ফ্লু শনাক্ত হয়েছে। এখন পর্যন্ত রাজশাহীতে মুরগিতে কোনো প্রকার বার্ড ফ্লু সংক্রমণের খবর পাওয়া যায়নি। বোয়ালিয়া থানা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. ইয়ামিন আলী জানান, চলতি মাসে প্রথমদিকে মারা যাওয়া কাকের শরীরে বার্ড ফ্লু পাওয়া গেছে। রাজশাহীতে কাকে বার্ড ফ্লু বারবার কেন ছড়াচ্ছে সেটা জানার চেষ্টা চলছে।

রাজশাহী জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা নিজাম উদ্দিন বলেন, চলতি মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ জানুয়ারি রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও বড়কুঠি এলাকা থেকে মৃত কাকের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। পরে নমুনাগুলো ঢাকায় কেন্দ্রীয় রোগ অনুসন্ধান কেন্দ্রে পাঠানো হয়। এসব কাকের শরীরে বার্ড ফ্লু শনাক্ত হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত রাজশাহীতে মুরগিতে কোনো প্রকার বার্ড ফ্লু সংক্রমণের খবর পাওয়া যায়নি। এ নিয়ে এলাকাগুলোতে কিছুটা আতঙ্ক বিরাজ করছে।

এদিকে ঢাকার ধামরাইয়ের বরাকৈা এলাকায় ঢাকা-২, মিরপুর আসনের সংসদ সদস্য কামাল মজুমদারের মুরগির খামারে বার্ড ফ্লু ধরা পড়েছে। ১৭ জানুয়ারি প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের কর্মকর্তারা তার খামারের মুরগি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে মুরগির দেহে বার্ড ফ্লুর জীবাণু শনাক্ত করে। অধিকতর পরীক্ষার জন্য ওই খামারের মুরগি আরও নিখুঁত পরীক্ষার জন্য ঢাকা জাতীয় প্রাণিসম্পদ অধিদফতরে নিয়েও পরীক্ষা করা হয়। এরপর মঙ্গলবার রাতে ওই খামারের ৭ হাজারের বেশি মুরগি বিষাক্ত ভ্যাকসিন প্রয়োগে মেরে ফেলা হয় এবং তা আগুনে পুড়িয়ে মাটিচাপা দেয়া হয়। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করে ওই সংসদ সদস্য বলেন, আমি বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে অভিযোগ করবো।

ধামরাই প্রতিনিধি জানান, ধামরাইয়ের ওই খামারের মালিক সংসদ সদস্য কামাল মজুমদার। ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় তার খামারের সব মুরগি বিষপ্রয়োগে মেরে ফেলা হয়। এতে সংসদ সদস্য কামাল মজুমদার প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের ডিজির বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর কাছে অভিযোগ দেবেন বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

তার দাবি, ‘আমার দু’জন অভিজ্ঞ ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নিয়মমাফিক প্রতিনিয়ত মুরগির দেহ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন। তাদের দেয়া তথ্যমতে, মুরগিগুলো সুস্থ ও সবল ছিল।’

সংসদ সদস্য কামাল মজুমদারের বক্তব্যের বিরোধিতা করে ধামরাই উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদফতর জানায়, এ খামার থেকে পুরো উপজেলার সব খামার এমনকি সারা দেশেও এ জীবাণু ছড়াতে পারে। কাজেই বার্ড ফ্লু ধরা পড়লেই সমূলে তা ধ্বংস করতে হয়। এ স্থানেও তার কোনো ব্যত্যয় ঘটেনি।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমএইউ

Wordbridge School
Link copied!