• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

বাল্য বিয়ে ও যৌতুকের অন্ধকারে ডুবে আছে ভোলার মাঝের চর


ভোলা প্রতিনিধি নভেম্বর ২৫, ২০১৭, ০২:৩৩ পিএম
বাল্য বিয়ে ও যৌতুকের অন্ধকারে ডুবে আছে ভোলার মাঝের চর

ভোলা: শহর থেকে মাত্র ৫ কিলোমিটার দুরের বিচ্ছিন্ন চরের নাম মাঝের চর। এই চরে প্রভাবশালীদের প্রভাবে একের পর এক হচ্ছে বাল্য বিয়ে। আর যৌতুক ছাড়া কোনো বিয়েই সম্পন্ন হয় না এই এলাকায়।

এতে বাল্য বিয়ে আর, যৌতুকের অন্ধকারে ডুবে আছে ভোলা সদরের মাঝের চর এলাকা। ভুয়া জন্ম সনদ সংগ্রহ করে অনেক বাল্য বিয়ের বৈধতা দিচ্ছেন স্থানীয় কাজীরা।

মাঝের চর ঘুরে স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, ভোলা সদর উপজেলার কাচিয়া ইউনিয়ন সংলগ্ন মধ্যে মেঘনায় জেগে ওঠা মাঝের চরে এখন প্রায় ১০ হাজার মানুষের আবাসস্থল। ১৯৯৭ সালে আশ্রায়ন প্রকল্পের ব্র্যাক হাউজ নির্মাণের মধ্য দিয়ে এ চরের জনবসতি শুরু হয়। পর্যায়ক্রমে ৪টি ব্র্যাক হাউজে ৫ শতাধিক পরিবার এবং নিজের উদ্যোগে ঘর তুলে আরো ৫ শতাধিক পরিবার বসবাস করছে।

মেঘনার ভাঙনকবলিত কাচিয়া ইউনিয়নের অধিকাংশ পরিবারই এ মাঝের চরে বসতি স্থাপন করে। চরে অধিকাংশ মানুষের পেশা কৃষি ও জেলে। ঘনবসতিপূর্ণ ওই চরে জন্ম নিয়ন্ত্রণের কথা বলে না কেউ। বর্তমানে সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা সৃষ্টি করছে বাল্য বিয়ে ও যৌতুক। এ দুটি অভিশাপ চরের মানুষের নাভিশ্বাস তুলেছে।

ওই চরের মেয়ে রহিমা বয়স ১৩ বছর তার কোলে দেখা গেল ৬ মাসের শিশু সন্তান রফিজলকে। তারই মত আরেক বালিকা বধু রোকেয়া বেগম দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় বিয়ে হয়েছে তার। এমনিভাবে ওই চরের আয়সা বিবি, আছমা বেগম, নিরজনাসহ অধিকাংশ মেয়ের বিয়ে হয়েছে ১০ থেকে ১৪ বছরের মধ্যে।

যে বয়সে খেলনা হাড়ি পাতিল ও খেলনা পতুলের বিয়ে দেয়ার কথা, সেই বয়সে ওই চরের মেয়ে শিশুরা নিজেরাই বিয়ের পিড়িতে বসতে বাধ্য হচ্ছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক বালিকা বধুর শ্বশুর জানান, চরের স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তিদের চাপে অধিকাংশ বাল্য বিবাহ সংঘটিত হচ্ছে।

এদের মধ্যে আলমগীর, নুরু সালাম চৌকিদার, ক্ঞ্চন জাগিরদার স্থানীয় মাতাব্বর হওয়ায় তাদের নির্দেশ মানতে বাধ্য হয় ওই চরের নিরিহ মানুষগুলোকে। তাদের মধ্যস্থতাতেই অধিকাংশ বাল্য বিয়ে সংঘটিত হচ্ছে। ওই চরের বাসিন্দা মো. জামাল মিয়া জানান, চরের অধিকাংশ মানুষ অশিক্ষিত। বাল্য বিয়ে সম্পর্কে কেউ সচেতন নয়। বাল্য বিবাহের প্রতিবাদ করলে মেয়ের পক্ষই বেশি অখুশি হয়। তাই আগ বাড়িয়ে কেউ বাল্য বিবাহে বাধা দিতে যায় না।

স্থানীয় চেয়ারম্যান মেম্বাররা এ চরের তেমন কোনো খোঁজ-খবরও নেন না। তিনি আরো জানান, বাল্য বিবাহ সংঘটিত হয় ২০-৩০ হাজার টাকা যৌতুক দিয়ে। ২০ হাজার টাকার কম যৌতুকে এই চরের কোন মেয়ে বিয়ে হয় না। ওই চরের বাসিন্দা আবু তাহের জানান, এই চরের বাল্য বিবাহের বৈধতা দিতে তৎপর থাকে একটি চক্র। ওই চক্র টাকার বিনিময়ে ইউনিয়ন পরিষদ সচিবের কাছ থেকে ছেলে মেয়ের নকল জন্ম নিবন্ধন সনদ নিয়ে কাচিয়া ইউনিয়নের নিকাহ রেজিস্ট্রার কাজীর মাধ্যমে বাল্য বিয়ে রেজিস্ট্রার করে থাকেন।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এইচএআর

Wordbridge School
Link copied!