• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বাল্যবিয়ে মুক্ত এলাকায় এমপির মেয়ের বাল্যবিয়ে!


ময়মনসিংহ প্রতিনিধি ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০১৭, ০৮:১০ পিএম
বাল্যবিয়ে মুক্ত এলাকায় এমপির মেয়ের বাল্যবিয়ে!

ময়মনসিংহ:: মাত্র ১৫ দিন আগে নিজের এলাকাকে বাল্যবিয়েমুক্ত ঘোষণা করেছিলেন ময়মনসিংহের এক সংসদ সদস্য (এমপি)। বলেছিলেন তার এলাকায় আর কোনো শিশুবিয়ে হবে না। কিন্তু দুই সপ্তাহ পরেই তার ঘোষিত এলাকায় বাল্যবিয়ে দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ তুললেন এলাকাবাসী। তাও অভিযোগের তীর একেবারে স্বয়ং এমপির দিকেই।

শুক্রবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) মুক্তাগাছা উপজেলা পরিষদ মাঠে রাজকীয় সেই বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিয়েতে আমন্ত্রিত অতিথি ছিলেন প্রায় ১৫ হাজার। জবাই করা হয়েছিল ৫০০টি ছাগল। রাজকীয় সেই বিয়ের অনুষ্ঠানে শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল স্থানীয় মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের রোভার স্কাউট সদস্যদের।

অতিথিদের আপ্যায়ন করতে উপজেলা পরিষদ মাঠ ছাড়াও স্থানীয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে বিশাল আয়োজন করা হয়। এমপির অষ্টম শ্রেণীতে পড়ুয়া মেয়েসহ দুই মেয়ের বিয়ে দেয়া হয় মহাধুমধাম করে। খরচও করা হয় কয়েক কোটি টাকা।

স্থানীয়রা জানান, এমপি তার নিজের দুই মেয়েকে একই আয়োজনে বিয়ে দিয়েছেন। বড় মেয়ে প্রাপ্তবয়স্ক হলেও ছোট মেয়ের বয়স নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ছোট মেয়ে ২০১৬ সালে ময়মনসিংহ সদরের গলগণ্ডা এলাকার মিফতাহুল জান্নাত মহিলা মাদরাসা থেকে সপ্তম শ্রেণি পাশ করে। চলতি ২০১৭ সালে অষ্টম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হলেও মাদরাসায় যায়নি।

এমপির বড় মেয়ে ২০১৪ সালে স্থানীয় একটি স্কুল থেকে এসএসসি পাস করেছেন। সনদ অনুযায়ী তার জন্ম ১৯৯৮ সালের ২৫ আগস্টে। বর্তমানে তার বয়স ১৮ বছর ৫ মাস। তার চেয়ে দুই বছরের ছোট সেই ছোট মেয়েটি। সে হিসাবে ছোট মেয়ের বয়স হওয়ার কথা ১৬ বছর ৫ মাসের মতো।

গলগণ্ডা এলাকার মিফতাহুল জান্নাত মহিলা মাদরাসার মুতামিম জামাল উদ্দিন বলেন, এমপি সাহেবের মেয়ে (ছোট মেয়ে আফসানা মিম) তার মাদরাসা থেকে গত বছর সপ্তম শ্রেণি পাশ করেছে। নতুন বছর অর্থাৎ চলতি বছরে আর মাদরাসায় আসেনি।

বিয়ের আয়োজন

মুক্তাগাছা পৌরসভার মেয়র মো. শহীদুল হক জানান, আফসানা মিম নামে কোনো মেয়ে তার পৌরসভা থেকে জন্মনিবন্ধন নেয়নি।

ময়মনসিংহ জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মছিরুন্নেছা জানান, এমপির মেয়ের বাল্যবিয়ের বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না। বিয়ে রেজিস্ট্রি সম্পন্ন করা কাজী নুরুল আমিন বলেন, জন্ম নিবন্ধন অনুযায়ী ছোট মেয়ের বিয়ের বয়স হয়েছে বলে এমপি সাহেব জানিয়েছেন। কিন্তু বয়স প্রমাণের কোনো কাগজ দেখাননি।

কেউ কেউ অবশ্য বলছেন, বিয়ের ন্যূনতম বয়স নিয়েই তো রয়ে গেছে নানা তর্ক-বিতর্ক। বিয়ের বয়স ১৮ ধরা হলেও বাবা মা চাইলে তার মেয়েকে ১৬ বছরেও বিয়ে দিতে পারেন। এ হিসেবে তো এমপি মেয়ের বিয়েকে বাল্যবিয়ে বলা যায় না।

তবে এলাকাবাসী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলছেন, গত ৩১ জানুয়ারি মুক্তাগাছা উপজেলা পরিষদ মাঠে আনুষ্ঠানিকভাবে নিজ উপজেলাকে বাল্যবিয়ে মুক্ত ঘোষণা করেন ময়মনসিংহ-৫ (মুক্তগাছা) আসনের জাতীয় পার্টির এমপি সালাউদ্দিন আহমেদ মুক্তি। আজ (১৭ ফেব্রুয়ারি) সেই মাঠেই তার অপ্রাপ্তবয়স্ক ছোট মেয়ের বাল্যবিয়ে দিয়ে দিলেন কীভাবে?

মুক্তগাছা উপজেলা সদরের গো-হাটার বাসিন্দা খোরশেদ আলম ও বিল্লাল হোসেন বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, এমপি নিজে মুক্তাগাছাকে বাল্যবিয়ে মুক্ত ঘোষণা করে তার মেয়েকেই দিলেন বাল্যবিয়ে। বিষয়টা আমাদের বোধগম্য হচ্ছে না।

ময়মনসিংহ জেলা কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি অ্যাডভোকেট এমদাদুল হক মিল্লাত প্রশ্ন তোলেন, আইন প্রণেতা নিজে আইন না মানলে সাধারণ নাগরিকরা কী করবেন? ওই এমপি নিজ উপজেলাকে বাল্যবিয়ে মুক্ত ঘোষণা করে নিজের মেয়েকে বাল্যবিয়ে দিলেন- যা জাতির জন্য লজ্জার।

এমপির মেয়েদের রাজকীয় বিয়ের খরচ ও ছোট মেয়ের বিয়ের বয়স নিয়ে এলাকায় চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। এ ব্যাপারে জানতে মুক্তাগাছা উপজেলা নির্বাহী অফিসার জুলকার নয়নের সঙ্গে একাধিক বার বার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

বিয়ের আয়োজন

তবে এমপি সালাহ উদ্দিন আহম্মেদ মুক্তি এ প্রতিনিধিকে মুঠোফোনে জানান, স্থানীয় পৌরসভা থেকে জন্ম নিবন্ধন না নিলেও তার ছোট মেয়ে আফসানা মীমের বয়স ১৮ পেরিয়ে গেছে। তবে বড় মেয়ের চেয়ে ছোট মেয়ে ২ বছরের ছোট বলেও স্বীকার করেন।

উল্লেখ্য, এমপি মুক্তির মেয়েদের রাজকীয় বিয়ে অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- বিরোধীদলীয় ও জাতীয় পার্টির নেত্রী রওশন এরশাদসহ বিভাগ ও জেলার গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা। ছোট মেয়ের বর পুলিশের এসআই। বর্তমানে টাঙ্গাইলের ঘাটাইল থানায় কর্মরত। বড় মেয়ের বর দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) ঢাকা অফিসের উপ-সহকারি পরিচালক।

এমপি সালাউদ্দিন আহমেদ মুক্তি ময়মনসিংহ ৫ আসন থেকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জাতীয় পার্টির এমপি নির্বাচিত হয়েছে। তিনি জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম-মহাসচিব।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমএইচএম/আতা

Wordbridge School
Link copied!