• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বাসে বোমা হামলা: দুই বছরেও শেষ হয়নি বিচার


রংপুর প্রতিনিধি জানুয়ারি ১৪, ২০১৭, ০২:৫১ পিএম
বাসে বোমা হামলা: দুই বছরেও শেষ হয়নি বিচার

রংপুর : শনিবার ১৪ জানুয়ারি। ২০১৫ আজকের এইদিনে মানুষরূপী মুখোশধারী কিছু দুর্বৃত্তদের ছোড়া পেট্রোল বোমার আগুন জীবন্ত মানুষ দগ্ধ হয়ে অকালে নিহত হন শিশুসহ ৬ জন নিরাপরাধ মানুষ। অগ্নিদগ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হন আরও ২৫ যাত্রী। বীভৎস সেই ঘটনা পেরিয়ে যাবার দুই বছর পূর্ণ হলেও এখনো বিচার শেষ হয়নি অসহনীয় এই নৃশংসতার।

২০১৫ সালের আজকের দিনে রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার জায়গীর বাতাসন এলাকায় খলিল পরিবহন নামে একটি যাত্রীবাহী বাসে পেট্রোল বোমা হামলার ঘটনা ঘটে। এতে বোমার আগুনে পুড়ে কয়লা হয়েছে কেউ। কারো গায়ের বেশির ভাগ পুড়ে গেছে। কারো গায়ের চামড়া পুড়ে রূপ নিয়েছে বীভৎস। অবর্ণনীয় এই চিত্র যারাই দেখেছে, আঁতকে উঠেছে। এমন নৃশংস হতে পারে মানুষ! অসহনীয় এই নৃশংসতার ঘটনা দুই বছর আগের।

এই ঘটনায় জামায়াত-শিবিরের দুর্বৃত্তরা জড়িত বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। দু’বছর অতিবাহিত হলেও এখনো চাঞ্চল্যকর এ মামলার অনেক আসামিকেই গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। সাক্ষীর অভাবে মামলার বিচারও থমকে আছে।

পুলিশ ও আদালত সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সালের ১৪ জানুয়ারি কুড়িগ্রামের উলিপুর থেকে খলিল পরিবহনের একটি নাইটকোচ যাত্রীদের নিয়ে ঢাকায় যাচ্ছিল। রাত প্রায় ১টার দিকে রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার বাতাসন এলাকায় পৌঁছালে জামায়াত-শিবিরের দুর্বৃত্তরা বাসটি লক্ষ্য করে কয়েকটি পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করে। এতে বাসের ভেতরে আগুন ধরে যায় এবং জীবন্ত দগ্ধ হয়ে এক শিশুসহ ছয়জন নিহত হন। অগ্নিদগ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হন আরও ২৫ যাত্রী।

এ ঘটনায় মিঠাপুকুর থানায় ৮৭ জনের নাম উল্লেখ করে সন্ত্রাস দমন আইনে মামলা দায়ের করা হয়। তদন্ত শেষে পুলিশ ১৩২ জন জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে। মামলায় এ পর্যন্ত পুলিশ ৬৯ জনকে গ্রেপ্তার করলেও এখনও ৬৩ জন আসামি পলাতক আছে। পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করতে পারেনি। মামলাটি বর্তমানে রংপুরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত-১ এ বিচার চলছে।

এখনো পর্যন্ত ৩২ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য ও জেরা সম্পন্ন হলেও মামলার মূল সাক্ষী অগ্নিদগ্ধ ও নিহতদের স্বজনরা কেউ সাক্ষী দেননি। পুলিশও সাক্ষী হাজির করতে কোনো ভূমিকাই পালন করছে না। ফলে মামলার বিচার শেষ হচ্ছে না, এ অভিযোগ সরকার পক্ষের আইনজীবীদের।

অন্যদিকে, মানববাধিকার কর্মী ও রাজনীতিবিদদের অভিযোগ- সাক্ষীদের আদালতে হাজির করতে না পারা পুলিশের চরম অবহেলা।

এ নিয়ে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য কমরেড শাহাদত হোসেন জানান, চাঞ্চল্যকর এ মামলাটিতে ১৩২ জনের নামে চার্জশিট দাখিল করা হলেও মামলার বাদী মিঠাপুকুর থানার তৎকালীন এসআই আব্দুল আজিজ আদালতে সাক্ষ্য দেয়ার সময় তাদের সবার নাম বলতে পারেননি। মামলার বেশিরভাগ আসামিকে এখনো গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।

মানবাধিকার সংগঠক হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের রংপুর জেলার আহ্বায়ক সিনিয়র আইনজীবী এমএ বাশার বলেন, ‘বিচার বিভাগে প্রচলিত আছে ‘জাস্টিস ডিলেইড, জাস্টিস ডিনাইড’। এক্ষেত্রে কাদের গাফলতি আর দায়িত্বহীনতা আছে তা খতিয়ে দেখা দরকার। দু’বছর অতিবাহিত হয়ে গেল এখনো বিচারই শেষ হল না।’

রংপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তুষার কান্তি মণ্ডল জানান, মিঠাপুকুরে জামায়াত-শিবির সন্ত্রাসীরা যে নারকীয় তাণ্ডব চালিয়ে ছয়জন মানুষকে জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যা করেছিল, তাদের বিচার এখনো শেষ না হওয়ায় আমরা ক্ষুব্ধ। এই চাঞ্চল্যকর মামলার বিচার গোটা রংপুরের মানুষ দেখতে চায়।

মামলা পরিচালনাকারী রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী (পিপি) আব্দুল মালেক জানান, মামলার প্রধান সাক্ষীরাই এখনো সাক্ষী দেয়নি। মামলার ৬০ জন সাক্ষীর মধ্যে এ পর্যন্ত ৩২ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য ও জেরা সম্পন্ন হয়েছে। বাকি সাক্ষীরা ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী অগ্নিদগ্ধ ও নিহতের স্বজন। এদের বাড়ি কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার বিভিন্নস্থানে। তাদের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হলে দ্রুততম সময়ে বিচার শেষ করা সম্ভব হবে।

এ ব্যাপারে মিঠাপুকুর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘মামলার প্রধান আসামিদের অনেককেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’

মামলার সাক্ষীদের হাজির না করার অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুখ সাংবাদিকদের জানান, মামলায় সাক্ষীদের হাজির করার জন্য আলাদা সেল গঠন করা হয়েছে। কেউ দায়িত্বে অবহেলা করলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেন তিনি।

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, এখনো ওই এলাকার মানুষ ঘটনার কথা মনে করলে আঁতকে ওঠেন। তারা বলেন, এমন ঘটনা যেন আর কখনো না ঘটে। এমন চিত্র যেন আর মানুষ না দেখে। দোষী ব্যক্তিদের কঠোর শাস্তি দাবি করেন তারা।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এইচএআর

Wordbridge School
Link copied!