• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বাড়ছে অস্থিরতা


বিশেষ প্রতিবেদক অক্টোবর ২১, ২০১৮, ০৮:১১ পিএম
বাড়ছে অস্থিরতা

ঢাকা : দেশজুড়ে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হওয়া বইতে শুরু করেছে। আগামী মাসের প্রথম দিকেই এই নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করার কথা।

এদিকে, নির্বাচনের দিন-তারিখ যত এগিয়ে আসছে দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ততই বাড়ছে অস্বস্তি। নির্বাচন অনুষ্ঠান সংশ্লিষ্টদের মাঝেই সৃষ্টি হয়েছে বেশ অস্থিরতা। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি, নির্বাচন কমিশন ও অন্যান্য রাজনৈতিক দল ও জোটের মধ্যে অস্থিরতা যেন ক্রমেই বাড়ছে। কোনো পক্ষই এখন স্বস্তিতে নেই। সংশ্লিষ্ট একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্রমতে, আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল, অধিকাংশ আসনে একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে দ্বন্দ্ব, কোনো কোনো ইস্যুতে কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য, সরকারের নেওয়া কিছু পদক্ষেপের পর বিভিন্ন মহল থেকে আপত্তি ও প্রতিবাদ ওঠা এবং আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে, বিশেষ করে বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে দেশে-বিদেশের চাপ আওয়ামী লীগকে বেশ চাপে ফেলেছে। এছাড়া নির্বাচন কমিশনের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডও ক্ষমতাসীনদের বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছে।

অপরদিকে, রাজনীতি ও ভোটের মাঠে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির সংকট অন্য রকম। এই মুহূর্তে দলটি তাদের তৃণমূলে নির্বাচনে যাওয়া-না যাওয়া নিয়ে কোনো সিদ্ধান্তই জানাতে পারেনি। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি ও নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবি বাস্তবায়নের কোনো সম্ভাবনাই দেখছেন না দলটির নেতারা। কোনো দাবি পূরণ ছাড়াই নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক হবে কি-না, তা নিয়ে দ্বিধা-দ্বন্দ্বের রয়েছেন কেন্দ্রীয় নেতারা।

দাবি পূরণ ছাড়াই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলে বিগত দশম সংসদ বর্জনের সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল না- এমন বার্তা দলের তৃণমূলে ও সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছাবে কি-না, তা নিয়েও সংশয়ে আছে বিএনপি। পাশাপাশি জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে বিএনপির অংশগ্রহণের পর তাদের পুরোনো জোট ২০-দলীয় জোটে ভাঙন দলটিকে চাপে ফেলেছে। ২০ দলের ঐক্য ধরে রাখতে বিএনপির নেতারা এখন নানা মহলে দৌড়ঝাঁপ করছেন।

সূত্রমতে, রাজনীতির এমন গুরুত্বপূর্ণ সময়ে বসে নেই ছোট দলগুলো। তারা জোট করছে, আবার ভাঙছেও। হিসাব কষছে কোন জোটে গেলে লাভ বেশি। ছোট দলগুলোর আচরণ এবং বাংলাদেশের রাজনীতিতে তৃতীয় বৃহত্তম দল জাতীয় পার্টির কিছুটা ধোঁয়াশা অবস্থান নিয়েও রাজনৈতিক অঙ্গনে চলছে নানা আলোচনা। জাতীয় পার্টি শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটে থাকবে, না-কি আলাদা জোট করে ভোটে আসবে, সেটি এখনো দলটি স্পষ্ট করেনি।

অবশ্য ভোটের আগে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অস্বস্তি, উত্তেজনা, সংকট থাকাটা অস্বাভাবিক নয়। কেননা নির্বাচনের আগে নির্বাচনকালীন সরকারসহ বেশ কিছু ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা রয়েই গেছে। এসব বিষয়ে কোনো মীমাংসা না হওয়ায় শেষ পর্যন্ত কী হবে, তা নিয়ে সবাইকে শেষ দিন পর্যন্ত অস্বস্তিতে থাকতে হবে। তবে রাজনীতির সাম্প্রতিক পরিবেশ ভারী হওয়া ও সুষ্ঠু ভোট অনুষ্ঠান নিয়ে সন্দেহ, উদ্বেগ আরো বাড়িয়ে দিয়েছে।
 
সূত্রমতে, সম্প্রতি নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদারকে ঘিরে কমিশনের কাজে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। আবার নির্বাচন কমিশনের কাজ কমিশনারদের অবহিত না করা নিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদার সঙ্গে মাহবুব তালুকদারসহ অন্য কমিশনারদের দূরত্ব তৈরিও হয়েছে। কমিশন সচিবালয়ের কর্মকাণ্ড নিয়েও আপত্তি আছে কমিশনারদের।

শেষ মুহূর্তে এসে নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার কীভাবে হবে, কতটা হবে- এ নিয়ে সাধারণ মানুষ ও রাজনীতিবিদদের মধ্যে যেমন পক্ষ-বিপক্ষ আছে। তেমনি ইসিও ইভিএমে ভোট নেওয়া নিয়ে আছে অস্বস্তিতে। অস্বস্তির কারণ হলো- অল্প সময়ের মধ্যে যারা ইভিএম পরিচালনা করবেন, তাদের প্রশিক্ষণ এবং ভোটারদের ইভিএমে ভোট দেওয়ার ব্যাপারে অভ্যস্ত করে তোলা।

অবশ্য প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা মনে করছেন তাদের মধ্যে যে মতবিরোধ আছে, তা নির্বাচনে কোনো প্রভাব ফেলবে না। তবে নির্বাচন বিশেষজ্ঞ সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজনের সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার মনে করেন, ভোট নিয়ে মানুষের মধ্যে একধরনের অনিশ্চয়তা আছে। এ থেকেই অস্বস্তি সবার মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে।

তিনি বলেন, বিগত সময়ে, বিশেষ করে দশম সংসদ নির্বাচন ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনের বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সুষ্ঠু ভোট হতে খুব একটা দেখা যায়নি। ফলে রাজনৈতিক দলগুলো ভোট নিয়ে ভাবছে, এবার কেমন ভোট হবে। আর ভোটাররা ভাবছেন, তারা তাদের ভোট দিতে পারবেন কি-না বা তাদের ভোটের প্রতিফলন ফলাফলে থাকবে কি-না।

এই নির্বাচন বিশেষজ্ঞ আরও মনে করেন, সুষ্ঠু ভোটের জন্য নির্বাচন কমিশনকে সাধারণ মানুষ ও রাজনৈতিক দলগুলোকে আশ্বস্ত করতে হবে। যেটা এই কমিশন পারছে না। ফলে সব দিকে, সব অংশীজন বা পক্ষের মধ্যে অস্বস্তি ভর করছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর একজন সদস্য ও কেন্দ্রীয় কমিটির একজন সম্পাদক বলেন, ভোটের আগে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কিছু সমস্যা আছে। কোন্দলই মূলত আওয়ামী লীগের বড় সংকট। অবশ্য এ নিয়ে দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সতর্ক আছেন। ইতিমধ্যে মাঠপর্যায়ের নেতাদের বিশৃঙ্খলা এড়াতে বলা হয়েছে। তা-না হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ওই দুই নেতা বলেন, নির্বাচন কমিশনের দিকে তারা নজর রাখছেন। তবে কমিশনের যে সমস্যা তা সমাধান হয়ে যাবে বলে তাদের ধারণা। এতে ভোটে প্রভাব পড়বে না।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রাজ্জাক বলেন, ভোটের আগে কিছু চাপ সব সময়ই থাকে। বিদেশিরা যেমন সবার অংশগ্রহণে ভোট চায়, আওয়ামী লীগও তেমনটি চায়। আর এবার সব দল ভোটে আসবে বলেই তারা মনে করেন।

সূত্রমতে, বিএনপির সমস্যাটা নিজেদের নিয়ে। মূলত সরকার যদি কোনো দাবিই না মানে, তাহলে এবার ভোটে যেতে বিএনপির যুক্তি কী হবে, তা নিয়ে দলটির মধ্যে চলছে নানা আলোচনা। নেতাদের বিপরীতমুখী অবস্থান দলকে চরম অস্বস্তির মধ্যে ফেলেছে। সম্প্রতি বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ের দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের বৈঠক ও ২০-দলীয় জোটের বৈঠকে এ নিয়ে বিশদ আলোচনা হয়েছে।

বিএনপির একজন দায়িত্বশীল সিনিয়র নেতা বলেন, বিএনপি শেষ পর্যন্ত ভোটে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলে যুক্তি হিসেবে খালেদা জিয়ার মুক্তি নিশ্চিত করা, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে দেশে ফেরানো এবং সর্বোপরি দেশে গণতন্ত্র ফেরানোর কথা বলবে।

এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বিএনপির চেয়ে অস্বস্তি বা সংকট সরকারের বেশি। বিএনপি নির্বাচনে যেতেই সবকিছু করছে। এছাড়া এবার সরকার একতরফা নির্বাচন করে পার পাবে, সেটা ভাবার কারণ নেই। এটা সরকারও বোঝে।

আমীর খসরু আরও বলেন, তাদের নিরপেক্ষ সরকারের দাবি সাধারণ মানুষ উপলব্ধি করেছে। বিদেশিরা মনে করছেন, এই সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব না। ফলে রাজনৈতিক টানাপোড়েন থাকলেও বিএনপি তা কাটিয়ে উঠবে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!