• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

‘বাড়ছে সেশন জট’ মানতে নারাজ প্রশাসন, ভোগান্তিতে শিক্ষার্থীরা


রাহুল এম ইউসুফ জাবি অক্টোবর ২৮, ২০১৭, ০৮:৩৯ পিএম
‘বাড়ছে সেশন জট’ মানতে নারাজ প্রশাসন, ভোগান্তিতে শিক্ষার্থীরা

প্রতীকী ছবি

জাবি: তেমন কোন সেশন জট নেই বলে প্রশাসন দাবি করলেও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪ বছরের স্নাতক শেষ করে ফলাফল পাইতে সময় লাগছে প্রায় ৫ বছর। এক বছরের স্নাতকোত্তর শেষ হচ্ছে দেড় বছর কিংবা তারও বেশি সময়ে। অহেতুক এ সংকটকে  বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নজরদারিতার অভাব ও উদাসীনতাকে দায়ি করছেন সংশ্লিষ্টরা।

অপরদিকে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাকরা ক্লাসে অনিয়মিত থাকা, সান্ধ্যকালীন কোর্স ও প্রাইভেট কোর্সে বেশি মনোযোগী হওয়ায় এই জট আরো তীব্র আকার ধারণ করেছে। আর এমন পরিস্থিতির কারণে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মাঝে দৌরাত্ম তৈরি হচ্ছে বলেও অনেক শিক্ষার্থী মত প্রকাশ করেছেন।

তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে সেশন জট বাড়ছে না বরং ক্রমেই কমছে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থী মাসুদ রানা সোনালীনিউজকে বলেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের গতি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও কমে গেছে। আমাদের সঙ্গে যারা জাতীয় ও অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিল তারাও আমাদের চেয়ে অনেক এগিয়ে আছে। তাই প্রশাসনের এ বিষয়ে এখনই সুনজর দেয়া উচিত।’

বিগত কয়েক বর্ষ পর্যালোচনা করে দেখা যায়, নতুন শিক্ষা বর্ষ আসলেই বাড়ছে সেশন জট। ক্রমেই জটের ধারা দীর্ঘ হচ্ছে। যার ফলে আবাসিক হলগুলোতে সিটের সংকট দেখা দিচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১১-১২ শিক্ষা বর্ষের (৪১ তম আবর্তন) ক্লাস শুরু হয় ২০১২ সালের ২১ ডিসেম্বর। সে অনুযায়ী স্নাতকোত্তর রেজাল্ট হওয়ার কথা গত বছরের ২১ ডিসেম্বর মধ্যে। কিন্তু অনেক বিভাগ তাদের পরীক্ষাই শেষ করতে পারে নি। আর ফলাফলের জন্য অপেক্ষা করতে হয় অন্তত ছয় মাস।  

সে অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬টি অনুষদের ৩৪ টি বিভাগের অধিকাংশ বিভাগ একাডেমিক ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ৬ থেকে ১ বছর কিংবা তারো বেশি সময় পিছিয়ে পড়েছে। তবে ২টি ইনস্টিটিউটের অধীনে বিবিএ অর্ধ বছর জটে থাকলেও পিছিয়ে নেই আইআইটি ।

সর্বশেষ ২০১৫-১৬ সেশনে (৪৫তম আবর্তন) ভর্তিকৃত শিক্ষার্থীদের একাডেমিক ক্যালেন্ডর অনুযায়ী প্রথম বর্ষের ফলাফল এ বছরের জানুয়ারী মাসে প্রকাশ করার কথা থাকলেও ১০ মাস অতিবাহিত হলেও অধিকাংশ বিভাগই তা বাস্তবে রূপ দিতে পারেনি।

বিজনেস স্টাডিজ অনুষদভুক্ত ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং, মার্কেটিং,একাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস এবং ম্যানেজমেন্ট বিভাগ ১ বছরেরও বেশি সময় সেশন জটে রয়েছে। একই অবস্থানে রয়েছে অইন অনুষদ ভুক্ত আইন ও বিচার বিভাগ।

জীববিজ্ঞান অনুষদ ভুক্ত পাবলিক হেল্থ এন্ড ইনফরমেটিক্স বিভাগ, বায়োটেকনোলজি এন্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, মাইক্রোবায়োলজি বিভাগ এবং ফার্মেসি বিভাগসমূহে রয়েছে এক বছরের সেশন জট। এই অনুষদভুক্ত প্রাণিবিদ্যা বিভাগ, প্রাণরসায়ন ও অণুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগ ও উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগে রয়েছে অর্ধ বছরের জট।

সমাজবিজ্ঞান অনুষদভুক্ত ছয়টি বিভাগে রয়েছে ৪-৬ মাসের জটে। কলা ও মানবিকী অনুষদভুক্ত বাংলা বিভাগ কোনো জট ছাড়াই শেষ করেছে ৪১তম ব্যাচের মাস্টার্স পরীক্ষা। এছাড়া অন্যান্য বিভাগগুলোও পিছিয়ে রয়েছে ৬-১০ মাসে। তবে নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগ এবং চারুকলা বিভাগ পিছিয়ে রয়েছে ১ বছর।

গাণিতিক ও পদার্থ বিষয়ক অনুষদভুক্ত ৭টি বিভাগের মধ্যে পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগ ছাড়া গণিত, পরিসংখ্যান ও রসায়ন বিভাগে রয়েছে অর্ধ বছর পিছিয়ে। তবে কম্পিউটর সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, পরিবেশ বিজ্ঞান ও ভূতাত্ত্বিক বিজ্ঞান বিভাগ রয়েছে ১ বছরেরও বেশি সেশন জটে।

ক্ষোভ প্রকাশ করে মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের ৪২তম আবর্তনের এক শিক্ষার্থী সোনালীনিউজকে বলেন, যে সময় আমাদের মাস্টার্সের পরীক্ষার প্রস্তুতি নেয়ার কথা, তখন আমরা ফাইনাল ইয়ারের ফরম পূরণে ব্যস্ত। প্রশাসনের উচিত দীর্ঘ জট কমিয়ে দ্রুত একাডেমিক ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ক্লাস পরীক্ষা শেষ করা।’’

এ বিষয়ে আ. ফ. ম. কামালউদ্দিন হলের প্রাধ্যক্ষ ও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সিকদার মো. জুলকারনাইন সোনালীনিউজকে বলেন, পরিসংখ্যান অনুযায়ী আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে অবশ্যই সেশন জট আছে। আর তা ৪১তম আবর্তনের কথা চিন্তা করলেই বোঝা যাচ্ছে। আর এই সেশন জটের কারণেই আমাদের হলগুলোতে সিট সংকট চরম আকার ধারণ করছে।

তবে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বাস্তবিক অর্থে সেশন জট নেই বলে দাবি করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক আবুল হোসেন।

তিনি সোনালীনিউকে বলেন, শুধুমাত্র নাটক ও নাট্যতত্ত্ব এবং সিএসই বিভাগের পিছিয়ে থাকাকে সেশন জট বলে ধরা যায়। তাছাড়া অধিকাংশ বিভাগ ২-৩ মাস পিছিয়ে রয়েছে। এটা বিশ্ববিদ্যালয়ে সব সময় ছিল, এখনো আছে। তাই এটাকে সেশন জট বলা যাবে না।

কোনো ধরণের অনাকাঙ্খিত ঘটানায় ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ হচ্ছে না, তাই বিশ্ববিদ্যালয় তার স্বাভাবিক গতিতেই শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। ফলে ক্রমেই সেশন জট কমে আসছে বলে দাবি করেন তিনি।

সোনালীনিউজ/এমএইচএম

Wordbridge School
Link copied!