• ঢাকা
  • বুধবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

বাড়ছে সোনা চোরাচালান, ছাড় পাচ্ছে অধিকাংশ জড়িতরাই


নিজস্ব প্রতিবেদক জুন ১৯, ২০১৬, ০৩:৫০ পিএম
বাড়ছে সোনা চোরাচালান, ছাড় পাচ্ছে অধিকাংশ জড়িতরাই

দেশের বাজারে একদিকে বাড়ছে সোনার দাম অন্যদিকে বিপুল হারে চলছে সোনা চোরাচালান। ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে প্রায় প্রতিদিনই সোনার বারসহ যাত্রীদের আটক করছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। বিদেশ থেকে অনুমোদনহীনভাবে এসব স্বর্ণ তারা দেশে নিয়ে আসছেন। একেকটি স্বর্ণের বারের দাম কয়েক লক্ষ টাকা।

শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিমানবন্দর থেকে প্রতি মাসে গড়ে প্রায় ১০০ কেজি করে সোনা আটক করা হয়। গত কয়েক বছরের তথ্য থেকে এমনটিই জানা গেছে। শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর থেকে পাওয়া কয়েক বছরের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০০৯ সালে সরকারি বিভিন্ন সংস্থার হাতে চোরাচালানের পৌনে ১২ কেজি সোনা ধরা পড়ে। 

২০১০ সালে ৯ কেজি, ২০১১ সালে ৪ কেজি, ২০১২ সালে প্রায় ২৪ কেজি। ২০১৩ সালে ৫৫০ কেজি সোনা আটক করা হয়। দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ১২৪ কেজি সোনা উদ্ধারের ঘটনা ঘটে ২০১৩ সালের ২৪ জুলাই। এরপর ২০১৪ সালের মার্চ-এপ্রিলে ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে ১০০ কেজিরও বেশি ওজনের আরও দুটি বড় চালান ধরা পড়ে। 

২০১৩ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত এক বছরে বাংলাদেশের বিভিন্ন বিমানবন্দরে অবৈধভাবে আনা প্রায় ৭০০ কোটি টাকা মূল্যের ১৫০০ কেজি সোনা আটক করা হয়। ২০১৪ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত এক বছরে শুধু শাহজালাল বিমানবন্দর দিয়ে ৭১৯ কেজি এবং ২০১০ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরে ১৭৯৩ দশমিক ৭২ কেজি সোনা উদ্ধার হয়েছে। 

২০১৩ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৫ সালের নভেম্বর পর্যন্ত ২টি বিমানবন্দর সহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে চোরাপথে আসা প্রায় ৪৬মণ সোনা আটক হয়। তবে শুধু আমদানিই হচ্ছে তা নয়। ধারণা করা হচ্ছে যে পরিমাণ সোনা ধরা পড়ছে তার চেয়ে বহুগুণ বেশি সোনা পাচার হচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্যসহ কয়েকটি দেশ থেকে পাচার হয়ে বাংলাদেশে সোনা আসছে, আবার ভারতসহ অন্যান্য দেশে পাচারও হয়ে যাচ্ছে। 

জানা গেছে, দেশের বিমানবন্দরে সোনা চোরাচালান হয় সুনিয়ন্ত্রিত ও সুনির্দিষ্ট চেইনে। প্রায় প্রতিদিনই বিমানবন্দর দিয়ে চোরাচালানের জন্য নিয়ে আসা সোনা ধরা পড়ছে নিরাপত্তাকর্মীদের জালে। এই সোনা চোরাচালানের সঙ্গে বিমানবন্দর ও সীমান্তে দায়িত্বরত সংস্থাগুলোর দুর্নীতিপরায়ণ কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং কিছু রাজনীতিবিদ জড়িত। 

মাঝে মধ্যে সোনাসহ কয়েক বহনকারী ধরা পড়লেও চোরাকারবারি গডফাদাররা রয়ে যায় আড়ালে। এদিকে সোনা চোরাচালান বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে এ সংক্রান্ত অপরাধপ্রবণতাও। সূত্র জানায়, দেশে ২৫ হাজারের মতো ছোট-বড় সোনার দোকান রয়েছে। এসব দোকানের ব্যবসায়ীদেও বৈধ পথে (এলসি খুলে) কোনো সোনা আমদানির রেকর্ড নেই। প্রবাসীদের আনা সোনা দিয়ে অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটানো হয়। 

তাহলে পাচার হয়ে আসা বিপুল পরিমাণ সোনা যায় কোথায়? এমন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। চোরাই পথে আসা সোনা আবার চোরাই পথেই ভারতসহ কয়েকটি দেশে পাচার হচ্ছে। আর এতে অল্পতে বিপুল বিত্ত-বৈভবের মালিক হচ্ছেন চোরাকারবারির সঙ্গে জড়িত একশ্রেণীর মানুষ। বিমানবন্দর ও সীমান্ত বন্দরগুলোতে দায়িত্বরত নিরাপত্তাকর্মীসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজস ছাড়া এই কাজ করা সম্ভব নয়।

বাংলাদেশের স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের অভিযোগ- প্রতিবেশী বিভিন্ন দেশে পাচারের উদ্দেশ্যেই এসব সোনা আমদানি করা হয়। তাদের ধারণা, বাংলাদেশে অবৈধ পথে যে সোনা আসে তা মূলত বাংলাদেশকে রুট হিসেবে ব্যবহার করে প্রতিবেশী দেশে পাচার হয়ে যায়। জান গেছে, বাংলাদেশে সোনা আমাদানির কোনো নীতিমালা নেই। 

বাংলাদেশে যে কেউ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিয়ে ভরি প্রতি (১১ দশমিক ৬৬ গ্রাম) মাত্র ১৫০ টাকা শুল্ক দিয়ে দেশে ফেরার সময় সর্বোচ্চ ২০০ গ্রাম সোনা আনতে পারেন। দেশে সোনা চোরাচালানের এসব ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের আটক এবং বিভিন্ন সংস্থা মামলা করলেও ধৃত ব্যক্তিদের অধিকাংশই জামিনে বেরিয়ে যান। কোনভাবেই তাদের জেলে আটকে রাখা সম্ভব হয় না। 

প্রভাবশালীদের জোরে ছাড় পেয়ে যায় এসব অপরাধী। এ ছাড়া এসব মামলার তদন্তেও তেমন অগ্রগতি নেই। মণকে মণ সোনা উদ্ধার, ডজন ডজন মামলা ও আটকের পরও বন্ধ হচ্ছে না সোনা চোরাচালান, বরং দিন দিন বাড়তেই আছে।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এএম

Wordbridge School
Link copied!