• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বাড়তি রাজস্ব আদায়ের মুখ দেখছে এনবিআর?


নিজস্ব প্রতিবেদক জুন ২৪, ২০১৬, ০৭:৫৩ পিএম
বাড়তি রাজস্ব আদায়ের মুখ দেখছে এনবিআর?

প্রতিবছরই সরকারের ব্যয়ের পরিকল্পনা বাড়তে থকে। এজন্য বাড়াতে হয় আয়ের লক্ষ্যও। তারই ফলশ্রুতিতে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) দুই লাখ কোটি টাকার বেশি রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করে দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত।

কিন্তু চলতি অর্থবছরে (২০১৫-১৬) এনবিআরের রাজস্ব আদায় সন্তোষজনক নয়। চলতি অর্থবছরে রাজস্ব আয়ের জন্য এনবিআর মাসভিত্তিক যে লক্ষ্য ঠিক করেছিল, কোনো মাসেই তা অর্জিত হয়নি। তবে এনবিআর এবার বলছে ভিন্ন কথা।

এনবিআর’র একটি সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের মে মাস পর্যন্ত এনবিআরের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ২৯ হাজার ৯০২ কোটি টাকা। যার বিপরীতে এগারো মাসে ১ লাখ ৩২ হাজার ২৯৫ কোটি টাকা আদায় করেছে প্রতিষ্ঠানটি। যা মূল লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ২ হাজার ৩৯৩ কোটি টাকা বেশি। ফলে এই সময়ে রাজস্ব আদায়ের প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়িয়েছে ১৪ দশমিক ১৮ শতাংশ।

তারা বলছে, মূল লক্ষ্যমাত্রা থাকাকালীন গত ০৯ মাসে রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি ছিল। কিন্তু রাজস্ব ঘাটতি সমন্বয় করতে ২০১৫-১৬ অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রা সংশোধনের পর গত দুই মাসে রাজস্ব আদায় বাড়তে দেখা গেছে। চলতি অর্থবছরের ১১ মাসে (জুলাই-মে) সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২ হাজার ৩৯৩ কোটি টাকা বেশি রাজস্ব আদায় করেছে এনবিআর।

সূত্রমতে, চলতি অর্থবছরে এনবিআরের জন্য রাজস্ব আয়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল ১ লাখ ৭৬ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা। কিন্তু মাসভিত্তিক লক্ষ্য অর্জিত না হওয়ায় বছরের শেষ ভাগে এসে এ লক্ষ্য কমিয়ে দেড় লাখ কোটি টাকা করা হয়। জুলাই-মার্চ সময়কালে আদায় হয়েছে ১ লাখ ৫ হাজার ৪৩২ কোটি টাকা। শেষ তিন মাসে (মার্চ-জুন) এনবিআরের সামনে প্রায় ৪৫ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আদায়ের চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়। এমন প্রেক্ষাপটে নতুন অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করা হয় যেখানে চলতি অর্থবছরের সংশোধিত লক্ষ্যের চেয়ে ৩৫ শতাংশ বেশি রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ধরা হয়েছে। কিন্তু এনবিআর কখনোই এত বেশি হারে রাজস্ব আদায় করতে পারেনি। সংস্থাটির রাজস্ব আদায় প্রবৃদ্ধি ১৫ থেকে ২০ শতাংশের মধ্যে সীমিত থাকে।

এদিকে আগামী ২০১৬-১৭ অর্থবছরের যে বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে তার গুণগত বাস্তবায়নই সবচেয়ে বড় সমস্যা সমস্যা মূলধন জোগানের ক্ষেত্রে রাজস্ব আদায়ে। রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা সব সময় বেশি মাত্রায় ধরা হয়। ১ টাকা জিডিপি বাড়াতে হলে রাজস্ব আয় ২ টাকা ৮০ পয়সা বাড়াতে হবে। যা নিকট অতীতে হয়েছে এমন কোনো রেকর্ড নেই বলে বিশ্বব্যাংক মনে করছে। বিশ্বব্যাংক বলছে, বাজেটে সুদ পরিশোধে ব্যয় দিন দিন বাড়ার ফলে জনগণের সুদের বোঝা বাড়ছে। আর বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির আকার বাড়ানো হচ্ছে, যা বাস্তবায়নের মান ও ক্ষমতা বৃদ্ধি ছাড়া বাস্তবায়নযোগ্য নয়।

এদিকে এনবিআর সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, পূর্বের বিশাল রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা বহাল থাকলে সেটি পূরণ এখনো সম্ভব হতো না। তবে সেই লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে এনে সংশোধন করার পর তা পূরণ করা ও তার চাইতে বেশি আদায় করা সম্ভব হচ্ছে।

এনবিআর এর এক কর্মকর্তা বলেন, ১৯৭২-৭৩ অর্থবছরে এনবিআরের রাজস্ব সংগ্রহের পরিমাণ ছিল মাত্র ১৬৬ কোটি টাকা। প্রায় চার দশকের ব্যবধানে গত ২০১৪-১৫ অর্থবছরে এনবিআর ১ লাখ ৩৫ হাজার ৭০০ কোটি টাকা রাজস্ব সংগ্রহ করেছে। যা ১৯৭২-৭৩ অর্থবছরের তুলনায় প্রায় ৮২৩ গুণ বেশি।

এনবিআর চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমানের মতে, গতানুগতিকতার বাইরে এসে নিজেকে একটি সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরের প্রয়াস চালাচ্ছে এনবিআর। রাজস্ব আহরণের ক্ষেত্রে যেকোনো প্রকার হয়রানি, কর ফাঁকি এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ ঘোষণা করে একটি করদাতাবান্ধব রাজস্ব সংস্কৃতি গড়ে তুলতে চেষ্টা অব্যহত রয়েছে।

এছাড়া, আধুনিক ডিজিটাল এনবিআরের কার্যক্রম বর্তমানে চলমান থাকায় মানুষ সহজেই হয়রানিমুক্ত পরিবেশে স্বত:স্ফূর্তভাবে এবং স্বচ্ছন্দে আয়কর, ভ্যাট ও শুল্ক প্রদান করতে পারছেন। তাই রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ আগের তুলনায় দিন দিন বাড়ছে, আগামীতেও বাড়বে। এজন্য এখন যেকোনো ধরনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণের জন্যই প্রস্তুত রয়েছে এনবিআর।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/আকন

Wordbridge School
Link copied!