• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
মেয়ে হত্যার বিচার চাইলেন মা

বাড়ি ফিরেছেন ‘নিখোঁজ’ বাবুল আক্তার


বিশেষ প্রতিনিধি সেপ্টেম্বর ৮, ২০১৬, ০১:১৯ এএম
বাড়ি ফিরেছেন ‘নিখোঁজ’ বাবুল আক্তার

চাকরি থেকে অব্যাহতির প্রজ্ঞাপনের পর থেকে নিরুদ্দেশ সদ্য সাবেক এসপি বাবুল আক্তার প্রায় ২০ ঘণ্টা পর বাড়িতে ফিরেছেন। বুধবার বিকেলে ঢাকার বনশ্রীতে শ্বশুর বাড়িতে ফিরলেও তিনি কারও সঙ্গে তেমন কোনো কথা বলেননি বলে জানিয়েছেন তার শ্বশুর মোশাররফ হোসেন।

তিন মাস আগে চট্টগ্রামে স্ত্রী মাহমুদা আক্তার মিতু হত্যাকাণ্ডের পর থেকে দুই সন্তানকে নিয়ে শ্বশুর বাড়িতেই রয়েছেন বাবুল। মোশাররফ বুধবার সন্ধ্যায় বলেন, সে (বাবুল) দুপুরে ফিরে দোতালায় অবস্থান করছেন। তার সাথে তেমন কোনো কথা হয়নি। তিনি বলেন, বাবুলকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেয়ার বিষয়টি ওপরের সিদ্ধান্ত। তবে এর বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনগত প্রক্রিয়ায় যাওয়ার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

স্ত্রী হত্যাকাণ্ডের প্রায় দেড় মাস পর ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে বাবুলকে জিজ্ঞাসাবাদে নানা ধরনের গুঞ্জন ছড়ালেও এ বিষয়ে পুলিশ কিংবা দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের স্পষ্ট কোনো বক্তব্য ছিল না।
তার প্রায় এক মাস পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল জানান, এসপি বাবুল চাকরি থেকে অব্যাহতি চেয়ে আবেদন করেছেন; যদিও গুঞ্জন রয়েছে যে ওই পদত্যাগপত্র দিতে তাকে বাধ্য করা হয়েছে।

তার ২২ দিন পর মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়, বাবুলের আবেদনে তাকে চাকরি থেকে অব্যাহিত দেয়া হয়েছে। তারপর বিকালে বনশ্রীর ওই বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান বাবুল। তার মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় শ্বশুর বাড়ির কেউ কিংবা মাগুরায় থাকা তার বাবা আব্দুল ওয়াদুদও যোগাযোগ করতে পারছিলেন না।

মোশাররফ বলেন, ‘রাতে সে এক তার আত্মীয়ের বাসায় ছিল, তবে কোন আত্মীয়ের বাসায় ছিল, তা জানি না।’ বাবুলের শ্বশুর মোশাররফ এবং বাবা ওয়াদুদ দুজনই অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ পরিদর্শক।

বাবুলের পদত্যাগপত্র গৃহীত হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ওয়াদুদ বলেন, ‘আল্লাহ পাক ফয়সালা করার মালিক। ..দোষী না, তারপরও দোষী করার চেষ্টা হচ্ছে। এখন এটা মেনে নিতে হবে, কোনো উপায় নেই।’

বাবুল চাকরি ফিরে পাওয়ার চেষ্টা করেছেন বলেও জানান তার বাবা। এজন্য পরবর্তী কোনো ধাপ থাকলে সেখানেও চেষ্টা করবেন বলে তিনি জানান।

পদোন্নতি পেয়ে এসপি হয়ে বাবুল চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় পুলিশ সদর দপ্তরে বদলি হয়ে আসার কয়েকদিনের মধ্যে গত ৫ জুন সকালে বন্দরনগরীর ওআর নিজাম রোডে সন্তানের সামনে গুলি চালিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয় মিতুকে।

এই হত্যামামলার বাদী বাবুল। মামলার তদন্তে এখনও তার সম্পৃক্ততার কোনো স্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়নি বলে জানালেও পুলিশ প্রধান এ কে এম শহীদুল হক বলেন, তাদের তদন্ত অব্যাহত রয়েছে।

বাবুলকে গ্রেফতারের গুঞ্জন ছড়ালেও মিতু হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার মো. কামরুজ্জামান তা উড়িয়ে দেন।
তিনি বুধবার বলেন, যেহেতু আমি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা, সে গ্রেফতার হলে আমার জানার কথা।

মিতু হত্যার বিচার চাইলেন মা :  সদ্য সাবেক এসপি বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যার বিচার চেয়েছেন মা শাহিদা মোশাররফ। বুধবার রাজধানীর বনশ্রীর নিজ বাসায় তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘বিচার কই, বিচার তো দেখি না। আমি দায়ী হলে আমার বিচার হোক, বাবুল দায়ী হলে ওরও বিচার হোক। কিন্তু বাবুল দায়ী হবে কেন?’ তবে ওই সময় বাবুল আক্তার বা তাঁর শ্বশুর মোশাররফ হোসেন কেউই বাসায় ছিলেন না। তাঁরা কোথায় আছেন, এ ব্যাপারে শাহিদা মোশাররফ কিছু বলতে পারেননি।

বাবুল আক্তারকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দিয়ে গত মঙ্গলবার রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে এক নিদের্শনা জারি করেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মোহাম্মাদ ইলিয়ান হোসেন। প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়, ‘২৪তম বিসিএস (পুলিশ) ক্যাডারে যোগদানকৃত মো. বাবুল আক্তার (বিপি ৭৫০৫১০৯০২৯) অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার, সিএমপি, চট্টগ্রাম (বর্তমানে পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত এবং পুলিশ সদরে দফতরে সংযুক্ত)-কে তার আবেদনের প্রেক্ষিতে চাকরি (পুলিশ ক্যাডার) হতে এতদ্বারা অব্যাহতি প্রদান করা হলো।’ জনস্বার্থে অবিলম্বে এ আদেশ কার্যকর হবে বলে প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়।

গত ৩ ও ৪ আগস্ট পুলিশ সদর দফতরে গিয়ে বাবুল চাকরি ছাড়া না ছাড়ার বিষয়ে একটি লিখিত ব্যাখ্যা দেন। এরপরও তাকে চাকরিতে যোগদান করতে না দেয়ায় পরবর্তীতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চাকরিতে যোগ দেয়ার জন্য লিখিত আবেদন করেন। পাশাপাশি আগের দেয়া পদত্যাগপত্র জোর করে নেয়া হয়েছে, তাও লিখিত দেন বাবুল।

দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের অপরাগতায় লিখিত আবেদন করেও ৩ আগস্ট পুলিশ সদর দফতরে কাজে যোগ দিতে না পেরে ৪ আগস্ট সদর দফতরে ডিআইজি (প্রশাসন) বরাবর লিখিতভাবে যোগদানপত্র জমা দেন। যোগদানপত্রে তিনি বলেন, স্ত্রী খুন হওয়ার পর দুই সন্তানের দেখাশোনার জন্য কর্মকর্তাদের পরামর্শ মতো তিনি শ্বশুরবাড়িতে অবস্থান করছিলেন। সেখান থেকে দুই সন্তানকে নিয়মিত চিকিৎসকের কাছেও নেয়া হচ্ছে। অনুপস্থিতির সময়টা ছুটি হিসেবে নিয়ে তাকে কাজে যোগ দেয়ার সুযোগ করে দিতে অনুরোধ করেন বাবুল।

পুলিশ সদর দফতরে যোগদান করতে না পেরে সই করা পদত্যাগপত্র প্রত্যাহারের জন্য ৯ আগস্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিবের কাছে আবেদন করেন বাবুল। আবেদনে তিনি বলেন, বিগত ২৪ জুন পরিস্থিতির শিকার হয়ে অনিচ্ছাকৃতভাবে বাধ্য হয়ে আমাকে চাকরির অব্যাহতিপত্রে স্বাক্ষর করতে হয়। স্ত্রীর মৃত্যুশোক, সদ্য মা-হারা দুটি শিশুর ব্যাকুলতায় প্রতিকূল ও বিপর্যস্ত মানসিক অবস্থায় অনিচ্ছাকৃতভাবে আমি চাকরি থেকে অব্যাহতির আবেদনপত্রে স্বাক্ষর করি। ওই অব্যাহতিপত্রটি প্রত্যাহারের আবেদন জানাচ্ছি, যা আমি স্বেচ্ছায় দাখিল করিনি।

গত ৫ জুন সকালে চট্টগ্রাম নগরীর জিইসি মোড় এলাকায় বাবুলের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতুকে গুলি করে হত্যা করা হয়। স্ত্রী খুন হওয়ার দিন বাবুল আক্তার ঢাকার পুলিশ সদর দফতরেই কর্মরত ছিলেন। এ ঘটনায় বাবুল আক্তার বাদী হয়ে অজ্ঞাতপরিচয় তিনজনের বিরুদ্ধে পাঁচলাইশ থানায় মামলা করেন।

এরপর বাবুল দুই সন্তানকে নিয়ে ঢাকায় শ্বশুরবাড়িতে চলে আসেন। স্ত্রী হত্যাকাণ্ডের ১৫ দিনের মাথায় গত ২৪ জুন মধ্যরাতে শ্বশুরবাড়ি থেকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বাবুলকে মিন্টো রোডের গোয়েন্দা কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর ২৫ জুন ১৬ ঘণ্টা কথা বলার পর তাকে বনশ্রীতে শ্বশুরের বাসায় পৌঁছে দেয় ডিবি পুলিশ।

গত ৩১ আগস্ট বাবুল আক্তারকে চাপ প্রয়োগে চাকরির পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর নেয়া প্রসঙ্গে আইজিপি সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেছিলেন, জোর করে নেয়া হয়নি, স্বেচ্ছায় বাবুল আক্তার পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। আমরা তা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। পদত্যাগপত্র জমা দেয়ার পর আমরা দেড় মাস অপেক্ষা করেছিলাম। তিনি এটা প্রত্যাহার করেন কিনা। তবে তিনি কোনও ব্যবস্থা নেননি।

এর আগে গত ২১ জুলাই চট্টগ্রামে আইজিপি বলেছিলেন, বাবুল আক্তার মানসিকভাবে বিষন্নতায় ভুগছেন। চাকরি করার মতো মানসিক অবস্থা তার নেই। বাবুল আক্তারের চাকরির অব্যাহতিপত্রে জোর করে স্বাক্ষর নেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালও। তিনি একাধিকবার বলেছেন, স্বাভাবিক নিয়মেই বাবুল আক্তার চাকরি থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/জেডআরসি

Wordbridge School
Link copied!