• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বায়ু দিয়ে চলবে ট্রেনের বৈদ্যুতিক কাজ


মোঃ রিয়াজুল ইসলাম, দিনাজপুর জানুয়ারি ২৮, ২০১৭, ১১:২৪ এএম
বায়ু দিয়ে চলবে ট্রেনের বৈদ্যুতিক কাজ

রেলওয়ের বিভাগকে আরও সাশ্রয়ী ও খরচ কমাতে এবং পরিবেশ বান্ধবে বিশেষ ব্যবস্থায় প্রাকৃতিক বায়ু থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে ট্রেনের বৈদ্যুতিক সকল কাজে ব্যবহার করার প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছেন দিনাজপুর পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটের তিন শিক্ষার্থী।

বর্তমান ট্রেনের পাওয়ার কারের এক বছরের ব্যবহৃত জ্বালানি খরচ দিয়েই এ প্রযুক্তি ট্রেনের উপরিভাগে স্থাপন করে প্রাকৃতিক বায়ু থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব।

এ প্রযুক্তিতে বাংলাদেশের ট্রেনগুলোতে পাওয়ার কারসহ জ্বালানি খরচ ছাড়াই ইঞ্জিনের উপরিভাগে বিশেষ ব্যবস্থায় টারবাইনের মাধ্যমে প্রাকৃতিক বায়ু থেকে তৈরী বিদ্যুৎ দিয়ে ট্রেনের বাতি-ফ্যানস, ফ্রিজসহ বিদ্যুতের সকল কাজ চলবে। বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে প্রতি ঘণ্টায় ৪০-৫০ কিলোওয়াট। আর এর প্রাথমিক খরচ পড়বে মাত্র ১৬ থেকে ২০ লাখ টাকা। এর পরে আর খরচ নেই বলে উদ্ভাবনকারীরা জানান। তবে এ প্রযুক্তিতে চায়না টারবাইন ব্যবহার করা গেলে ঘণ্টায় ১৭০ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব।

অথচ বর্তমানে প্রতি ট্রেনে পাওয়ার কারের সাহায্যে বিদ্যুৎ তৈরীতে বছরে প্রায় ১৬ লাখ টাকা জ্বালানি খরচ হয়। মেইনটেনেন্স খরচ প্রতিনিয়ত হয়। এরপরেও বিদ্যুৎ তৈরী হয় মাত্র লোকাল ট্রেনে প্রতি ঘন্টায় প্রায় ৩৭-৪০ কিলোওয়াট এবং আন্তঃনগর ট্রেনে প্রতি ঘণ্টায় ৫৩-৫৫ কিলোওয়াট।

আর এ প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছেন দিনাজপুর পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট’র ইলেকট্রিক্যাল-এর ৫ম পর্বের শিক্ষার্থী দিনাজপুরের বীরগঞ্জের নাজমুল হোসাইন নাসিম, বিরামপুরের মোঃ ফাহিম ফয়সাল ও পার্বতীপুরের কামরুল হাসান। বীরগঞ্জের সামসুল হকের ছেলে নাজমুল হোসাইন নাসিম এ দলের নেতা।

একই সাথে পড়ুয়া তিন শিক্ষার্থী বন্ধু এ প্রজেক্ট-এ গত অক্টোবরে দিনাজপুর জেলায় ও ডিসেম্বরে রংপুর বিভাগে স্কিলস কমপিটিশন-২০১৬ইং আঞ্চলিক পর্ব প্রতিযোগিতায় প্রথম পুরস্কার পেয়েছেন।

দলনেতা নাজমুল হোসাইন নাসিম জানান, দিনাজপুর পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটের ইলেকট্রিক্যাল বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ রুহুল আমীন স্যারের সহযোগিতায় আমরা এ প্রযুক্তিটি উদ্ভাবন করি। প্রাকৃতিক বায়ুকে ব্যবহার করে তৈরী বিদ্যুৎ ট্রেনে ব্যবহার করার এই প্রযুক্তির জন্য সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানাতে প্র্যাকটিক্যাল গবেষণাও চালানো হয়।

নাজমুল হোসাইন নাসিম জানান, আমাদের এ প্রযুক্তিতে বিশেষ ডিজাইনের টারবাইনের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, ওজন অনেক কম হওয়ায় ইঞ্জিনের বাড়তি খরচ হয় না। জ্বালানি প্রয়োজন হয় না। উৎপাদন ক্ষমতা প্রায় ৪০ কিলোওয়াট। কার্বন নিঃসরণ হয় না। শব্দ ও কম্পন কম সৃষ্টি হয়। যেহেতু এটি ইঞ্জিনের উপর বসানো হয় তাই বাড়তি জায়গার প্রয়োজন হয় না। দক্ষতা অনেক বেশি। এটি পরিবেশবান্ধব। এই প্রযুক্তি যদি আমরা ব্যবহার করি তবে বছরে প্রায় ১৬ লাখ টাকা জ্বালানি খরচ বাঁচবে।

অথচ সাধারণ ট্রেনে ব্যবহৃত পাওয়ার কারে দেখা যায়, এটি চালু রাখতে প্রতি ঘণ্টায় ৭ লিটার ডিজেল প্রয়োজন হয়। উৎপাদন ক্ষমতা প্রায় ৩৮ কিলোওয়াট। কার্বন নিঃসরণ হয়। ৭৮ ডেসিমল মাত্রায় শব্দ উৎপন্ন হয়। এর দৈর্ঘ্য ৭২.৫ ফুট, যা একটি যাত্রবাহী কোচের সমান। এর অতিরিক্ত ওজনের কারণে ইঞ্জিনের অতিরিক্ত জ্বালানি খরচ হয়। এটি পরিবেশবান্ধব নয়। এর দক্ষতা তুলনামূলকভাবে কম। বাৎসরিক জ্বালানি খরচ হয় প্রায় ১৬ লাখ টাকা।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমএইউ

Wordbridge School
Link copied!