• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বায়ুদূষণে ভয়াবহ ঝুঁকিতে বাংলাদেশ


নিজস্ব প্রতিবেদক ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০১৭, ১২:১৫ পিএম
বায়ুদূষণে ভয়াবহ ঝুঁকিতে বাংলাদেশ

ঢাকা: বাংলাদেশে কয়লা পোড়ানো হয় এমন শিল্পকারখানার সংখ্যা বেড়েই চলেছে। একই সঙ্গে ঢাকাসহ সারা দেশে যে নির্মাণকাজ হচ্ছে, তাতে প্রচুর ধুলা ও ধোঁয়ার সৃষ্টি হচ্ছে। শুষ্ক মৌসুমে বাতাসে ওই ক্ষুদ্র কণাগুলো এমনিতেই বেশি পরিমাণে পরিবাহিত হয়। আর এই সময়ে বেশি নির্মাণকাজ চলায় এবং সব কটি ইটভাটা চালু থাকায় দূষণের পরিমাণ বেড়ে যায়।

পরিবেশ অধিদপ্তরের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, শুষ্ক মৌসুমে যে নির্মাণকাজগুলো হচ্ছে, তাতে সকাল ও বিকেল দুই বেলা নির্মাণসামগ্রী, বিশেষ করে বালু ও ইট পানি দিয়ে ভিজিয়ে রাখার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু রাজধানীর বেশির ভাগ সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান তাদের নির্মাণসামগ্রী যত্রতত্র ফেলে রেখে ধুলা সৃষ্টি করছে।

দশ বছর ধরে ঢাকা ও বাংলাদেশের বায়ুদূষণ পর্যবেক্ষণ করে আসছেন অধ্যাপক আবদুস সালাম। তার হিসেব মতে, মূলত যান্ত্রিক উৎস থেকে সৃষ্টি হওয়া ধোঁয়া ও ধুলা বাতাসে ক্ষুদ্র কণা ছড়িয়ে দেয়। মূলত কয়লা ও জৈব জ্বালানি পোড়ানোর ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিকর কণার সৃষ্টি হয়। ইটভাটা, শিল্পকারখানার ধোঁয়া, যানবাহনের ধোঁয়া এবং সড়ক ও ভবন নির্মাণসামগ্রী থেকে তৈরি ধুলায় এগুলো সৃষ্টি হয়।

গবেষণা প্রতিবেদন অনুসারে, বিশ্বে যেসব কারণে সবচেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যু হয়, তার মধ্যে বায়ুদূষণ রয়েছে পঞ্চম স্থানে। ২০১৫ সালে প্রায় ৪২ লাখ মানুষের অকালমৃত্যুর কারণ এই বায়ুদূষণ। আর এসব অকালমৃত্যুর অর্ধেকের বেশি ঘটেছে চীন ও ভারতে। এসব দেশে প্রতি ১০ জনে মাত্র ১ জন নির্মল বায়ুর এলাকায় বসবাসের সুযোগ পান।

প্রতিবেদন অনুসারে বায়ুদূষণের কারণে ২০১৫ সালে চীনে বছরে ১১ লাখ ৮ হাজার ১০০ জনের মৃত্যু হয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোয় এই সংখ্যা ২ লাখ ৫৭ হাজার ৫০০, পাকিস্তানে ১ লাখ ৩৫ হাজার ১০০ ও যুক্তরাষ্ট্রে ৮৮ হাজার ৪০০।

গত বছরে প্রকাশিত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্য এবং নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশের বাসিন্দারা বায়ুদূষণের প্রধান শিকার। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুসারে, পিএম ২.৫-এর নিরাপদ কিংবা সহনীয় মাত্রা এখন পর্যন্ত নির্ধারণ করা যায়নি। এটি শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে সহজেই শরীরে প্রবেশ করে শ্বাসতন্ত্রের নানা রোগ ও হৃদরোগের পরিমাণ বাড়ায়। পিএম ২.৫-এর কারণে অ্যাজমা ও ফুসফুসের ক্যানসার হতে পারে।

১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্বজুড়ে প্রকাশিত ‘বৈশ্বিক বায়ু পরিস্থিতি-২০১৭’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত বায়ুর শহরগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে রাজধানী ঢাকা। শীর্ষে রয়েছে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লি। ১৯৯০ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে বিশ্বে বায়ু দূষণ সবচেয়ে বেশি বেড়েছে ভারত ও বাংলাদেশে। তবে ঝুঁকি বিবেচনায় সবচেয়ে শীর্ষে রয়ে গেছে বাংলাদেশ।  

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা সংস্থা হেলথ ইফেক্টস ইন্সটিটিউট এবং ইন্সটিটিউট ফর হেলথ মেট্রিকস অ্যান্ড ইভালুয়েশনের যৌথ উদ্যোগে প্রকাশিত ওই প্রতিবেদন বলা হয়েছে, বায়ুতে যেসব ক্ষতিকর উপাদান আছে, তার মধ্যে মানবদেহের জন্য সবচেয়ে মারাত্মক উপাদান হচ্ছে পিএম ২.৫।

এতদিন এ উপাদান সবচেয়ে বেশি নির্গত করত চীন। গত দুই বছরে চীনকে টপকে ওই দূষণকারী স্থানটি দখল করে নিয়েছে ভারত। চীন ও ভারতের পরেই রয়েছে বাংলাদেশের অবস্থান। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছে জাপানের টোকিও শহর।

তবে বায়ুদূষণে সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর ঝুঁকিতে রয়েছে বাংলাদেশ। বায়ুদূষণের কারণে বাংলাদেশে বছরে ১ লাখ ২২ হাজার ৪০০ মানুষের মৃত্যু হচ্ছে বলে বলা হয়েছে। আর বায়ুদূষণের কারণে শিশুমৃত্যুর হারের দিক থেকে পাকিস্তানের পরেই বাংলাদেশের অবস্থান।

তবে বাংলাদেশে বায়ুদূষণের কারণে এত বিপুলসংখ্যক মানুষের মৃত্যুর বিষয়টি মানতে নারাজ পরিবেশ অধিদপ্তরের নির্মল বায়ু ও টেকসই পরিবেশ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মনজুরুল হান্নান খান। তিনি বলেন, ‘সাধারণত শুষ্ক মৌসুমে ইটভাটাগুলো চালু থাকায় এবং ব্যাপকভাবে উন্নয়নকাজ হওয়ায় বাংলাদেশের শহর এলাকায়, বিশেষ করে ঢাকা ও চট্টগ্রামে দূষণের মাত্রা বেশি থাকে। বর্ষা শুরু হলে আমাদের বায়ুদূষণের মাত্রা অনেক কমে যায়। যা ভারত ও চীনের চেয়ে অনেক কম থাকে।’

সোনালীনিউজডটকম

Wordbridge School
Link copied!