• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বিএনপি এখন ভারতপন্থী!


নিয়ন মতিয়ুল জুন ১৩, ২০১৮, ০৮:২২ পিএম
বিএনপি এখন ভারতপন্থী!

কোনো রাজনৈতিক দল যখন তার নীতি-আদর্শের বদল ঘটায় তখন ভাবতে হবে দলটির অভিযোজন ক্ষমতা বাড়ানো হচ্ছে। সেই সঙ্গে ভোটের রাজনীতির প্রয়োজনে নতুন প্রজন্মের জন্য প্লাটফর্ম নির্মাণ করা হচ্ছে। একাত্তরের ভূমিকার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে যেমন কেউ কেউ মূল ধারায় ফিরছে- আবার কোনো রাজনৈতিক দল তার প্রতীক আর স্লোগানই বদলে দিয়েছে সময়ের দাবিতে। প্রবল বাম'রা চলে গেছে ডানে। আবার প্রবল ডানেরা চলে গেছে প্রবলপন্থায়। এমন পালাবদল ঘটছেই। যারা আজও পংকিল রাজনীতির দূষিত বায়ু সেবন থেকে নিজেদের দূরে রাখার চেষ্টা করেছেন, তারা রাজনীতির এই প্রবল পরিবর্তনকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন। আর যারা দূষণের শিকার হয়ে হাসপাতালে কাতরাচ্ছেন, তারা হয়তো মেনে নিতে পারবেন না। তবে এটা তো সত্য, হয় পরিবর্তনের ধারায় আসুন, না হয় পরিত্যক্ত হয়ে যান। একটা পথকেই বেছে নিতে হবে।

রাজনীতির আকাশে উদারপন্থি কিংবা মধ্যপন্থীদের মধ্যে একটা বিশেষ গোষ্ঠী অন্যতম প্রধান দুই রাজনীতির ধারা থেকে দূরে সরে গিয়ে জনগণকে স্বপ্ন দেখাতে শুরু করেছেন অনেক আগে থেকে। আমরা আশাবাদী যেকোনো শুভ খবরে। এর আগে একাত্তরে ঘাতক-দালালদের সহায়তাকারী দল তার স্লোগান আর প্রতীক বদল করে অতীতকে ধুয়ে মুছে ফেলার চেষ্টায় নিমগ্ন। ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক কিছু দল তাদের চেহারা পাল্টানোর চেষ্টা করছে। বিতর্কিত আর পশ্চাৎপদ দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বেরুনোর চেষ্টা করছে প্রবলভাবে। রাজনৈতিক দলের নীতি-আদর্শের এ বদলকে অভিযোজন প্রক্রিয়া বললে কোনো দোষ নেই।

এর মধ্যেই দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপির ভারত সফর নিয়ে তুমুল আলোচনা চলছে চারদিকে। আলোচনার মূল ফোকাসটা হচ্ছে- বিএনপির শাসনামলে ভারতের সঙ্গে তাদের দ্বিপাক্ষিক আচরণটা বড্ড ভুল ছিল বলে স্বেচ্ছায় সেদেশে গিয়ে বলে এসেছেন কয়েকজন নেতা। বাংলাদেশে ‘প্রকৃত গণতান্ত্রিক আবহ প্রতিষ্ঠায়’ সাহায্য করার আরজিও নাকি জানিয়ে এসেছেন। আর এসব আরজি জানাতে দিল্লিতে গিয়েছিলেন দলের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক হুমায়ুন কবীরসহ স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু।

এর মধ্যে দলের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক হুমায়ুন কবীর দলের বর্তমান নিয়ন্ত্রক এবং মূল চালিকাশক্তি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের অতি ঘনিষ্টজন একই সঙ্গে তার উপদেষ্টাও। হুমায়ুন কবির দিল্লিতে বসে ভারতের প্রভাবশালী ইংরেজি দৈনিক দ্য হিন্দুকে বলেছেন, ‘পেছনে না তাকিয়ে আমাদের সামনের দিকে তাকানো উচিত। গত শতকের ৮০ ও ৯০-এর দশকের রাজনীতি এখন বাতিল হয়ে গেছে।’ ৮০ ও ৯০-এর দশকের রাজনীতিটা আসলে কী, তা আরও স্পষ্ট করেছেন, বিএনপি ক্ষমতায় থাকার সময় ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে যে খারাপ সম্পর্ক ছিল, তা ‘ভুল ও বোকামিপূর্ণ’ নীতির ফসল।’ পত্রিকাটিকে হুমায়ুন কবীর এ-ও বলেছেন, ‘তারেক রহমান চান, আমরা ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে চলি।’ (সূত্র: প্রথম আলো।)

তারেক রহমানই যখন দলের নিয়ন্ত্রক এবং চালিকাশক্তি, স্বাভাবিকভাবেই তার ঘনিষ্ঠজনরা হবেন দলের নীতি-নির্ধারণের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তাই দিল্লিতে বসে তারেক রহমানের উপদেষ্টা ‘দ্য হিন্দুকে’ যে কথা বললেন তা দলেরই নীতিকথা- এর মধ্যে কোনো দ্বিধা থাকতে পারে না।

বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর নীতি-আদর্শ, গতিবিধি, ভূমিকা নিয়ে যারা কৌতুহলী তাদের কাছে এমন খবর খুবই উপাদেয়। তবে নীতি আদর্শের বদল সব সময়ই যে নেতিবাচক তা কিন্তু নয়, ইতিবাচক ভাবেও বদলে যেতে পারে দলের দৃষ্টিভঙ্গি। তবে এমন বদলের প্রতিক্রিয়ার সুদূর প্রসারি ফলাফল দেখার জন্য প্রয়োজন হয় সময়ের। সে অবধি আমাদের মুখপাত্র না হয়ে পর্যবেক্ষকের ভূমিকাতেই থাকতে হতে পারে।

আমার ক্ষুদ্র অভিজ্ঞতা এটাই বলে যে, জনগণ থেকে দূরে সরে গিয়ে কিংবা জনগণের ওপর নিপীড়ন চালিয়ে কোনো রাজনৈতিক দলই তাদের নীতি-আদর্শ বেশিদিন ধরে রাখতে পারে না। গেল সাড়ে চারদশকে সেটাই প্রমাণ হয়েছে বার বার। এখান থেকে শিক্ষা নিতে হবে প্রতিটি রাজনৈতিক দলকে।

বদলে যাচ্ছে আমাদের পৃথিবী, বদলে যাচ্ছে আমাদের সমাজ, পরিবার। এমন কি মানুষের নৈতিকতার ক্ষেত্রেও আসছে পরিবর্তন। একই সঙ্গে সামন্ততান্ত্রিক, উপনিবেশিকতার দৃষ্টিভঙ্গিও বিলুপ্ত হচ্ছে। সমাজে বাড়ছে শিক্ষার হার, মাথাপিছু আয়। ক্ষমতায়নের স্বাদ পাচ্ছে প্রতিটি মানুষ। তবে এই বদলটায় থাকছে না কারো একক কৃতিত্ব। স্বাভাবিক এবং প্রাকৃতিকভাবেই বদলে যাচ্ছে সবকিছু। আর রাজনৈতিক পরিবর্তন আনতে হলে আগে পরিবর্তন ঘটাতে হবে আদর্শের, এরপর নীতিবোধের। ক্ষমতাকে ব্যবহার করে জননিপীড়ন বন্ধ করলেই রাজনৈতিক দলগুলো হয়ে উঠবে স্থায়ীভাবে জনপ্রিয়। নির্বাচনী কোনো নীলনকশা ছাড়াই ক্ষমতায় যাওয়ার পথটা হয়ে উঠবে সুন্দর মসৃণ। এটা আমাদের মহান স্বাধীনতাযুদ্ধে নেতৃত্বদানীকারী ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগই হোক কিংবা কয়েক দফায় সরকারে থাকা বিএনপিই হোক-- মানুষের স্বাভাবিক অগ্রযাত্রায় পাশে থাকুন, সহায়তা করুন, ভালোবাসুন-- তবেই আর নীতির বদল ঘটাতে হবে না।

লেখক : নিয়ন মতিয়ুল, সিনিয়র রিপোর্টার দৈনিক ভোরের কাগজ ও সাবেক সম্পাদক সোনালীনিউজ ডটকম।

সোনালীনিউজ/জেএ

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব ভাবনার প্রতিফলন। সোনালীনিউজ-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে লেখকের এই মতামতের অমিল থাকাটা স্বাভাবিক। তাই এখানে প্রকাশিত লেখার জন্য সোনালীনিউজ কর্তৃপক্ষ লেখকের কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনও ধরনের কোনও দায় নেবে না। এর দায় সম্পূর্ণই লেখকের।

Wordbridge School
Link copied!